মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার যশলং কবরস্থান থেকে এক রাতেই ১৪টি কঙ্কাল চুরি হয়েছে। সংঘবদ্ধ চোরের দল ওই কবরস্থানের বিভিন্ন পুরোনো কবর খুঁড়ে কঙ্কালগুলো চুরি করে নিয়ে যায়। 

গতকাল মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতের কোনো এক সময়ে কঙ্কালগুলো চুরি হয়। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পারেন। এলাকার শত শত মানুষ কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

ভিটি মালধা গ্রামের বাসিন্দা পনির মোল্লা বলেন, “গতকাল আমার মা মারা গেছে। সকালে মায়ের কবর খুঁড়তে এসে দেখা যায় পাশের কয়েকটি কবর খোঁড়া। পরে লোকজন খবর দিলে তারা এসে দেখে গোরস্থানে প্রায় ১৬টি কবর খোঁড়া রয়েছে। যারা এসব কাজ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। পরবর্তীতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।”

স্থানীয় সুমন মোল্লা বলেন, “কবর খুঁড়ে আমার বাবার লাশের মাথা ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। তবে লাশের বাকি অংশ কবরে রয়েছে।”

এলাকাবাসী বলেন, “আজ ভোরে কয়েকজন ব্যক্তি ওই কবরস্থানে জিয়ারত করতে যান। এসময় তারা কয়েকটি কবর খোঁড়া দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজনদের খবর দেন। লোকজন এসে ১৬টি কবর খুঁড়ে রাখা অবস্থায় দেখতে পান।”

গোরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্তার শেখ বলেন, “গোরস্থানে এসে দেখি বেশ কয়েকটি কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে তবে প্রায় ৭/৮টি কবরের কঙ্কাল পাওয়া যায়নি।

যশলং ইউনিয়ন পরিষদের ১নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু সালাম শেখ বলেন, “আমি খবর পেয়ে গোরস্থানে এসে দেখি ১৪টি কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করে নিয়ে গেছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে কঙ্কাল চুরির খবর পেয়ে এলাকার শত শত মানুষ কবরস্থানে গিয়ে ভিড় করেন। বেশ কয়েকজন স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যশলং এই কবরস্থান থেকে এভাবে কঙ্কাল চুরির ঘটনা এ এলাকায় আগে কখনো ঘটেনি। এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো একটি ব্যাপার। পরবর্তীতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

টঙ্গিবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মহিদুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

ঢাকা/রতন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কবরস থ ন গ রস থ ন কবর খ

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 

উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা। 

৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা! 

অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’ 

রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল। 

রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান। 

উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’ 

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। 

রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব। 

ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাশাপাশি খোঁড়া হচ্ছে মা-ছেলের কবর, সেই দৃশ্য কাঁদাচ্ছে এলাকার মানুষকে
  • দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 
  • সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি
  • দেশে ফিরেছে ব্যবসায়ী রাকিব ও পাইলট সাইফুজ্জামানের মরদেহ