অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করবে না বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘চট করে আমরা আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না। কারণ, আইএমএফের অর্থ ছাড়াই ভালো করছি। আমরা এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা নিইনি।’

ইতালির মিলানে আজ ৪ মে রোববার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বার্ষিক বৈঠক শুরু হয়, যা চলবে ৭ মে পর্যন্ত। এই বৈঠকে যোগ দিয়ে সংস্থাটির দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রথম দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তি আকারে মিলানে অর্থ উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও আজ গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আইএমএফের ঋণের কিস্তি দেরি হওয়ার ঘটনা এডিবির বাজেট সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, এটা ছিল অর্থ উপদেষ্টার কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন। জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাজেট সহায়তার বিষয় আইএমএফ দেখে। সংস্থাটি সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয় জানতে চেয়েছে। আলোচনা চলছে, আশা করছি সমাধান হয়ে যাবে। আইএমএফ বলেছে, অর্থনীতিতে ভালো করার বিষয়ে একটা চিঠি পেলে তারা আশ্বস্ত হতো। আমরা বলেছি যে তা দেওয়া হবে, তবে এখনই নয়।’

এডিবি ও আইএমএফের ঋণ সহায়তা না পেলেও বাস্তবসম্মত বাজেট দেওয়া যাবে বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রশংসা করেছে এডিবি। সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের অর্থনীতির অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন। বলেছি, অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। ব্যাংক খাতে অনেক সংস্কার হয়েছে। বাণিজ্য বিষয়ে বেসরকারি খাতে একটি সম্মেলন হবে। এডিবি বলেছে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের জন্য ঢাকায় একটা কর্মশালার আয়োজন করতে।’

এডিবি আইএমএফের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, এ কথা উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বলেছি আইএমএফের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে।’

অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে এডিবির সন্তুষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এডিবি বলেছে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো করছে। আমাদের অর্জন নিয়ে তারা খুশি। বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে এডিবি খেয়াল রাখছে। বলেছে, তারা আমাদের প্রকল্প সহায়তাসহ ব্যাংক খাত ও এনবিআরের সংস্কারে সহায়তা করবে।’

কিন্তু প্রকল্প সহায়তার চেয়ে বাজেট সহায়তা বেশি দরকার বাংলাদেশের, এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। আমরা নমনীয় শর্তে এডিবির কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছি। তারা বলেছে, এ–বিষয়ক তাদের তহবিল সীমিত। তারপরও তারা দেখবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইএমএফ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী তিন অর্থবছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করেছে সরকার

অর্থমন্ত্রণালয় দেশের আগামী তিন আর্থিক বছরের জন্য জিডিপি’র হিসাব প্রক্ষেপণ করেছে।  আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর পরের অর্থাৎ ২০২৬-২০২৭ অর্থ বছরের জিডিপি’র আকার হবে চলতি হিসেবে ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এবং পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে জিডিপি’র প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৭৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় জিডিপি’র এই প্রাক্কলন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির আকারও সংশোধন করেছে অর্থ বিভাগ। গত বছরের জুনে যখন বাজেট দেওয়া হয় তখন চলতি বছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এখন তা সংশোধন করে  ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় প্রস্তুতকৃত প্রক্ষেপণকে অধিকতর নির্ভরযোগ্য করার জন্য অর্থ বিভাগ নিজেদের মডেলের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ম্যাক্রো ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক মডেল (এমএফএমওডি) ব্যবহার করে জিডিপি’র পূর্বাভাস দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।

বর্তমানে অর্থ বিভাগের ব্যবহৃত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো আইএমএফ’র মডেল অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে এমএফএমওডি পূর্বাভাস তৈরি করতে বেশ কিছু আচরণগত সমীকরণ ব্যবহার করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ এখন থেকে এমএফএমওডি ব্যবহার শুরু করেছে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। চলমান আর্থিক সংকট, ব্যবসায় স্থবিরতা এবং সাম্প্রতিক সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে এই সংশোধন করা হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আরও খানিকটা সংশোধন করে তা ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।

তবে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো বলছে, চলতি অর্থবছরে সরকার ঘোষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি-এই তিন সংস্থাই বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের ওপরে যাবে না।

চলতি অর্থ বছরে ( ২০২৪-২০২৫)  জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি অর্থবছরে জন্য আইএমএফ’র পূর্বাভাস হতাশাব্যঞ্জক হলেও আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থনীতির ক্ষেত্রে তারা বেশে ভালো পূর্বাভাস দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা এই সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২০২৬) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি কমে হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।  

গত এপ্রিলের ২১ তারিখে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইএমএফ-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’-এর সর্বশেষ সংস্করণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।  

আইএমএফ-এর এই পূর্বাভাসের আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের সাম্প্রতিক ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও)’-এ জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি চলতি অর্থবছরে মাত্র ৩.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, যা ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বেড়ে ৫.১ শতাংশে পৌঁছাবে।

তবে সবচেয়ে খারাপ পূর্বাভাসটি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত ২২ এপ্রিল সংস্থাটি জানায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোড় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যদি তাই হয়, তবে এটি হবে বিগত ৩৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এর আগে এই সংস্থাটিই গত জানুয়ারি মাসে বলেছিল, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণ নিয়ে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার অবস্থায় পড়তে চাই না: অর্থ উপদেষ্টা
  • আইএমএফ-এডিবি সহায়তা না দিলে নিজেদের মতো করে বাজেট: অর্থ উপদেষ্টা
  • আইএমএফ-এডিবি সহায়তা না দিলে নিজেদের মত বাজেট দেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা
  • আগামী তিন অর্থবছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করেছে সরকার
  • কৃষিতে ভর্তুকি চালিয়ে যেতে প্রয়োজনে আইএমএফ থেকে বেরিয়ে আসবে সরকার
  • হামলায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত, দাবি ভারতের
  • বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ, টোল ও ইজারামূল্য