দেশে ৫ বছরের কমবয়সী শিশুরা ব্যাপকভাবে পুষ্টিহীনতার শিকার: সংলাপে বক্তারা
Published: 5th, May 2025 GMT
‘দেশে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুরা ব্যাপকভাবে পুষ্টিহীনতার শিকার হচ্ছে। দেশে প্রায় ৩৭ লাখ শিশু খর্বাকৃতি, ১৭ লাখ শিশু কৃশকায় এবং ৩৪ লাখ শিশু কম ওজনের সমস্যায় ভুগছে।’
সোমবার বাংলাদেশ রাইট টুগ্রো কনসোর্টিয়াম এবং বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) যৌথ আয়োজনে রাজধানীর মহাখালীতে এক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সংলাপে সেভ দ্য চিলড্রেনের ম্যানেজার মো.
এসময় উপস্থিত ছিলেন বারটানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তাসনীমা মাহজাবীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট পরিচালক অধ্যাপক ড মোঃ সাইদুল আরেফিন, সেভ দ্যা চিলড্রেন পরিচালক তানিয়া শারমিন।
ডা. মো. সাইদুর রহমান বলেন, পুষ্টি বিষয়ক কি সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা আছে তা আমরা সবাই জানি। আমাদের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। খুজেঁ বের করতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পুষ্টি বিষয়ক কোনো ফোকাল পারসন নেই। সবাই পুষ্টি নিয়ে কাজ করে। তাই কাজ হয় কম। পুষ্টি বিষয় ফোকাল পারসন প্রয়োজন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে তেহরান
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা ধ্বংস করার প্রাথমিক লক্ষ্যের বাইরেও এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ইরানের জনগণকে তাদের ইসলামী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও নেতানিয়াহুর লক্ষ্যের সমর্থনে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছেন।
যদি যুক্তরাষ্ট্র জড়িত হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপায়ে শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য এটিই প্রথম চেষ্টা হবে না। ২০০৩ সালে দেশটি ইরাক আক্রমণ এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটো অভিযানে সমর্থন দিয়ে সাদ্দাম হোসেন ও মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটায়। এ হস্তক্ষেপ উভয় দেশ এবং বৃহত্তর অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছিল। যদি সরকার উৎখাত হয়, তবে ইরানেও কি একই ঘটনা ঘটতে পারে?
শাহের উৎখাত
১৯৭৮-৭৯ সালের অভ্যুত্থানে ইরানের ইসলামী শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে। ওই অভ্যুত্থানে মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির পশ্চিমাপন্থি রাজতন্ত্র উৎখাত হয়। এর আগ পর্যন্ত ইরানে আড়াই হাজার বছরের পুরোনো রাজতান্ত্রিক শাসনের ইতিহাস ছিল। শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা ছিলেন পাহলভি রাজবংশের প্রধান, যা ১৯২৫ সালে ক্ষমতায় আসে।
১৯৫৩ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগের উগ্র জাতীয়তাবাদী ও সংস্কারবাদী প্ররোচনায় শাহকে নির্বাসনে বাধ্য করা হয়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিকল্পিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে শিগগিরই সিংহাসনে ফিরিয়ে আনে। সব জাতীয়তাবাদী, পশ্চিমাপন্থি ও আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শাহ তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারেননি।
২৫ বছর পর তাঁর বিরুদ্ধে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিল গণতন্ত্রপন্থি উপাদানগুলো। শাহের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে শিয়া ধর্মীয় নেতাদের দল বিপ্লবের নেতৃত্ব পর্যায়ে সবচেয়ে সুসংগঠিত ছিল। খোমেনি ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে (প্রথমে ইরাকে এবং পরে ফ্রান্সে) নির্বাসনে ছিলেন। তবুও তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা জনগণের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রশাসন বুঝতে পারে, তারা আর শাহকে সমর্থন করতে পারবে না, তখন তিনি দেশত্যাগ করেন এবং ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে নির্বাসনে চলে যান। ফলে খোমেনি ইরানে ফিরে আসেন এবং বিপুল জনস্রোত তাঁকে স্বাগত জানায়।
ইসলামী প্রজাতন্ত্রের জন্ম
অভ্যুত্থানের পর খোমেনি এবং তাঁর সমর্থকরা রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করেন এবং ইরানকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করেন। সরকারে তীব্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ছিল। খোমেনি কেবল ইরানকেই পরিবর্তন করেননি, বরং আঞ্চলিক শৃঙ্খলা গঠনে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকেও চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এতে তেলসমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা তার প্রভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হারিয়ে ফেলে। এরপর ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ আমেরিকান বা ইসরায়েলি পদক্ষেপের আশঙ্কা ইরানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
নতুন সর্বোচ্চ নেতার ক্ষমতা গ্রহণ
১৯৮৯ সালে খোমেনি মারা যান। তাঁর উত্তরসূরি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি একই লড়াইকারী ও বাস্তববাদী পদ্ধতিতে ইরান শাসন করেছেন। খামেনি স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং রাশিয়া ও চীন বলয়ের দিকে ঝুঁকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের মোকাবিলা করার জন্য শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেন। শাসন ব্যবস্থার টিকে থাকা এবং ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে তিনি নমনীয়তাও দেখিয়েছেন। রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে খামেনির বিশাল সাংবিধানিক ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব রয়েছে।
তিনি ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস এবং এর আধা সামরিক শাখা ও শিয়া ধর্মীয় নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণসহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাই অনুমেয় যে, খামেনি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহজে আত্মসমর্পণ করবেন না।
তবে, সম্মিলিত অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বহিরাগত চাপের ভারে শাসন ব্যবস্থার পতন হলে বিকল্প কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইরান ঐতিহাসিকভাবে ক্ষমতার বিস্তারের পরিবর্তে কেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একত্রিত হয়েছে। যদি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তর আশা করা ভুল হবে।
তাছাড়া ইরানি জনগণ অত্যন্ত সংস্কৃতিবান এবং সৃজনশীল। তাদের অর্জন ও সভ্যতার একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব ভাগ্য নির্ধারণে পুরোপুরি সক্ষম, যতক্ষণ না এই প্রক্রিয়ায় স্বার্থান্বেষী বিদেশি হস্তক্ষেপ না থাকে।