পরিবেশবান্ধব গ্রিন রেলওয়ের জন্য ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার প্রকল্প
Published: 4th, May 2025 GMT
দেশে পরিবেশবান্ধব গ্রিন রেল পরিবহনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে সরকার ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০২৭ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
সম্প্রতি একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন করা হয়। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ২৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। বাকি ৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংকের আইডিএ থেকে প্রকল্প ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের অধীন কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই), সিজিপিওয়াই থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বে টার্মিনাল ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা পর্যন্ত এলাকা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া অর্থ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে স্টেশন ভবনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, বিদ্যমান কার্যকরী ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা স্থানান্তরের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, কমলাপুর স্টেশনে মাল্টিমডাল পরিবহন হাব তৈরির জন্য স্টেশন বিল্ডিং ইয়ার্ড পুনর্নির্মাণসহ প্রকল্পের জন্য ব্যয় করা হবে।
এ ছাড়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড ও বে টার্মিনাল পর্যন্ত রেল–সংযোগ স্থাপন এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত রেল–সংযোগ স্থাপন।
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির একটি সভা করে। সভায় পরিকল্পনা কমিশন কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করে।
এই কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মূল ঋণ থেকে প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক অগ্রিম (পিপিএ) হিসেবে ৬০ লাখ ডলার দিতে রাজি হয়েছে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে কমলাপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ‘মাল্টিমডাল ট্রান্সপোর্ট হাব’ নির্মাণের সুবিধার্থে বিদ্যমান পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধাগুলো স্থানান্তরসহ স্টেশন বিল্ডিং ইয়ার্ডগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।
ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রামের গুডস পোর্ট ইয়ার্ড ও বে টার্মিনাল পর্যন্ত রেল–সংযোগ উন্নয়নের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে।
মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে মালবাহী লোকোমোটিভ, ত্রাণ ট্রেন ও পরিবহনের ক্রয় এবং রেল–সংযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন মূল প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে।
গ্রিন রেল পরিবহনব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে চালু হলে কার্বন নির্গমন কম হবে, যা পরিবেশ দূষণ কমাতে সাহায্য করবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একই কর্মকর্তা বলেন, গ্রিন রেল পরিবহনের উদ্দেশ্য হচ্ছে রেলওয়ে অবকাঠামোর যথাযথ উন্নয়ন-আধুনিকীকরণের পাশাপাশি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে রেল ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পরিষেবার মান উন্নত করা।
পরিকল্পনা কমিশনের এই কর্মকর্তা বলেন, উন্নত রেল পরিবহনব্যবস্থা সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করবে। পরিবহন খরচ বহুগুণ কমাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সহায়তা করবে। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
এর আগে বিশ্বব্যাংক ইস্যুকৃত এক পত্রে বলা হয়, তারা মূল বিনিয়োগ প্রকল্পের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্পের অর্থায়নের পরিকল্পনা করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ল পর বহন প রকল প র কর মকর ত র জন য স ব যবস থ পর ব শ র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরা গরিব, তাই এইভাবে ছেলেডারে পঙ্গু কইরা দিল’
শাকিল ও হাসিবুল বারইকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বন্ধুরা বসে গল্প করার সময় একজন অন্যজনকে গালি দেয়। এ নিয়ে প্রথমে তর্কাতর্কি, পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। লোকজন গিয়ে বুঝিয়ে ঝামেলা মিটমাট করে দেন। কিন্তু হাসিবুল এতে সন্তুষ্ট হয়নি। কারণ, সে সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে
প্রভাবশালী। শাকিল দরিদ্র। প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে হাসিবুল।
ঘটনার দু’দিন পর শাকিলের বাড়িতে যায় হাসিবুল। এ সময় বাড়ির বাইরে বসে মোবাইল ফোনে গেম খেলছিল শাকিল। তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু শরীর ভালো না থাকায় রাজি হয়নি শাকিল। সঙ্গে সঙ্গে ধারালো রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। চিৎকার করে তার মাকে ডাকতে শুরু করে শাকিল। কিন্তু মা আসার আগেই কোপানো শেষ করে চলে যায় হাসিবুল। দায়ের কোপে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকে সে। এ ঘটনায় বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়েছে শাকিলের। পঙ্গু শাকিল এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে।
শেরপুরের নকলা উপজেলার বারইকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে গত ১৫ জুন বিকেলে। ওই গ্রামের ভ্যানচালক আমির মিয়ার ছেলে শাকিল (১৬)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। অভিযুক্ত হাসিবুল হাসান পাশের আদমপুর গ্রামের লালু বাদশার ছেলে।
প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে ভুক্তভোগী পরিবারের। দরিদ্র ভ্যানচালক বিচার চেয়ে ছেলের কাটা পা ব্যাগে ভর্তি করে নিয়ে গত বুধবার উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন দপ্তরে যান। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। অবশেষে পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম আশ্বস্থ করলে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কাটা পা বাড়ির পাশে পুঁতে রাখা হয়।
কথা হয় ভুক্তভোগীর ফুফু ময়না বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, গত ১৫ জুন বিকেলে তাঁর ভাতিজা শাকিল বাড়ির বাইরে বসে মোবাইল ফোনে গেম খেলছিল। এ সময় হাসিবুল এসে তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে চায়। শাকিল রাজি হয়নি। এ সময় রামদা দিয়ে তাকে কোপাতে থাকে। তিনটি কোপ বাম পায়ের হাঁটুর ওপরে এমনভাবে লাগে যে, সব রগ কেটে যায়। পা ঝুলে পড়ে। তিনি বলেন, ‘ভাতিজা আমার মাটিতে পইরা গেলে পাষণ্ড হাতে ও শরীরে আরও বেশ কয়েকটা কোপ দিয়া চইলা যায়। এই সময় শাকিল চিৎকার কইরা কইতে থাকে, আম্মা আইলা না, আমারে মাইরা ফেলাইলো। এই শুইনা সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বাইরে আইসা দেহি মাটিতে পইরা আছে। রক্তে ভাইসা গেছে।’ তাঁর ভাষ্য, দ্রুত শাকিলকে স্থানীয় হাসপাতাল নেওয়া হয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়। সেখানে গত মঙ্গলবার পা কেটে ফেলেন চিকিৎসক।
ভুক্তভোগীর বাবা আমির আলী বলেন, ‘আমি বিচার চাই। আমার ছেলের কোনো অপরাধ নাই। আমরা গরিব, তাই এইভাবে ছেলেডারে পঙ্গু কইরা দিল।’ তিনি বলেন, ‘পা নিয়া এসপি স্যারের কাছে গেছিলাম। তিনি আশ্বাস দিছেন বিচার করব।’
মামলার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে আসামি পক্ষের লোকজন। অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, দু’জনের মধ্যে কথাকাটি হয়। পরে কুপিয়ে জখম করলে পা কেটে ফেলতে
হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি ধরতে অভিযান চলছে।