মিরাজের বাদ পড়া ও শান্তকে রাখা নিয়ে যা বললেন লিপু
Published: 4th, May 2025 GMT
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে বড়সড় রদবদল এনেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সদ্যসমাপ্ত জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর আসন্ন আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সিরিজের জন্য ঘোষিত ১৬ সদস্যের দলে নেতৃত্বে এসেছে পরিবর্তন। উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন দাসকে ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত দলের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়েছে, আর তার সহকারী হিসেবে থাকছেন অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী হাসান।
গত বছর অধিনায়কত্ব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে খেলতে পারেননি। তার জায়গায় লিটন নেতৃত্ব দিয়ে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করেছিলেন। এবার তাকে স্থায়ীভাবে নেতৃত্বের ভার দেওয়া হলো।
লিটনকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি সদ্য সাবেক অধিনায়ক শান্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অভিনন্দন লিটন ভাই। আশা করছি, আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’
তবে পারফরম্যান্স বিবেচনায় শান্তকে দলে রাখা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। শেষ ১৮ ইনিংসে একটি ফিফটিও নেই, স্ট্রাইক রেট ১১০-এর নিচে, বিশ্বকাপ ও ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যর্থতা স্পষ্ট। এমনকি বিপিএলেও নিয়মিত একাদশে জায়গা পাননি। তারপরও তাকে রাখা হয়েছে ঘোষিত দলে।
এই বিষয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ‘শান্ত আমাদের সাবেক অধিনায়ক। অভিজ্ঞতা তো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওপরে সৌম্য আছেন, যিনি প্রায় ৯০টি ম্যাচ খেলেছেন। লিটনও আছে। এরপর শান্তর মতো অভিজ্ঞ কেউ দরকার। ওর ম্যাচ সংখ্যা ৪০-এর কাছাকাছি। তাই কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দলে রাখতেই হয়।’
অন্যদিকে, সদ্য সমাপ্ত জিম্বাবুয়ে সিরিজে ব্যাটে বলে দারুণ পারফর্ম করলেও জায়গা হয়নি মেহেদী হাসান মিরাজের। এ নিয়ে লিপু বলেন, ‘মিরাজ আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের একজন, বিশেষ করে টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে তার অবস্থানও তা প্রমাণ করে। তবে আমরা বিশ্বকাপকে সামনে রেখে একটু পিছিয়ে রেখেছিলাম ওকে। টি-টোয়েন্টিতে যেখানে প্রত্যেক বোলারকে ৪ ওভার করতে হয়, সেখানে শেখ মেহেদী কিছুটা এগিয়ে আছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ তরুণের সাফল্য
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর দল নিওস্ক্রিনিক্স। দলটি প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্তের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, ক্যালটেকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। টিম নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে কথা বলে তাদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরেছেন আশিক মুস্তাফা
নিওস্ক্রিনিক্স। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর একটি দল। দলটি প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে জন হপকিন্স হেলথকেয়ার ডিজাইন কম্পিটিশনে ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দ্য জনস হপকিনস সেন্টার ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইনিং। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের একটি প্রতিষ্ঠান। এবারের প্রতিযোগিতায় তিনটি বিভাগে অংশ নেয় ৪৪ দেশের প্রায় ৪৪০টি প্রস্তাবনা। প্রতিযোগিতার ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, ক্যালটেকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওস্ক্রিনিক্স দল।
প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য জন হপকিন্স সেন্টার ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন অ্যান্ড ডিজাইনিং আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য, বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলগুলো থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে যেকোনো সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান পাওয়া। যেকোনো দেশের, যেকোনো শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে দলগুলো এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে। প্রতিযোগিতাটি তিনটি বিভাগে হয়ে থাকে, যেগুলো হচ্ছে– ‘সলিউশনস ফর অ্যাডভান্সড হেলথ সিস্টেমস’, ‘গ্লোবাল হেলথ/হিউম্যানিট্যারিয়ান ডিজাইন’, ‘ডিজিটাল হেলথ’। এর মধ্যে ডিজিটাল হেলথ বিভাগে এই বছরের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েটের দল নিওস্ক্রিনিক্স।
টিম নিওস্ক্রিনিক্স ও তাদের উদ্ভাবন
নিওস্ক্রিনিক্স এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে, যার সাহায্যে কোনো নারী নিজেই তাঁর স্তন ক্যান্সারের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারবেন। যেখানে একজন নারী স্তনের স্ক্রিনিং করতে পারবেন এআই-এর সাহায্যে। এছাড়াও লক্ষণ দেখে একদম প্রাথমিক পর্যায়েই স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হবে। টিম নিওস্ক্রিনিক্স সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. হাসনাইন আদিল বলেন, ‘‘আমাদের দল ‘নিওস্ক্রিনিক্স’-এ পাঁচজন টিম মেম্বার রয়েছে। প্রজেক্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছে ফাহমিদা সুলতানা, মেশিন লার্নিং ডেভেলপার হিসেবে এইচ এম শাদমান তাবিব, ব্যাকএন্ড ডেভেলপার হিসেবে সাদাতুল ইসলাম সাদি, ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার হিসেবে হাসনাইন আদিল এবং হার্ডওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেছে পৃথু আনান। সবাই বুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্টের ২০ ব্যাচে অধ্যয়নরত। আমাদের প্রজেক্ট সুপারভাইজার আছেন অধ্যাপক মো. সোহেল রহমান স্যার। ডেটা কালেকশনে সাহায্য করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জারিন তাসনিম ঐশী এবং রংপুর মেডিকেলের রিবাতুল ইসলাম।’’
প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা
শুরুটা করেছিলেন ফাহমিদা সুলতানা। নিজের পরিবারের স্তন ক্যান্সরের রোগী থাকায় বছর দুয়েক আগে তিনি এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন হাসনাইন আদিল ও সাদাতুল ইসলাম। শুরুতে হাসনাইন অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস বা ফ্রন্টএন্ড এবং সাদি অ্যাপটির প্রোগ্রামিং বা ব্যাকএন্ডের কাজ করেছেন। এরপর দলে যুক্ত হন এইচ এম শাদমান ও পৃথু আনান। শাদমান এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছেন। পৃথু স্তনের স্ক্রিনিং বা ছবি তোলার যন্ত্র তৈরির দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় পুরো কর্মযজ্ঞ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফাহমিদা। শুধু এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র
করে যে তারা কাজ করেছেন, তা নয়। এর আগে দেশীয়
প্রতিযোগিতায়ও এ প্রযুক্তির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলেন তারা। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রস্তাবনা জমা দেন তারা। এরপর ১০ মার্চ
প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হয়। ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগের ছয়
ফাইনালিস্টের মধ্যে নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে বুয়েটের অন্য একটি দলও ছিল। ১২ এপ্রিল অনলাইনে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন জানানো হয় বিজয়ীর নাম।
পুরস্কার হিসেবে যা পাচ্ছেন
পুরস্কার হিসেবে টিম নিওস্ক্রিনিক্স পেয়েছে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ছয় লাখ টাকা। নিজেদের পড়াশোনা ও গবেষণায় এই অর্থ কাজে লাগাতে চান তারা। অর্জনের পেছনে দলের বাইরের কয়েকজনের অবদানও স্বীকার করেন তারা। তাদের পুরো কাজটি তত্ত্বাবধান করেছেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. সোহেল রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম ও রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিবাতুল ইসলাম তথ্য সংগ্রহে বিশেষ অবদান রেখেছেন। এই তিনজনের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
আগামীর স্বপ্ন
নিজেদের স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে মো. হাসনাইন আদিল বলেন, ‘আগামীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীর স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতন করতে চাই আমরা। এরজন্য নিজেদের প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে চাই সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে।’
আমরাও বিশ্বাস করি, তরুণদের এই প্রযুক্তি নারীর জন্য হয়ে উঠবে আশীর্বাদস্বরূপ!