পরাগের টানা ছয় ছক্কা, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে কলকাতার ১ রানের জয়
Published: 4th, May 2025 GMT
একবার মনে হচ্ছিল রাজস্থান রয়্যালস জিতবে, তো পর মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল জিতবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এই মনে হচ্ছিল নায়ক হবেন আন্দ্রে রাসেল, তো একটু পরেই মনে হচ্ছিল টানা ছয় ছক্কা মারা রিয়ান পরাগই হবেন নায়ক। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য শেষ পর্যন্ত হাসল কলকাতার দিকে তাকিয়েই। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার শেষ বলে গড়ানো যে ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ১ রানে জিতে প্লে-অফ খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল কলকাতা।
ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে ২২ রান দরকার ছিল রাজস্থানের। ইডেন গার্ডেনে শুভম দুবে প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন দলকে। বৈভব অরোরার করা ওভারের প্রথম দুই বলে জফরা আর্চার ডাবল ও সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দুবেকে। পরের তিন বলে ছক্কা-চার-ছক্কায় ১৬ রান তুলে শেষ বলে হিসাবটাকে ৩ রানে নামিয়ে আনেন দুবে। ওই বলে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান আর্চার। ফল, কলকাতার ১ রানের জয়। আর এই জয়ে ১১ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফে ওঠার লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে থাকল কলকাতা।
টসে জিতে ব্যাট করে কলকাতা করে ৪ উইকেটে ২০৬ রান। এই রানের ৮৫-ই এসেছে শেষ ৫ ওভারে, শেষ ৩ ওভারে ৫৭ রান। আন্দ্রে রাসেল ও রিংকু সিংয়ের তাণ্ডবে রাজস্থানের বোলাররা খেই হারিয়েছিলেন। প্রথম ৯ বলে ২ রান করা রাসেল পরের ১৬ বলে করেছেন ৫৫ রান। ৬১ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে অংকৃশ রঘুবংশীকে দর্শক বানিয়ে রাখা রাসেল ২৫ বলে ৫৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। এবারের আইপিএলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডারের এটিই প্রথম ফিফটি। ৪টি চার ও ৬টি ছক্কা মেরেছেন রাসেল। রাজবংশীর বিদায়ের পর উইকেটে আসা রিংকু ১ চার ও ২ ছক্কায় ৬ বলে করেছেন ১৯ রান।
রান দাঁড়ায় ইনিংসের চতুর্থ বলে বিস্ময়বালক বৈভব সূর্যবংশীকে হারানো রাজস্থান দ্বিতীয় ওভারে হারায় ক্রুনাল সিং রাঠোরকে। এরপর রিয়ান পরাগকে নিয়ে যশস্বী জয়সোয়ালের ৩১ বলে ৫৮ রানের জুটি। মঈন আলী জয়সোয়ালকে (২১ বলে ৩৪) ফেরানোর পর ৫ রানের মধ্যে বরুণ চক্রবর্তী ফিরিয়ে দেন ধ্রুব জুরেল ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে।
এরপর রাজস্থান অধিনায়ক পরাগ শিমরান হেটমায়ারকে নিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন দলকে। ১৩ ও ১৪তম ওভার মিলিয়ে টানা ছয়টি বৈধ বলে ছক্কা মেরে ইডেনের দর্শকদের স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন পরাগ। তবে ১৬তম ওভারে হেটমায়ারের বিদায়ের পর জয় ও সেঞ্চুরির ‘ডাবল’ চাপ নিতে পারেননি পরাগ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন রাজস্থান অধিনায়ক। ৪৫ বলে ৯৫ রান করার পথে ৬টি চার ও ৮টি ছক্কা মারা পরাগের বিদায়ের পর মনে হচ্ছিল এখন শুধু ব্যবধানই কমাতে খেলবে রাজস্থান। কিন্তু ইমপ্যাক্ট হিসেবে নামা শুভম দুবে ভাবলেন অন্যরকম, খেললেন ১৪ বলে ২৫ রানের ইনিংস। তবে শেষ পর্যন্ত এত কাছে তবু এত দূর অনুভূতি নিয়েই ফিরতে হলো তাঁকে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ তরুণের সাফল্য
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর দল নিওস্ক্রিনিক্স। দলটি প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্তের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, ক্যালটেকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। টিম নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে কথা বলে তাদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছেন আশিক মুস্তাফা
নিওস্ক্রিনিক্স। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর একটি দল। দলটি প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে জন হপকিন্স হেলথকেয়ার ডিজাইন কম্পিটিশনে ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দ্য জনস হপকিনস সেন্টার ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইনিং। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান। এবারের প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগে অংশ নেয় ৪৪ দেশের প্রায় ৪৪০টি প্রস্তাবনা। প্রতিযোগিতার ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, ক্যালটেকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওস্ক্রিনিক্স দল।
প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য জন হপকিন্স সেন্টার ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইনিং আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য, বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলগুলো থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে যেকোনো সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান পাওয়া। যেকোনো দেশের, যেকোনো শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে দলগুলো এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। প্রতিযোগিতাটি তিনটি বিভাগে হয়ে থাকে, যেগুলো হচ্ছে– ‘সলিউশনস ফর অ্যাডভান্সড হেলথ সিস্টেমস’, ‘গ্লোবাল হেলথ/হিউম্যানিট্যারিয়ান ডিজাইন’, ‘ডিজিটাল হেলথ’। এর মধ্যে ডিজিটাল হেলথ বিভাগে এই বছরের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েটের দল নিওস্ক্রিনিক্স।
টিম নিওস্ক্রিনিক্স ও তাদের উদ্ভাবন
নিওস্ক্রিনিক্স এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে, যার সাহায্যে কোনো নারী নিজেই তাঁর স্তন ক্যান্সারের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারবেন। যেখানে একজন নারী স্তনের স্ক্রিনিং করতে পারবেন এআই-এর সাহায্যে। এছাড়াও লক্ষণ দেখে একদম প্রাথমিক পর্যায়েই স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হবে। টিম নিওস্ক্রিনিক্স সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. হাসনাইন আদিল বলেন, ‘‘আমাদের দল ‘নিওস্ক্রিনিক্স’-এ পাঁচজন টিম মেম্বার রয়েছে। প্রজেক্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছে ফাহমিদা সুলতানা, মেশিন লার্নিং ডেভেলপার হিসেবে এইচ এম শাদমান তাবিব, ব্যাকএন্ড ডেভেলপার হিসেবে সাদাতুল ইসলাম সাদি, ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার হিসেবে হাসনাইন আদিল এবং হার্ডওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেছে পৃথু আনান। সবাই বুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্টের ২০ ব্যাচে অধ্যয়নরত। আমাদের প্রজেক্ট সুপারভাইজার আছেন অধ্যাপক মো. সোহেল রহমান স্যার। ডেটা কালেকশনে সাহায্য করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জারিন তাসনিম ঐশী এবং রংপুর মেডিকেলের রিবাতুল ইসলাম।’’
প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা
শুরুটা করেছিলেন ফাহমিদা সুলতানা। নিজের পরিবারের স্তন ক্যান্সরের রোগী থাকায় বছর দুয়েক আগে তিনি এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন হাসনাইন আদিল ও সাদাতুল ইসলাম। শুরুতে হাসনাইন অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস বা ফ্রন্টএন্ড এবং সাদি অ্যাপটির প্রোগ্রামিং বা ব্যাকএন্ডের কাজ করেছেন। এরপর দলে যুক্ত হন এইচ এম শাদমান ও পৃথু আনান। শাদমান এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছেন। পৃথু স্তনের স্ক্রিনিং বা ছবি তোলার যন্ত্র তৈরির দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় পুরো কর্মযজ্ঞ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফাহমিদা। শুধু এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র
করে যে তারা কাজ করেছেন, তা নয়। এর আগে দেশীয়
প্রতিযোগিতায়ও এ প্রযুক্তির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলেন তারা। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রস্তাবনা জমা দেন তারা। এরপর ১০ মার্চ
প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হয়। ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগের ছয়
ফাইনালিস্টের মধ্যে নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে বুয়েটের অন্য একটি দলও ছিল। ১২ এপ্রিল অনলাইনে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন জানানো হয় বিজয়ীর নাম।
পুরস্কার হিসেবে যা পাচ্ছেন
পুরস্কার হিসেবে টিম নিওস্ক্রিনিক্স পেয়েছে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ছয় লাখ টাকা। নিজেদের পড়াশোনা ও গবেষণায় এই অর্থ কাজে লাগাতে চান তারা। অর্জনের পেছনে দলের বাইরের কয়েকজনের অবদানও স্বীকার করেন তারা। তাদের পুরো কাজটি তত্ত্বাবধান করেছেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. সোহেল রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম ও রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিবাতুল ইসলাম তথ্য সংগ্রহে বিশেষ অবদান রেখেছেন। এই তিনজনের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
আগামীর স্বপ্ন
নিজেদের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে মো. হাসনাইন আদিল বলেন, ‘আগামীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীর স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতন করতে চাই আমরা। এরজন্য নিজেদের প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে চাই সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে।’
আমরাও বিশ্বাস করি, তরুণদের এই প্রযুক্তি নারীর জন্য হয়ে উঠবে আশীর্বাদস্বরূপ!