প্রথমবার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতলেন এমবাপ্পে
Published: 26th, May 2025 GMT
গোলসংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও, কিলিয়ান এমবাপ্পে জানেন কোথায় দাঁড়িয়ে মারতে হয়! ইউরোপের সব প্রতিভা আর পরিশ্রমী গোলদাতাদের পেছনে ফেলে কৌশলী ক্যালকুলেশনের খেলা জিতে তিনি হাতে তুলে নিলেন মর্যাদাপূর্ণ ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু’র ট্রফি। যেটা ইউরোপের সেরা লিগে সবচেয়ে কার্যকর ফরোয়ার্ডদের জন্য বরাদ্দ থাকে।
রিয়াল মাদ্রিদে এটি ছিল তার প্রথম মৌসুম। নতুন দেশের মাটিতে মানিয়ে নিতে অনেকেই সময় নেন, কিন্তু এমবাপ্পে যেন রিয়ালের জার্সিতেই নতুন করে জন্ম নিয়েছেন। লা লিগার শেষ ম্যাচে রিয়াল সোসিয়েদাদের জালে জোড়া গোল করে মৌসুমের গোলসংখ্যা ৩১-এ নিয়ে যান।
তবে কাহিনির মোড় ঘোরে এখান থেকেই। স্পোর্তিং সিপির সুইডিশ স্ট্রাইকার ভিক্টর গিয়াকোরেস গোল করেছিলেন ৩৯টি। অথচ তিনি দ্বিতীয়! এমবাপ্পের চেয়ে ৮টি গোল বেশি, তবুও শীর্ষে ফরাসি তারকা। এর রহস্য লুকিয়ে ইউরোপের গোল্ডেন শু পয়েন্টিং সিস্টেমে।
আরো পড়ুন:
কুল-বিএসজেএ মিডিয়া কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
লেভানডোভস্কির শততম গোলে মৌসুম শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন বার্সা
এটি শুধু গোলের সংখ্যা দেখেই বিজয়ী নির্বাচন করে না, লিগের মান অনুযায়ী প্রতি গোলের জন্য পয়েন্ট বরাদ্দ করা হয়। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে (যেমন লা লিগা, প্রিমিয়ার লিগ) প্রতি গোলের পেছনে ২ পয়েন্ট। আর তুলনামূলক দুর্বল লিগে (যেমন পর্তুগাল, বেলজিয়াম) প্রতি গোলের পেছনে ১.
তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ। ২৯ গোল করা এই মিসরীয় তারকা শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করতে পারলেই এমবাপ্পের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারতেন এই গৌরব। কিন্তু ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে গোল পান মাত্র একটিই।
এমবাপ্পে এর মধ্য দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জেতার কীর্তি গড়লেন। এর আগে এই গৌরব অর্জন করেছিলেন কিংবদন্তি হুগো সানচেজ (১৯৮৯-৯০) ও গোল-মেশিন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ২০১০-১১, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ মৌসুমে।
একজনের গোল, আরেকজনের বুদ্ধি; গোল্ডেন শু যেন এবার হেরে গেল সংখ্যার কাছে, জিতে গেল কৌশল আর লিগের শক্তির অদৃশ্য সমীকরণ!
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ক ল য় ন এমব প প এমব প প ইউর প র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার উদ্যোগে স্বস্তি আগাম দরখাস্তে সংশয়
স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্য প্রথমবারের মতো নিয়োগপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে দরখাস্ত চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। গতকাল বুধবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী প্রার্থীদের নির্ধারিত ফরমে ২২ জুনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে দরখাস্ত জমা দিতে বলা হয়েছে।
একই বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বের দরখাস্তকারীদের নতুন করে দরখাস্ত জমা না দিতেও বলা রয়েছে। এতে বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই দরখাস্ত জমা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সার্বিকভাবে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দেশের বিচার বিভাগের জন্য ‘স্বচ্ছতা ও কাঠামোবদ্ধতার নতুন দিগন্ত’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট আইনজ্ঞসহ নিয়োগপ্রত্যাশীরা।
তারা বলছেন, অতীতে বিচারপতি নিয়োগে দলীয় আনুগত্য ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ থাকলেও এবার গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একটি ইনক্লুসিভ ও মেধাভিত্তিক প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে। এর উদ্দ্যেশ্য ব্যাহত হয় এমন কিছু করা উচিত হবে না। এমনটি হলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হবে। তবে কেউ কেউ নিয়োগ
প্রক্রিয়ার কিছু অসংগতির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। তারা মনে করেন, ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব।
গত ২১ জানুয়ারি ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করে সরকার। এর আওতায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৭ সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হয়।
এদিকে, গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগেই বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের তত্ত্বাবধানে দরখাস্ত জমা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে সম্মত হননি। সুপ্রিম কোর্ট-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের দরখাস্তগুলো কাউন্সিল পর্যালোচনা করবে। সংবিধান ও অধ্যাদেশের আলোকেই নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক সমকালকে বলেন, ‘গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিঃসন্দেহে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অত্যাবশ্যক অংশ। বিচারপতি নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া গোপনে সম্পন্ন হতো। এবার একটি স্বচ্ছ ও কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা অবশ্যই ইতিবাচক। কারণ গোপন প্রক্রিয়ার চেয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বরাবরই শ্রেয়। এটি প্রথমবারের মতো কার্যকর হচ্ছে। তাই কিছুটা এলোমেলো হতে পারে। আশা করছি, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের একটি কাউন্সিল দরখাস্ত যাচাই-বাছাই করে যোগ্যতম ব্যক্তিদেরই নিয়োগ দেবেন।’
শাহ্দীন মালিক আরও বলেন, ‘অতীতে রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে অনেক নিয়োগ হয়েছে। সেই সংস্কৃতি ভেঙে গেলে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ হতাশ বা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তবে নিয়োগ কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে এবার যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো। এতে প্রধান বিচারপতি, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, আইনের অধ্যাপক, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিও রয়েছেন।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সমকালকে বলেন, বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে গত দুই যুগে অনেক প্রশ্ন ছিল। যোগ্যতা নিয়েও বিতর্ক ছিল। নতুন অধ্যাদেশে নিয়োগ হলে বিতর্ক হওয়ার সুযোগ কমে যাবে। কারণ নিয়োগপ্রত্যাশীদের কিছু মানদণ্ড বজায় রেখে ভাইভার মুখোমুখি হতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে কাউন্সিলে রাখা হয়েছে। তাদের না রাখা হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হতো।
মনজিল মোরশেদ আরও বলেন, কাউন্সিলকে অবশ্যই সংবিধান ও আইনের আলোকে যোগ্যতা, সততা ও নৈতিকতাসম্পন্ন প্রার্থীদেরই বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে; রাজনীতিকে নয়। তাহলে অবশ্যই বিচার বিভাগ উপকৃত হবে এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সমকালকে বলেন, ‘অতীতে বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যকেই নিয়োগের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হতো। এবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে দরখাস্ত আহ্বানের মাধ্যমে একটি কাঠামোবদ্ধ এবং ইনক্লুসিভ পদ্ধতির সূচনা হয়েছে, যা সৎ, মেধাবী, যোগ্য ও কর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিচার বিভাগে আগ্রহী করে তুলবে।’
রুহুল কুদ্দুস কাজল আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে কোনো অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত, অযোগ্য বা দলবাজ ব্যক্তি বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। আমরা সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানাব, আবেদনকারীদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করে জনগণের মতামত গ্রহণের একটি ব্যবস্থা রাখা হোক। এতে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আগেভাগেই জানা যাবে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকরা মেরুদণ্ড সোজা করে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’
নিয়োগপ্রত্যাশী পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক অধস্তন আদালতের এক জেলা জজ সমকালকে বলেন, ‘গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগেই কাউন্সিল দরখাস্ত গ্রহণ করেছে– এমন তথ্য বিজ্ঞপ্তিতেই উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ কাউন্সিলের সঙ্গে আগেভাগে কারও কারও যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে, যা বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের মূল স্পিরিটের পরিপন্থি।’ ওই জেলা জজ আরও বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগে যেসব দরখাস্ত জমা পড়েছে, সেগুলোর তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করে ঘোষণামূলক বাতিল করা হবে। অন্যথায় পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠতে পারে।’