শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমানোটা ভালো বার্তা নয়
Published: 20th, May 2025 GMT
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত বরাবরই অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল—এ দুটি খাতে বরাদ্দ বাড়বে, সংস্কার হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য হলো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ কমছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের এডিপির চেয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে শিক্ষায় বরাদ্দ কমছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
বাস্তবতা হলো, এবারও ভিন্নভাবে বাজেট তৈরির চেষ্টাটা দেখা গেল না। বাজেট তৈরির প্রক্রিয়ায় যে গতানুগতিকতা কিংবা আমলাতান্ত্রিকতা আমরা এত দিন দেখে আসছিলাম, সেই ধারাবাহিকতার একটা প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।
এটা সত্যি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্পদের স্বল্পতার মধ্যে বাজেটটা করতে হচ্ছে। বাজেটের ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাষী শব্দটি বহুল ব্যবহৃত একটা শব্দ। উচ্চাভিলাষী বাজেট তৈরি করার মতো সম্পদের বাস্তবতা আমাদের নেই। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে, একটা বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। চব্বিশের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রেও বিশাল একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সেই আকাঙ্ক্ষাটা কিন্তু মূলত বাজেটের আকার বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষা নয়। সেই আকাঙ্ক্ষাটা হচ্ছে, গুণগত মানের দৃষ্টিকোণ থেকে বাজেটে একটু ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ থাকা।
বাজেট যাঁরা প্রণয়ন করেছেন, তাঁরা একদিকে ঠিক কাজটাই করেছেন। উচ্চাভিলাষী পথটা তাঁরা পরিহার করেছেন। বাস্তবতার মধ্যে বাজেট তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ কমানো হলো, সেই বার্তাটাও মানুষের মধ্যে যাচ্ছে।
আমাদের বাজেটে সাধারণত অবকাঠামো খাতগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সামাজিক খাতগুলোকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবারের বাজেটে বরাদ্দের যে বিন্যাস দেখছি, সেটা প্রথাগত ঐতিহ্যেরই প্রতিফলন। শিক্ষা খাতে ৯১টি প্রকল্প ও স্বাস্থ্য খাতের ৩৫টি প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো মূলত অবকাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প। আমরা শিক্ষা বাজেট ও স্বাস্থ্য বাজেট বলি। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় এগুলোকে বলা দরকার শিক্ষা অবকাঠামো বাজেট ও স্বাস্থ্য-অবকাঠামো বাজেট। কেননা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বাজেট আর অবকাঠামো নির্মাণ সমার্থক হয়ে গেছে। বাজেট প্রক্রিয়া প্রণয়নে যাঁরা যুক্ত থাকেন, তাঁদের মধ্যে প্রচণ্ড একটা আগ্রহ থাকে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রতি।
এবারের বাজেটে সম্পদের স্বল্পতা স্বীকার করে নিয়েও জন-আকাঙ্ক্ষার কথা মাথায় রেখে ভিন্ন ধরনের সংকেত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেটা দরকারও। প্রকল্পের বিন্যাসগুলোকে বদলেই সেটা করা সম্ভব হতো। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের যে অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে, সেই অর্থ অন্য কাজে ব্যয় করার সুযোগ ছিল। যেমন প্রাথমিকে বৃত্তির একটা প্রকল্প আছে। ২০০৪ সালে প্রকল্পটি চালু হয়। মাসে ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এটার একটা পরীক্ষিত বিতরণ পদ্ধতিও আছে, যেখানে তুলনামূলকভাবে অব্যবস্থাপনাগত অপচয়ও কম। এখানে যদি ১০০ টাকার বদলে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হতো, তাহলে কিন্তু মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দেওয়া যেত। সীমিত সম্পদের মধ্যেও সরকার যে ব্যতিক্রমীভাবে বরাদ্দের বিন্যাসটা সাজানোর চেষ্টা করছে, সেটা মানুষ বুঝতে পারতেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা যে দুর্বল অবস্থায় আছে, তার অন্যতম কারণ হলো জনবল-ঘাটতি। পদের বিপরীতে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ খালি আছে। সেই শূন্য পদে নিয়োগের জন্য যদি আলাদা একটা উদ্যোগ নেওয়া হতো, তাহলে কিন্তু মানুষের মধ্যে ইতিবাচক একটা সংকেত যেত। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমিয়ে আনাটা একমাত্র সংকেত হতে পারে না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারক, বিশেষ করে বাজেট যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁদের মধ্যে দুর্নীতি ঠেকানোর চিন্তাটা ক্রিয়াশীল আছে। দুর্নীতি ঠেকানোর একটা পদ্ধতি হিসেবে তাঁরা প্রকল্প কমানোর পথ বেছে নিয়েছেন। এই চিন্তার পেছনে আমাদের নাগরিক সমাজেরও একধরনের দায় আছে। আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম বা বাজেট সাজানোয় দুর্নীতি কমানোটা অবশ্যই একটা বড় বিষয়।
বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি যদি কমাতে হয়, তাহলে ব্যয় দক্ষতার বিষয়টা কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, প্রকল্প নির্বাচনপ্রক্রিয়াটা কতটুকু ভিন্নভাবে তৈরি করা হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা মাঠ বাস্তবতা ভালো করে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বাজেট বরাদ্দ কমে যাওয়াটা হতাশার বিষয়। অবকাঠামো খাতের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে কতটা বরাদ্দ কমল, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। কিন্তু প্রকল্প বিন্যাসের জায়গায় একধরনের উদ্ভাবনী চিন্তা দেখানোর সুযোগ ছিল। বাজেটের চেয়েও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার ও গভর্ন্যান্স গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সরকারের মনোযোগের ঘাটতিটা দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে কমিশন করা হলেও শিক্ষা সংস্কারে কমিশন করেনি।
অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দের দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। আবার মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খরচ করি আমরা। এটা সত্যি, রাতারাতি এ ধারায় পরিবর্তন আসবে না। আমাদের সম্পদ কম। আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের শর্তের বাস্তবতাও আছে। সে কারণেই বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে একধরনের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে। সরকার মূলত সীমিত সম্পদ, দুর্নীতি কমানো ও আইএমএফের চাপে এই রক্ষণশীলতার পথে হাঁটছে।
দুর্নীতির নানা চেহারা আছে। কিছু চেহারা যেটা আছে, সেটাকে আমরা সরাসরি দুর্নীতি হিসেবে চিনি। যেমন ঘুষ, আর্থিক লেনদেন। কিন্তু কিছু চেহারা আছে, সেটাকে ঠিক দুর্নীতি বলা যাবে না। সেটা হচ্ছে অদক্ষ প্রকল্প নির্বাচন ও ব্যয় দক্ষতার ঘাটতি। এ দুটি বিষয় কিন্তু দুর্নীতির সমগুরুত্বের অথবা তার চেয়েও বড়।
আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ নিয়ে এদিক-সেদিক করার খুব বেশি সুযোগ নেই। তবে দুটি করণীয় সরকারের আছে। প্রথমত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমানোটাই একমাত্র বার্তা যেন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। জন-আকাঙ্ক্ষাকে মাথায় রেখে প্রকল্প বিন্যাসে নতুন কিছু করার যে চেষ্টা করা হয়েছে, বাজেটে তার প্রতিফলন থাকা দরকার।
আমি প্রাথমিক শিক্ষায় বৃত্তি বাড়ানো ও স্বাস্থ্যে জনবল বাড়ানোর দুটি উদাহরণ দিয়েছি। এ রকম কিছু করা গেলে সেটা মানুষের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা দেবে। প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবেও এ ধরনের উদ্যোগ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাজেটের ন্যারেটিভে গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিকতা এবং আইএমএফের বাধ্যবাধকতার বাইরে বেরিয়ে মূল সমস্যাটা সঠিকভাবে অনুধাবন করা গেল কি না, তার একটা উপস্থিতি অবশ্যই থাকতে হবে।
● ড.
হোসেন জিল্লুর রহমান বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান
* মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক র য় প রকল প অবক ঠ ম ব স তবত সরক র র প রণয়ন আম দ র কর ছ ন র একট
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের ‘৯৯৬’ ছড়িয়ে পড়ছে সিলিকন ভ্যালিতে, আপনি কী করবেন
‘৯টা থেকে ৫টা’ পর্যন্ত কাজ করাকে সাধারণ জীবিকা উপার্জনের উপায় বলা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে এখন প্রতিযোগিতামূলক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে হলে ‘৯৯৬’ কাজ করতে হয়। অন্তত আশপাশের মানুষকে দেখাতে হয় যে আপনি কাজটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
‘৯৯৬’ মানে হচ্ছে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করা। এ ধারার যাত্রা শুরু হয় চীনের কঠিন পরিশ্রমী টেক ইন্ডাস্ট্রি থেকে। ২০২১ সালে চীনের একটি উচ্চ আদালত কোম্পানিগুলোকে ৭২ ঘণ্টার কাজের সপ্তাহ চাপিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তবু ক্যালিফোর্নিয়ার টেক কর্মীরা এই ধারণাটিকে আঁকড়ে ধরে আছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এক্স আর লিংকডইনে এটি নিয়ে অবিরত পোস্ট করে যাছে।
আরও পড়ুনএআই বাড়াচ্ছে কাজের চাপ, চীনের ‘৯৯৬’ সংস্কৃতি কি ফিরছে১২ অক্টোবর ২০২৫এখনো এর প্রমাণ মূলত গল্প-গুজব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমিত। তবে কিছু কোম্পানি চাকরির বিজ্ঞাপনে কর্মী ৭০ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন সপ্তাহে—এই প্রত্যাশা স্পষ্ট করা থাকছে। শোনা যাচ্ছে, নির্বাহীরা চাকরিপ্রার্থীদের জিজ্ঞাসা করছেন, তাঁরা কি এ ধরনের সময়সূচি মানতে রাজি। আর ‘র্যাম্প’ নামের একটি ফাইনান্সিয়াল অপারেশন স্টার্টআপ এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে, এ বছরের প্রথমভাগে সান ফ্রান্সিসকোতে শনিবারের দিনে করপোরেট ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বেড়েছে, যেটি তারা ধরে নিয়েছে, মানুষ বেশি উইকেন্ডেও কাজ করছেন।
যদিও সিলিকন ভ্যালির জন্য শব্দটি নতুন, ৯৯৬ আসলে বহুদিনের চর্চার এক তীব্র সংস্করণ। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ মার্গারেট ও’মারা, যিনি ‘দ্য কোড: সিলিকন ভ্যালি অ্যান্ড দ্য রিমার্কিং অব আমেরিকা’ বইয়ের লেখক, বলছেন, ১৯৬০ সাল থেকেই যখন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো তীব্র প্রতিযোগিতায় ছিল, তখন থেকেই অনেক টেক কোম্পানির কঠোর, দীর্ঘ সময় কাজ করার সংস্কৃতি ছিল। বাইরে থেকে তারা ছিল ‘ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাজুয়াল’ কিন্তু ভেতরে ‘পুরোনো দিনের কর্মপাগল’।
বার্কলের সমাজবিজ্ঞানী ক্যারোলিন চেন। তিনি ‘ওয়ার্ক প্রে কোড’ বইয়ের লেখক। তিনি বলেন, টেক কর্মীদের একধরনের তীব্র, প্রায় ধর্মীয় ভক্তিভরে কাজ করার মানসিকতা সিলিকন ভ্যালির সংস্কৃতির অংশ। তিনি আরও বলেন, টেকে একধরনের ‘নায়কোচিত পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ আছে, যা সবার কাছেই সব সময় কাজ করার প্রত্যাশা তৈরি করে।
মার্গারেট ও’মারা মনে করেন, এই হ্যাস্টল কালচার যাদের পরিবার বা অন্য দায়িত্ব আছে, তাদের নাগালের বাইরে এবং এটি এমনিতেই একরঙা (কম বৈচিত্র্যময়) শিল্প খাতকে আরও সংকীর্ণ করে তুলতে পারে। তবে যারা বড় কোনো আইডিয়ায় প্রথমেই ঢুকে পড়তে পেরেছে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে রাজি ও সক্ষম, তাদের জন্য পুরস্কার বিশাল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এখন যেভাবে বিপুল বিনিয়োগ আসছে, তা ভবিষ্যতের সম্পদকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। একই সময়ে টেক কর্মীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি অনিরাপদ বোধ করছেন।
কয়েক বছরের ছাঁটাই, উচ্চ সুদের হার আর অনিশ্চিত মুনাফার পরে টেক ইন্ডাস্ট্রি—যা একসময় দারুণ বেনিফিটের জন্য পরিচিত ছিল—এখন কড়াকড়ি চালু করেছে। ইলন মাস্কের নিজেকে ঘোষিত ‘অত্যন্ত কঠোর’ কাজের ধরন এখন আর পুরো ইন্ডাস্ট্রি থেকে আলাদা নয়। সিলিকন ভ্যালিতে এখন ‘হার্ড টেক’ যুগ চলছে, আর পাগলের মতো কাজ করা (অথবা অন্তত এমনভাবে কাজের কথা বলা) হয়ে উঠেছে নতুন নিয়ম।
ও’মারা বলেন, ২০২০ সালের সিলিকন ভ্যালি আর ২০২৫ সালের সিলিকন ভ্যালির অগ্রাধিকার ভিন্ন।
অতিরিক্ত কাজে মানবিক ক্ষতি
অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার মানবিক ক্ষতি প্রমাণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করলে ৩৫ শতাংশ বেশি স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয় এবং ১৭ শতাংশ বেশি হৃদ্রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত কাজের ফলে কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং সৃজনশীলতা হ্রাস পায়।
ব্যবসার জন্যও ক্ষতিকর ‘৯৯৬’
কোম্পানিগুলো মনে করতে পারে, ৭০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, কিন্তু গবেষণা বলছে, উল্টো কথা। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ জন পেনক্যাভেল দেখিয়েছেন, সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার পর উৎপাদনশীলতা দ্রুত কমতে থাকে। সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা কর্মীদের উৎপাদন প্রায় ৫৫ ঘণ্টা কাজ করা কর্মীদের সমান, অর্থাৎ বাড়তি পরিশ্রম কোনো ফল দেয় না।
কর্মীদের করণীয়: সচেতনতা ও আত্মরক্ষা
এই সংস্কৃতি অর্থাৎ সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টার কর্মসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ার আগেই কর্মীদের সচেতন হওয়া জরুরি।
১. সতর্ক থাকুন
চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে যদি ‘২৪/৭ উপস্থিতি’ বা ‘অসীম প্রাপ্যতা’র উল্লেখ থাকে, সাবধান হোন। সাক্ষাৎকারে সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন সাপ্তাহিক গড় কাজের সময় ও ওভারটাইম নিয়ে।
২. আইনি অধিকার সম্পর্কে জানুন
আপনি আওয়ারলি (ঘণ্টা অনুযায়ী) নাকি এক্সেম্পট (ওভারটাইম ছাড়া স্থায়ী বেতনভুক্ত), তা বুঝুন।
৩. সীমানা নির্ধারণ করুন
নিজের কাজের সময় নথিবদ্ধ করুন, ছুটি (পিপিও) অবশ্যই ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত কাজের সময়ের বাইরে প্রাপ্যতার বিষয়ে স্পষ্ট যোগাযোগ রাখুন।
দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকার কৌশল: বেশি নয়, স্মার্ট কাজ
চীনের ৯৯৬ অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, অতিরিক্ত কাজ স্বল্প মেয়াদে ফল দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ভালো ফল আনে না। কর্মীর চাকরি ছেড়ে দেওয়া, উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
স্মার্ট কোম্পানিগুলো এখন এআইকে ব্যবহার করছে মানুষের কাজের চাপ কমাতে, যাতে কর্মীরা সৃজনশীল ও কৌশলগত কাজে মনোযোগ দিতে পারেন সীমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ সময়ের মধ্যে। যেসব প্রতিষ্ঠান ফ্লেক্সিবল কাজের সুযোগ, সত্যিকারের ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স এবং টেকসই ক্যারিয়ার তৈরি করছে, তারা এখন প্রতিভাবান কর্মী নিয়োগে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ফোর্বস