বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণত একাডেমিক দক্ষতা এবং পরীক্ষার ফলাফলের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার ফলে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার বিকাশ অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত থাকে। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব শিশুর শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং পরিণত বয়সে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন, শরীর ও মনের সুস্থতা, স্বাভাবিক বিকাশ, নিজের আবেগ সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারা, অন্যের আবেগ বুঝতে ব্যর্থ হওয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা, কর্মজীবনে ব্যর্থতা এবং সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া ইত্যাদি।
বিশেষভাবে, ছোটবেলা থেকে যদি শিশুর আবেগীয় দক্ষতার সঠিক বিকাশ না হয় বা আবেগীয় দক্ষতা শেখানো না হয়, তবে তাদের জন্য বিদ্যালয়ে আশানুরূপ ফলাফল করা, পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়া এবং সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মূল ভিত্তি পরীক্ষার ফলাফল, সেখানে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব তাদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বলতে নিজের ও অন্যের আবেগ চিহ্নিত করা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতাকে বোঝায়। এটি পাঁচটি মূল উপাদানের মাধ্যমে গঠিত: আত্মসচেতনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহমর্মিতা, সামাজিক দক্ষতা এবং অনুপ্রেরণা। যেসব শিশু ছোটবেলা থেকে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা শেখে, তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে, চাপ সামলাতে পারে এবং সুস্থ সামাজিক জীবনযাপন করতে পারে। যারা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা শেখে না, তারা সহজেই হতাশ হয়ে পড়ে, আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় এবং তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।
বাংলাদেশে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষার ফলাফলের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বিকাশের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের অভাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধার কারণে অনেক ক্ষেত্রে আবেগ প্রকাশকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়, যা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, অনেক অভিভাবক আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত নন, ফলে শিশুর আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা বাড়াতে তারা সহযোগিতা করতে পারেন না।
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আলোচনার উপযুক্ত সময় হতে পারে একাডেমিক পরীক্ষার আগে ও পরে বা দুই পরীক্ষার মাঝে, পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগে অথবা খেলাধুলার সময় যখন শিক্ষার্থীরা এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে যায়। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখি আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে গুরুতর খারাপ প্রভাব ফেলে। যেমন, ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সারাদেশে ৮ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে এবং আরও ৩ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনা হয়তো এক দিনের খবর, কিন্তু এর সংখ্যা হয়তো আরও অনেক বেশি হতে পারে।
এ ছাড়া, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা কম থাকলে সহপাঠীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা যদি আবেগ নিয়ন্ত্রণে অক্ষম হয়, তারা সহজেই সহপাঠীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে অথবা দলগত কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে না, যা ভবিষ্যতে তাদের কর্মজীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগে, যা তাদের ফলাফলকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার চাপ ভালোভাবে সামলাতে পারে এবং ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়।
শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করাই জীবনের একমাত্র সফলতার মানদণ্ড হওয়া কাম্য নয়। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা সুখী ও সফল হওয়ার মানদণ্ডের অন্যতম একটি সূচক। তাই শিশুকে ছোটবেলা থেকেই আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সহমর্মিতা এবং সম্পর্কের গুরুত্ব শেখানো এবং চর্চা করানো উচিত।
মো.
ফর এডুকেশন-হেলথ অ্যান্ড
ওয়েলবিং, ইউনেস্কো
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব দ ধ মত ত র প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
সাম্য হত্যার বিচার না হলে রাজপথ ছাড়ব না: ছাত্রদল সভাপতি
দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। বিচার না হলে রাজপথে থেকে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) বেলা পৌনে ১১টায় সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ,‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘আমার বাড়ি কবরে, প্রশাসন কী করে’ এমন নানা স্লোগান দেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “সাম্য হত্যার সঠিক বিচার এবং মূল ঘাতকরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদল রাজপথ ছেড়ে যাবে না। সাম্য হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করছে। তবে তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা নিজেরাও দ্বিধান্বিত। সত্যিকার অর্থে সাম্য হত্যার ঘটনায় কত জন জড়িত ছিল, আজকের দিন পর্যন্ত তারা শনাক্ত করতে পেরেছে বলে মনে হয়নি৷”
তিনি বলেন, “মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ ডিবি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এখানে অবশ্যই সরকারের দায় রয়েছে৷ তারা আজকের দিন পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। তারা সাম্য হত্যার ঘটনায় সহমর্মিতা দেখায়নি। এমনকি জানাজায় অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করেনি। আমরা তাদের এ ধরনের সদিচ্ছা বা সহমর্হিতা জ্ঞাপন না করার কারণে ঘৃণা প্রকাশ করছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।”
ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাম্য হত্যার সঠিক বিচার না পেলে এবং মূল ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা না হলে রাজপথ ছেড়ে যাবো না। আমরা আরো বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবো। আমরা আজকে তাদের আবার আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই বিষয়ের সুরাহা করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যার বিচার সুনিশ্চিত হচ্ছে না, তাহলে রাষ্ট্রের নাগরিক যারা রয়েছে তাদের পরিণতি কী হতে পারে? সামনে আরো অনেক সংকট রয়েছে৷ অন্তর্বর্তী সরকার নয় মাস সময় পেয়েছে। এই নয় মাসে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃশ্যমান উন্নতি এবং অন্যান্য সেক্টরে দৃশ্যমান সংস্কার আমাদের উপহার দিতে পারেনি। আমরা সেদিকে এখনি যাচ্ছি না। আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাচ্ছি।”
গত ১৩ মে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে একদল দুর্বৃত্ত। রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১২টার দিকে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।
গত ১৪ মে সকালে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৫ মে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঢাকা/রায়হান/ইভা