ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গিয়ে আহত খুলনার তেরখাদার যুবলীগ নেতা মিনারুল ইসলামকে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ১ লাখ টাকা অনুদান প্রদানের ঘটনা‌ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

রোববার রাতে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডলকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে রোববার বিকেলে ‘শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আহত যুবলীগ নেতা পেলেন জুলাই যোদ্ধা অনুদান’ শিরোনামে সমকাল অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হয়। মুহূর্তের মধ্যেই সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। পরে রাতে খুলনা জেলা প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়।

জানা যায়, তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনারুল ইসলাম ৪ আগস্ট ছাত্রদের ওপর হামলা চালান। পরে ছাত্রদের ধাওয়ায় তিনি খুলনা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে পালাতে গিয়ে আহত হন। আহত হওয়ার সেই নথি জমা দিয়ে জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ‘সি ক্যাটাগরিতে’ নাম তালিকাভুক্ত করেছেন তিনি। গত ১৪ জুলাই খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে তিনি ১ লাখ টাকা অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী চেক বিতরণ করা হয়েছে। আলোচিত মিনারুল ইসলামের নামটিও মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা। তারপরও ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন দ ন য বল গ ন ত ল ইসল ম য বল গ অন দ ন তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছি—নতুন বাংলাদেশ লাগবে, নতুন সিস্টেম লাগবে। পুরোনো খেলায় আমরা অংশগ্রহণ করব না। চাঁদাবাজির ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে আমরা নেই। আমরা পুরোনো খেলায় নতুন প্লেয়ার হতে আসিনি, আমরা খেলার নিয়ম বদলাতে এসেছি। রাজনীতির নিয়ম বদলাতে হবে। দেশের হাল ধরতে ভালো, গ্রহণযোগ্য ও তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে।’

আজ শনিবার দুপুর দেড়টায় বগুড়া শহরের সাতমাথার মুক্তমঞ্চে জুলাই পদযাত্রা শেষে এক পথসভায় এ কথাগুলো বলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানে যুক্ত হবে। জুলাই কোনো আবেগের বিষয় নয়, জুলাইয়ের পথেই আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মুজিববাদীরা পলাতক। তারা ভারতে পালিয়েছে, কারণ এটা কোনো বাংলাদেশি দল ছিল না, এটা ছিল ভারতীয় পার্টি। গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ আর কোনো বিদেশি ইশারায় চলবে না। নির্বাচন, রাজনীতি—সবকিছু নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের জনগণ। আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের শপথ হবে, ঘোষণা করা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র।’

আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৬ বছরে বগুড়ার প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বগুড়ার নাম শুনলেই চাকরি দেওয়া হতো না, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো না, বরং মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হতো। অথচ এই বগুড়া একসময় বাংলার রাজধানী ছিল। পুণ্ড্র সভ্যতার সূচনা হয়েছিল এখান থেকেই। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আর জ্ঞানবিজ্ঞানের আঁতুড়ঘর ছিল বগুড়া। আমরা সেই পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই, বগুড়ার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এনসিপি কোনো বৈষম্য চায় না। বগুড়াবাসীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে লড়াই করবে। আমরা চাই, যার যা প্রাপ্য তা নিশ্চিত হোক। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

বগুড়ার প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বগুড়ার প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। এ জেলায় দলবাজ প্রশাসন ও পুলিশের কোনো স্থান হবে না। প্রশাসন, পুলিশ ও আদালতকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। যদি কেউ পুরোনো কায়দায় দলবাজ প্রশাসন চালাতে চায়, তাহলে তার পরিণতিও হবে ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির দায়ে অভিযুক্ত ডিসিদের মতো।

সভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসাইন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, নাহিদা সারওয়ার ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাকিব মাহদী।

এর আগে শনিবার বেলা ১১টায় বগুড়ার পর্যটন মোটেলে শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে এনসিপি। সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার, সংস্কার; তারপর নির্বাচন।

পথসভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি

পথসভায় কেউ এসেছেন কৌতূহলে, কেউ বক্তব্য শুনতে। শহরের নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব জোবেদুর রহমান বলেন, তিনি এনসিপির সমর্থক নন, তবে নেতারা বগুড়াবাসীর জন্য কী বলেন তা শোনার আগ্রহেই এসেছেন।

বগুড়া থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের কাহালু উপজেলার বীরকেদার গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী বলেন, নাহিদের বক্তব্য মোবাইলে শুনেছেন। এবার সরাসরি শুনতেই এসেছেন। শ্যামবাড়িয়া এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসার কাজে শহরে এসে পথসভায় নেতাদের বক্তব্য শুনছি।’

মালগ্রাম এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন থেকেই তরুণদের কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। দল গঠনের পর এনসিপির সমর্থক হিসেবে কর্মসূচিতে এসেছি। তবে অন্য দলের মতো নতুনদের এই দলের কেউ যাতে স্রোতে গা না ভাসায় এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের মতো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ালে মানুষ এনসিপিকেও প্রত্যাখ্যান করবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ