সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত অর্থ উপদেষ্টার
Published: 20th, May 2025 GMT
সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হওয়ার সম্ভাবনা মোটামুটি। হয় তো একটু সময় লাগবে। কখন থেকে দিতে পারবো, কতো দিতে পারবো, এটার জন্য কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি।
মঙ্গলবার (২০ মে) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
আসন্ন বাজেটে মহার্ঘ্য ভাতা নিয়ে কী থাকছে এমন এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “মহার্ঘ্য ভাতা নিয়ে এখন কিছু বলবো না। আমরা কাজ করছি, দেখছি। এটা নিয়ে আমরা এক্টিভলি কনসিডার (সক্রিয়ভাবে বিবেচনা) করছি। একটা কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা কাজ করছেন, সেটা করে আমার কাছে দেবেন।”
মহার্ঘ্য ভাতা হচ্ছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “হওয়ার চান্স মোটামুটি। হয়তো একটু সময় লাগবে। আমি বাজেটের ওয়ার্ক আউট করে দেখি, কখন থেকে দিতে পারবো, কতো দিতে পারবো।”
অ্যামাউন্ট কতো হতে পারে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এটা বলা যাবে না, এটা বললে তো সব বলা হয়ে যাবে।”
১০ থেকে ১৫ শতাংশের একটা কথা শুনা যাচ্ছে বিষয়টা কি এরকম? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টা ওয়ার্কআউট করছি। যখন ফাইনাল করবো, এরপর কেবিনেটে যাবে, প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিবে, তারপর জানতে পারবেন।”
এর আগে অনুমোদন না হওয়ায় সরকারি চাকরিজীবীরা কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সেটা হওয়ার সুযোগ নেই, আমরা কনসিডার করবো।”
তাহলে বলতে পারি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সুখবর আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এমন কিছু বলার দরকার নেই, তবে আমরা বিবেচনা করবো।”
স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি বন্ধ করা হয়েছে ফলে কি প্রভাব পড়তে পারে এবং সে বিষয়ে পদক্ষেপ কি নেওয়া হবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আজকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবো। আমিতো এখনই বলতে পারবো না। ওনারা আসবে আমার কাছে কথা বলতে।”
আজকে বিকেলে তো আপনার কাছে এনবিআর আসবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এনবিআর’র বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। একইসঙ্গে এনবিআরকেও মন্ত্রণালয়ে কিছু বলতে দেবো না। যদি কাভারেজ করেন তাদের কথা তাহলে আমি পানিশমেন্টের ব্যবস্থা নেবো। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকতে যখন ব্যাংকারদের সাথে কথা বলেছি, তাদের স্পষ্ট বলে দিতাম, কোনো ব্যাংকার, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে কিছু বলবেন না।”
তিনি বলেন, “আতিউর রহমান সময়ে দেখেছি চেয়ারম্যানরা কথা বলে আমি এই করেছি সেই করেছি। আমি কিন্তু এগুলো এলাউ করবো না। এনবিআর যদি কিছু বলতে চায় বাইরে গিয়ে বলবে।”
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আজকের বৈঠকে আমরা এলএনজিসহ কয়েকটি পণ্য তাড়াতাড়ি আমদানি করার অনুমোদন দিয়েছি। এছাড়া কয়েকটা ভূতাপেক্ষ বিষয় ছিল সিলেট, হবিগঞ্জের সড়কগুলো বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। একইসঙ্গে যশোর মেডিকেল কলেজের হাসপাতালটা হয়নি, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ আছে হাসপাতাল হয়নি। হাসপাতাল ছাড়া মেডিকেল কলেজ কোনো ইফেক্টিভ না। এগুলো আমরা অনুমোদন দিয়েছি।”
ঢাকা/হাসনাত/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি
মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’
এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’
আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’
ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।
আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।
নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’
আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫