দেড় মাসেও খোঁজ মেলেনি মেয়ের, থামছে না বাবা-মায়ের কান্না
Published: 21st, May 2025 GMT
মলিন একটি জামা হাতে নিয়ে কাঁদছিলেন পদ্মা রানী (৩৫), পাশেই পাসপোর্ট সাইজের ছবি হাতে নির্বাক বসে ছিলেন তার স্বামী প্রফুল্ল রাজবংশী (৪৪)। ছবি ও জামাটি তাদের বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কা রাজবংশীর (১৬)। যিনি প্রায় দেড় মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।
আইনের সহায়তা নিয়ে এবং বহু খোঁজাখুঁজি করেও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা। মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই বাড়িটিতে তৈরি হয় আবেগঘন এক পরিবেশ।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই পার্শ্ববর্তী এলাকার এক যুবক উত্যক্ত করে আসছিল প্রিয়াঙ্কা রাজবংশীকে। দিয়েছিল অপহরণের হুমকিও। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ মার্চ বাড়ির পাশ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। গেল দুই মাসেও খোঁজ মেলেনি তার।
এ ঘটনায় গত ২৬ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর অপহরণ ও সহায়তার অভিযোগে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দুই জনের বিরুদ্ধে ধামরাই থানায় মামলা (নম্বর- ২৯) করেন ওই কিশোরীর বাবা মাছ বিক্রেতা প্রফুল্ল রাজবংশী।
এর আগে, গত ১৯ মার্চ ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের কাওয়ালীপাড়া এলাকায় নিজের বাড়ির পাশ থেকে ওই কিশোরী নিখোঁজ হন।
আসামিরা হলেন- ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়নের ভাবনহাটি এলাকার মো.
নিখোঁজ কিশোরী প্রিয়াঙ্কা রাজবংশী (১৬) ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের কাওয়ালীপাড়া এলাকার প্রফুল্ল রাজবংশীর মেয়ে। সে পার্শ্ববর্তী বালিয়া ইউনিয়নের প্রত্যাশা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়তেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মো. আশরাফুল হোসেন দীর্ঘ দিন ধরেই ভুক্তভোগী কিশোরীকে উত্যক্ত ও বিরক্ত করে আসছিল। বিষয়টি জানতে পেরে কিশোরীর বাবা তাকে একাধিকবার নিষেধ করেন ও তার পরিবারের সদস্যদেরও অবহিত করেন। তবে তারা তাকে শাসন না করে বরং উষ্কে দেয়। এর জেরে অভিযুক্ত ওই যুবক কিশোরীকে অপহরণের হুমকি দেয়।
আরও জানা যায়, গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই কিশোরী বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে মুদি জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে যান। সেসময় অভিযুক্ত এক নম্বর আসামি যুবক দুই, তিন ও চার নম্বর আসামির প্ররোচনা ও সহায়তায় ভুক্তভোগী কিশোরীকে অজ্ঞাত সিএনজিতে তুলে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
মেয়ে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তবে না পেয়ে দুই ও তিন নম্বর আসামির বাড়ি গেলে তারা ওই কিশোরীকে ফেরত দেবে বলে জানান। তবে তারা কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এর জেরে তার বাবা বাদি হয়ে মামলা করেন।
নিখোঁজ কিশোরীর বাবা প্রফুল্ল রাজবংশী বলেন, ‘‘ঘরে ঢুকলেই মেয়েটার কথা মনে করে। ঘর ভর্তি তার জামাকাপড়, পড়ার বই, জিনিসপত্র। দেড় মাস ধরে তাকে দেখতে পারছি না। বেঁচে আছে, নাকি মেরেই ফেললো- নাকি পাঁচার করে দিল- কিছুই জানি না। সবার কাছে অনুরোধ আমার মেয়েটাকে আমার কাছে ফেরত এনে দেন। পুলিশ, আদালত আইন ধরলাম। তারা চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনও মেয়েটাকে এনে দিতে পারলো না কেউ। আমি আমার মেয়েটাকে ফেরত চাই।’’ এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিখোঁজ কিশোরীর মা পদ্মা রানী বলেন, ‘‘আমি আমার মেয়েটাকে খুব আদর করে মানুষ করছি। বড় করছি। মেয়েটা দেড়টা মাস ধরে কোথায় আছে জানি না। কিছু করতে পারছি না। বেঁচে আছে নাকি মারা গেল, আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই।’’
স্কুল পড়ুয়া কিশোরী নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রতিবেশীরাও। মিনু রানী নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘মেয়ের মা-বাবা অনেক কষ্ট করে তাকে মানুষ করেছে। এসএসসি পরীক্ষা দিত আর কিছু দিন পর। সেই মেয়েটা এভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল। খুঁজেও পায় না। দরিদ্র পরিবারটা অসহায় হয়ে পড়েছে। মেয়েটা অনেক ভালো ছিল। আপনারা সবাই তাকে একটু খুঁজে বের করে দেন।’’
এ বিষয়ে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কা নিখোঁজের বিষয়ে অত্র থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। একজন এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চলমান আছে। আশা করছি শিগগিরই তাকে আমরা উদ্ধার করতে পারব।’’
ঢাকা/আরিফুল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ওই ক শ র আম র ম য় পর ব র এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে ঠিকাদারকে অপহরণ করে চাঁদা আদায়, গ্রেপ্তার ৩
চট্টগ্রামে ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমে শ্রমিক সরবরাহকারী এক ঠিকাদারকে অপহরণ করে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন-মো. রাশেদুল ইসলাম (৪২), মো. সালাহউদ্দিন (৪০) ও মো. কামরুদ্দিন (৩৭)। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে সীতাকুণ্ড থানা বিএনপির নেতাদের দাবি, তারা বিএনপির কেউ নয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে আকবরশাহ থানার সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের পাক্কা রাস্তার মাথা এলাকায় অবস্থিত বিএসআরএমের কারখানা থেকে চা খেতে বের হন ঠিকাদার পবিত্র চন্দ্র বর্মণ। আগে থেকে উৎপেতে থাকা আসামিরা তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে হালিশহর সাগরপাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে একটি বাসায় আটকে রেখে তার কাছ থেকে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস ব্যবহার করে ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া জোরপূর্বক খালি স্ট্যাম্প ও চেকে স্বাক্ষর নেয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার তিনি থানায় এসে অভিযোগ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন পবিত্র চন্দ্র বর্মণ। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেছেন, আসামিরা তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে বিএসআরএমে শ্রমিক সরবরাহের কাজ করতে পারবেন না বলে হুমকি দেন। তিনি রাজি না হলে তাকে অপহরণ করে টাকা আদায় করা হয়।
জানতে চাইলে আকবরশাহ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ‘চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি রিমান্ডের পরবর্তীতে শুনানির জন্য অপেক্ষমান রেখে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।’
সীতাকুণ্ড থানা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলা হচ্ছে- এই নামে কাউকে আমি চিনি না। তারা বিএনপির কেউ নয়।’