অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কঠিন শর্ত মেনে আমাদের অবস্থা পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো হোক সেটা চাই না। আইএমএফ এর শর্ত পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।”

রবিবার (৪ মে) ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বোর্ড অব গভর্নর্সের বার্ষিক সভা শেষে এসব কথা বলেন।

এর আগে অর্থ উপদেষ্টা এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ওয়াং এর সঙ্গে আলোচনা করেন। উপদেষ্টা শনিবার ঢাকা থেকে ইতালির মিলানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে সেদিনই ইতালি পৌঁছান।

আরো পড়ুন:

আজারবাইজানের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে সম্মত প্রধান উপদেষ্টা

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার জেরে তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি, যা জানা যাচ্ছে

এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে এডিবির অর্থায়নে চলমান অবকাঠামো বাস্তবায়ন প্রকল্পগুলো চলতে থাকবে, পাইপ লাইনে থাকা প্রতিশ্রুতিগুলো রিভিউ করবে। এছাড়াও আমরা এডিবির কাছে বাজেট সাপোর্টের পাশাপাশি প্রকল্প সহায়তাও চেয়েছি। তারা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চেষ্টা করব ঢাকায় এ নিয়ে একটি সেমিনার করে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি এগিয়ে নিতে।

সম্প্রতি আইএফসির সঙ্গেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে ওয়াশিংটনে কথা বলেছি। এছাড়া সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সামিট নিয়েও কথা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আইএমএফ এর বাজেট সহায়তার বিষয়ে এডিবি জানতে চেয়েছে। আমি বলেছি আইএমএফ এর সঙ্গে নেগোশিয়েশন চলছে। সেটা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। যেহেতু আইএমএফ দেশের ম্যাক্রো ইকোনমিক বিষয়গুলো দেখে।”

তিনি বলেন, “আইএমএফ এর দেওয়া শর্তেও বিষয়ে এডিবি জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করব। এরপর সিদ্ধান্ত নেব। চট করে আইএমএফ এর শর্ত মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সামনে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ রয়েছে। কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের কাম্য নয়। কারো কাছ থেকে বাজেট সহায়তা না নিয়েই আমরা অনেকটা পথ এসেছি। এ বিষয়টি এডিবি প্রশংসা করে বলেছে, আমরা জানি তোমরা চেষ্টা করছ। গ্রাজুয়েশনের বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি বলেছি আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।”

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের খরচ কমানোর অনেকগুলো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত এডিপির অব্যবহৃত অর্থ রয়েছে, রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাজেট সাপোর্ট প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো খাত থেকে বাজেট সহায়তা না পেলেও আগামী অর্থবছরের বাজেট আমরা দেবই।”

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী তিন অর্থবছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করেছে সরকার

অর্থমন্ত্রণালয় দেশের আগামী তিন আর্থিক বছরের জন্য জিডিপি’র হিসাব প্রক্ষেপণ করেছে।  আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর পরের অর্থাৎ ২০২৬-২০২৭ অর্থ বছরের জিডিপি’র আকার হবে চলতি হিসেবে ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এবং পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে জিডিপি’র প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৭৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় জিডিপি’র এই প্রাক্কলন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির আকারও সংশোধন করেছে অর্থ বিভাগ। গত বছরের জুনে যখন বাজেট দেওয়া হয় তখন চলতি বছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এখন তা সংশোধন করে  ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় প্রস্তুতকৃত প্রক্ষেপণকে অধিকতর নির্ভরযোগ্য করার জন্য অর্থ বিভাগ নিজেদের মডেলের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ম্যাক্রো ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক মডেল (এমএফএমওডি) ব্যবহার করে জিডিপি’র পূর্বাভাস দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।

বর্তমানে অর্থ বিভাগের ব্যবহৃত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো আইএমএফ’র মডেল অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে এমএফএমওডি পূর্বাভাস তৈরি করতে বেশ কিছু আচরণগত সমীকরণ ব্যবহার করে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ এখন থেকে এমএফএমওডি ব্যবহার শুরু করেছে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। চলমান আর্থিক সংকট, ব্যবসায় স্থবিরতা এবং সাম্প্রতিক সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে এই সংশোধন করা হয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আরও খানিকটা সংশোধন করে তা ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।

তবে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো বলছে, চলতি অর্থবছরে সরকার ঘোষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি-এই তিন সংস্থাই বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের ওপরে যাবে না।

চলতি অর্থ বছরে ( ২০২৪-২০২৫)  জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। চলতি অর্থবছরে জন্য আইএমএফ’র পূর্বাভাস হতাশাব্যঞ্জক হলেও আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থনীতির ক্ষেত্রে তারা বেশে ভালো পূর্বাভাস দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা এই সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২০২৬) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি কমে হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।  

গত এপ্রিলের ২১ তারিখে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইএমএফ-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’-এর সর্বশেষ সংস্করণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।  

আইএমএফ-এর এই পূর্বাভাসের আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের সাম্প্রতিক ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও)’-এ জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি চলতি অর্থবছরে মাত্র ৩.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, যা ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বেড়ে ৫.১ শতাংশে পৌঁছাবে।

তবে সবচেয়ে খারাপ পূর্বাভাসটি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত ২২ এপ্রিল সংস্থাটি জানায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোড় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যদি তাই হয়, তবে এটি হবে বিগত ৩৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এর আগে এই সংস্থাটিই গত জানুয়ারি মাসে বলেছিল, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট করে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না: ইতালিতে অর্থ উপদেষ্টা
  • আইএমএফ-এডিবি সহায়তা না দিলে নিজেদের মতো করে বাজেট: অর্থ উপদেষ্টা
  • আইএমএফ-এডিবি সহায়তা না দিলে নিজেদের মত বাজেট দেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা
  • আগামী তিন অর্থবছরের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করেছে সরকার
  • কৃষিতে ভর্তুকি চালিয়ে যেতে প্রয়োজনে আইএমএফ থেকে বেরিয়ে আসবে সরকার
  • হামলায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত, দাবি ভারতের
  • বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ, টোল ও ইজারামূল্য