ঋণ নিয়ে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার অবস্থায় পড়তে চাই না: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 4th, May 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কঠিন শর্ত মেনে আমাদের অবস্থা পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো হোক সেটা চাই না। আইএমএফ এর শর্ত পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।”
রবিবার (৪ মে) ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বোর্ড অব গভর্নর্সের বার্ষিক সভা শেষে এসব কথা বলেন।
এর আগে অর্থ উপদেষ্টা এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ওয়াং এর সঙ্গে আলোচনা করেন। উপদেষ্টা শনিবার ঢাকা থেকে ইতালির মিলানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে সেদিনই ইতালি পৌঁছান।
আরো পড়ুন:
আজারবাইজানের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে সম্মত প্রধান উপদেষ্টা
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার জেরে তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি, যা জানা যাচ্ছে
এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে এডিবির অর্থায়নে চলমান অবকাঠামো বাস্তবায়ন প্রকল্পগুলো চলতে থাকবে, পাইপ লাইনে থাকা প্রতিশ্রুতিগুলো রিভিউ করবে। এছাড়াও আমরা এডিবির কাছে বাজেট সাপোর্টের পাশাপাশি প্রকল্প সহায়তাও চেয়েছি। তারা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চেষ্টা করব ঢাকায় এ নিয়ে একটি সেমিনার করে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি এগিয়ে নিতে।
সম্প্রতি আইএফসির সঙ্গেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে ওয়াশিংটনে কথা বলেছি। এছাড়া সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সামিট নিয়েও কথা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আইএমএফ এর বাজেট সহায়তার বিষয়ে এডিবি জানতে চেয়েছে। আমি বলেছি আইএমএফ এর সঙ্গে নেগোশিয়েশন চলছে। সেটা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। যেহেতু আইএমএফ দেশের ম্যাক্রো ইকোনমিক বিষয়গুলো দেখে।”
তিনি বলেন, “আইএমএফ এর দেওয়া শর্তেও বিষয়ে এডিবি জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করব। এরপর সিদ্ধান্ত নেব। চট করে আইএমএফ এর শর্ত মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সামনে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উদাহরণ রয়েছে। কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের কাম্য নয়। কারো কাছ থেকে বাজেট সহায়তা না নিয়েই আমরা অনেকটা পথ এসেছি। এ বিষয়টি এডিবি প্রশংসা করে বলেছে, আমরা জানি তোমরা চেষ্টা করছ। গ্রাজুয়েশনের বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি বলেছি আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের খরচ কমানোর অনেকগুলো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত এডিপির অব্যবহৃত অর্থ রয়েছে, রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাজেট সাপোর্ট প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো খাত থেকে বাজেট সহায়তা না পেলেও আগামী অর্থবছরের বাজেট আমরা দেবই।”
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
চার সংস্থা থেকে আসছে ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণ
আন্তর্জাতিক চার বহুজাতিক আর্থিক সংস্থা থেকে ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। গতকাল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ অনুমোদন হয়েছে। আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং শিগগিরই এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইইবি) ঋণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এসব ঋণের অর্থ এলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার চলতি মাসে পাওয়া যাবে। আগামী ২৩ জুন সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই ঋণ অনুমোদন হওয়ার কথা। বিভিন্ন টানাপোড়েনের পর গত মাসে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ। এরপর সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতায় পৌঁছেছে। আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতার কারণে অন্য সংস্থাগুলোও সহজে ঋণ ছাড় করছে।
গতকাল বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ৬৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দূষণ রোধে বায়ুর মান বৃদ্ধি ও গ্যাস সরবরাহ উন্নয়নে ৬৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদ। দুটি প্রকল্পের মধ্যে জ্বালানি খাত নিরাপত্তা জোরদারে ৩৫ কোটি এবং বায়ুমান উন্নয়ন প্রকল্পে ২৯ কোটি ডলার দেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুর মান উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্যাস সরবরাহের সংকট এবং শহর এলাকায় বায়ুদূষণের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের লক্ষ্যে এ দুই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল এডিবি আলাদা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ৯০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদনের তথ্য জানিয়েছে। গতকাল ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবির সদরদপ্তরে পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্ষদ বাংলাদেশের জন্য ব্যাংক খাত সংস্কারে ৫০ কোটি ডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ৪০ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে। চলতি মাসের মধ্যেই এই অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে বলে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব কৌশিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যার মধ্যে আছে সম্পদের দুর্বল গুণমান, তারল্য সংকট এবং দুর্বল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ। এডিবির অর্থায়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাংক খাতের মূলধন কাঠামো শক্তিশালী করা হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে মোট ১০০ ডলার দেওয়ার কথা। ৬৪ কোটি ডলার অনুমোদনের পর বাকি ৩৬ কোটি ডলারও শিগগিরই হয়তো পাওয়া যাবে। আর আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার আগামী সোমবারের পর্ষদ সভায় হয়তো অনুমোদন হয়ে যাবে। এর বাইরে এআইআইবি থেকে ৪৪ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের কথা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে যা হয়তো পাওয়া যাবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে যা সহায়ক হবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর পেরিয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে। এরপর থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে গত জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে এখন আবার রিজার্ভ বাড়ছে। টানা ২০ মাস পর গত এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। অবশ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ-এপ্রিল সময়ের জন্য ১৮৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর তা ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। এরপর আবার বেড়ে বর্তমানে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। চলতি মাসে বড় অঙ্কের ঋণ যোগ হওয়ার পর রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি দাঁড়াতে পারে বলে তাদের ধারণা।
আইএমএফের শর্ত মেনে গত মে মাসের মাঝামাঝি ডলারের দর বাজারভিত্তি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রিজার্ভের মোটামুটি শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ডলারের দরে তেমন হেরফের হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা করছে। দীর্ঘদিন ধরে যা ১২২ টাকার মধ্যে ছিল।