কানাডার সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই নেতা শিগগিরই বৈঠক করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

আশা করা হচ্ছে, নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে দুই দেশ নতুন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু করবে।

কানাডার সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডার ওপর ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক আরোপ এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব নিয়ে তাঁর একের পর এক মন্তব্যের বিষয়টিই মূলত এবারের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। শেষ পর্যন্ত কার্নির লিবারেল পার্টি সে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। তবে তারা এককভাবে সরকার গঠন করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

নির্বাচনের এ ফল কার্নির জন্য দুটো চ্যালেঞ্জ হাজির করেছে। তাঁকে যেমন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দর–কষাকষি করতে হবে, আবার সেই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা মোকাবিলাও করতে হবে। কার্নির দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। আর তাই সরকার গঠন করার জন্য কার্নিকে এখন অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থন আদায় করতে হবে।

নির্বাচনের পর প্রথম ফোনালাপে ট্রাম্প কার্নিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আরও বলেছে, ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব’ সম্পর্কে দুই নেতা একমত হয়েছেন।

লিবারেলদের হাউস অব কমন্সে আইন পাস করাতে অন্যদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হবে। যেকোনো আস্থা ভোটে পরাজয়ের আশঙ্কাও আছে তাদের।

লিবারেলরা দুর্বল বামপন্থী দল নিউ ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেতে পারে। অতীতেও দলটি তাদের সমর্থন দিয়েছে। এ ছাড়া ব্লক কেবেকোয়া দলের কাছ থেকেও সমর্থন পেতে পারে তারা।

কানাডার পার্লামেন্টে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য একটি দলকে ১৭২টি আসনে জয়ী হতে হয়। লিবারেলরা ১৬৯টি আসনে এগিয়ে আছে।

এরপরও এ ফলকে দলটির জন্য ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, কয়েক মাস আগেও এ দল ধ্বংসের পথে বলে মনে হচ্ছিল।

কানাডা ও যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা কার্নি। গত মাসে দলের নেতা জাস্টিন ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করার পর তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। তিনিই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। একটি বিষয়ে লিবারেলদের জন্য পার্লামেন্টে সমর্থন পাওয়া সহজ হতে পারে। তা হলো মার্কিন শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শ্রমিক ও শিল্প খাতকে সহায়তা দিতে আইন পাস করা। নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ বিষয় নিয়ে সব দলই একমত ছিল।

সোমবারের নির্বাচনে চার বছর আগের তুলনায় লিবারেল ও কনজারভেটিভ দুই দলেরই ভোট বেড়েছে।

নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। দলটি ১৪৪টি আসনে এগিয়ে আছে। তারা পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

কানাডার দুই বড় দলের প্রতি জনসমর্থন বাড়ার কারণে ছোট দলগুলো, বিশেষ করে এনডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ভোট প্রায় ১২ শতাংশ কমে গেছে।

এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৭ শতাংশ।

কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পলিয়েভ্রে এবং এনডিপি নেতা জগমিত সিং—দুজনই তাঁদের আসন হারিয়েছেন। সিং বলেছেন, তিনি বামপন্থী দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি চালুসহ ১১টি বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে এবি পার্টি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে দল দুটি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি পার্টির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। আজ বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার পরিবেশ তৈরি হবে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ধর্মবিরোধী, ইসলামবিরোধী ও দেশবিরোধী। কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাতিল করতে হবে। এ বিষয়ে এবি পার্টিও একমত।

বৈঠক সম্পর্কে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, তাঁরা এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। বাংলাদেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বানানো পর্যন্ত এই ঐক্য টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

দুই দলের বৈঠকে আরও যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন–সার্বভৌম টেকসই কল্যাণকর বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা; দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; ভোটাধিকারসহ সব নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা; আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা এবং প্রশাসনে এখনো বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা; আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা; দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে সংবিধানে বিদ্যমান শরিয়াহবিরোধী আইন বাতিল এবং ইসলামসহ সব ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য পরিহার করা, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো কথা বা বক্তব্য না দেওয়া।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতেয়াজ আলম, মাওলানা সৈয়দ এসহাক মু. আবুল খায়ের ও মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম।

অপর দিকে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম ও বি এস নাজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভূইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, এ বি এম খালিদ হাসান, শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান, সংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) গাজী নাসির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য
  • চলছে বৈঠকের রাজনীতি
  • বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার ও মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলন
  • জাতীয় স্বার্থে আমরা কি একমত হতে পারি না
  • গণভোটে সংস্কার চায় নুরের গণঅধিকার
  • সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণ অধিকার পরিষদের