এভারেস্ট বেজক্যাম্প থেকে শাকিল বললেন, ‘চূড়ায় উঠে মনে হচ্ছিল কতক্ষণে নিচে নামব’
Published: 20th, May 2025 GMT
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করে নিরাপদে বেজক্যাম্পে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। আজ নেপাল সময় সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি ক্যাম্প–২ থেকে বেজক্যাম্পের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছান। তবে অতি উচ্চতা, প্রতিকূল আবহাওয়া আর দীর্ঘ অভিযানের ধকল তাঁকে বেশ কাহিল করে ফেলেছে।
আজ ২০ মে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বেজক্যাম্প থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ইকরামুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠান্ডায় কথা বলতেও পারছি না। বাজে আবহাওয়ার মধ্যে সামিট (চূড়ায় আরোহণ) করেছি। চূড়ায় উঠে মনে হচ্ছিল কতক্ষণে আমি নিচে নামব। এত তুষারপাত আর বাতাস যে চারপাশটা সাদা হয়ে এল। কোনোমতে দু-তিনটা ছবি তুলেই নিচে নামতে শুরু করি।’
এভারেস্ট চূড়ার উদ্দেশ্যে বেজক্যাম্প থেকে গত ১৬ মে ক্যাম্প-২-এ যান ইকরামুল হাসান। ১৭ মে ক্যাম্প-৩ এবং ১৮ মে ক্যাম্প-৪-এ ওঠেন। এই ক্যাম্প থেকেই চূড়ান্ত যাত্রা করে ১৯ মে যাত্রা করে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টায় এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছান।
সেই যাত্রার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইকরামুল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্প-৪ থেকে যাওয়ার সময়ই প্রচুর বাতাস আর তুষারপাতের মধ্যে পড়েছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল চূড়ায় পৌঁছাতে পারব তো। আশঙ্কা নিয়েই ধীরে ধীরে চূড়ার দিকে যাই। হিলারি স্টেপের (চূড়ার কাছাকাছি জায়গা) কাছে পর্বতারোহীদের ডেডবডি (মৃতদেহ) দেখলাম। এর মধ্যে সম্প্রতি মারা গেছেন এমন দেহও দেখেছি।’
এভারেস্ট বেজক্যাম্পে ইকরামুল হাসান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইকর ম ল হ স ন
এছাড়াও পড়ুন:
হজ, কলেরা ও কোয়ারেন্টিন
হজ পবিত্র ধর্মীয় আচার হলেও ইতিহাসে এটি বারবার মহামারির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আরব উপদ্বীপের হেজাজ অঞ্চল, বিশেষ করে মক্কা ও মদিনায়, বিভিন্ন সময়ে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে কলেরা ছিল অন্যতম। এই মহামারিগুলো রোধে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মক্কায় মহামারি
মক্কায় মহামারির প্রথম লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় ইবনে কাসিরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে। ৯৬৮ সালে ‘আল-মাশরি’ নামক একটি মহামারি মক্কায় আঘাত হানে, যার ফলে অসংখ্য হজযাত্রী এবং তাঁদের বহনকারী উটের মৃত্যু হয়। এমনকি যাঁরা হজ পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁরাও অল্প সময়ের মধ্যে মারা যান। এ ঘটনা মক্কার ইতিহাসে মহামারির প্রাথমিক প্রভাবের একটি উদাহরণ।
কলেরার প্রাদুর্ভাব
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির ফলে হজযাত্রা আরও সহজ ও ব্যাপক হয়। বাষ্পীয় জাহাজের প্রচলনের কারণে অধিক সংখ্যক হজযাত্রী স্বল্প সময়ে মক্কায় পৌঁছাতে শুরু করেন। তবে এটি সংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তারের সুযোগও তৈরি করে। এই সময়ে কলেরা বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে আবির্ভূত হয়, এবং হেজাজ অঞ্চলও এর প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল না।
কলেরা প্রথম ১৮১৭ সালে বাংলার যশোর অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) দেখা দেয় এবং দ্রুত ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৩৩ সালের মধ্যে এটি এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় মহামারি হিসেবে প্রভাব ফেলে, যার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আরব উপদ্বীপে কলেরার প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে ১৮২১ সালে। ১৮৩১ সালে মক্কায় এই রোগ প্রথম আঘাত হানে, যার ফলে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা অন্তত ২০ হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। এই মহামারি ভারতীয় হজযাত্রীদের মাধ্যমে মক্কায় ছড়ায় এবং অভূতপূর্ব দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ১৮৪১, ১৮৪৭, ১৮৫১, ১৮৫৬-৫৭ ও ১৮৫৯ সালে কলেরা মক্কায় বহু হজযাত্রীর প্রাণ কেড়ে নেয়।
আরও পড়ুনবদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন২০ জুলাই ২০২৩কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা
তৎকালীন ওসমানিয়া সাম্রাজ্য, যারা হেজাজ অঞ্চলের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে ছিল, কলেরার বিস্তার রোধে ১৮৪০ সাল থেকে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা প্রয়োগ শুরু করে। হেজাজের সীমান্ত এবং মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা হতো।
ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া বিশেষভাবে কঠোর ছিল। এডেনে যাত্রাবিরতির পর, হজযাত্রীদের ইয়েমেনের উপকূলীয় কামারান দ্বীপে কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে নামানো হতো। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত হতে পারত। কোয়ারেন্টিন শেষে জাহাজ জেদ্দায় পৌঁছাত এবং পথে ইয়ালামলাম নামক স্থানে হজযাত্রীরা ইহরাম বাঁধতেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মিকাত (হজের নিয়ত ও ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান) হিসেবে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক কলেরা সম্মেলন
কলেরা মহামারির বিশ্বব্যাপী বিস্তার এবং ব্যাপক প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে ১৮৬৬ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো একটি আন্তর্জাতিক স্যানিটারি কনফারেন্সের আয়োজন করে, যা পরে ‘কলেরা কনফারেন্স’ নামে পরিচিত হয়। এই কনফারেন্সে ভারতীয় উপমহাদেশকে কলেরার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত থেকে আগত হজযাত্রীদের ওপর কঠোর স্বাস্থ্য নজরদারি ও কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা আরোপ করা হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলেরা মক্কায় ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হলেও ওসমানীয় সালতানাতের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় উপমহাদেশের হজযাত্রীদের মাধ্যমে কলেরার বিস্তার হলেও কোয়ারেন্টিন ক্যাম্প এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানোর চেষ্টা করা হয়।
আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫