মেসির জাদুকরী গোল, ঘুরে দাঁড়িয়ে হার এড়াল মায়ামি
Published: 25th, May 2025 GMT
মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) টানা তিন ম্যাচ জয়হীন থেকে বেশ চাপে ছিল ইন্টার মায়ামি। চাপ দূর করতে আজ ফিলাডেলফিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিকে পাখির চোখ করেছিল তারা। লিওনেল মেসিও বলেছিলেন, কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা, নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার কথা। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। আজ হারতে থাকা ম্যাচে কোনো রকমে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে তারা।
ফিলাডেলফিয়ার মাঠ সুবারো পার্কে প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে মায়ামি। এরপর ৮৬ মিনিট পর্যন্ত মায়ামি পিছিয়ে ছিল ৩-১ গোলে। এমন পরিস্থিতিতে দলটি যখন আরেকটি হারের শঙ্কায় কাঁপছিল তখনই এগিয়ে আসেন মেসি।
দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিক গোলে ৮৭ মিনিটে মায়ামির হয়ে ব্যবধান ৩-২ করেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে মানবদেয়াল এড়িয়ে বাঁ পাশের কোনো ঘেঁষে মেসির নেওয়া শটটি ফিলাডেলফিয়া গোলরক্ষক ভিনসেন্ট রিকের হাত লেগেই জালে জড়ায়।
আরও পড়ুনইন্টার মায়ামি কেমন, এবার বুঝতে পারবেন মেসি১৯ মে ২০২৫মেসির এই গোলের পর নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠে মায়ামি এবং যার ফলও পায় তারা। যোগ করা সময়ের শেষ দিকে তেলাসকো সেগোভিয়ার গোলে সমতা ফেরায় মায়ামি। শেষ মুহূর্তের এই গোলে হারতে থাকা ম্যাচটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩-৩ ব্যবধানে ড্র করে ফ্লোরিডার ক্লাবটি।
ঘুরে দাঁড়িয়ে হার এড়ালেও এই ফল মেসিদের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ ৮ ম্যাচের মধ্যে ৭টিতেই এখন জয়হীন মায়ামি। এই ৮ ম্যাচে সব মিলিয়ে দলটি গোল হজম করেছে ২৩টি।
মেসির গোল উদ্যাপন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।