গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস
Published: 27th, May 2025 GMT
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে হামাস। প্রস্তাবে হামাসের এই সম্মতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দুটি দলে ১০ জন করে জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং এর বিনিময়ে ৭০ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ইসরায়েল গাজার নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং ইসরায়েলে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা বেশ কিছুসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। খবর-এএফপি
গাজায় অব্যাহত হামলা ও অবরোধের মধ্যে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্পেন। রোববার মাদ্রিতে ওই বৈঠকে ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর ২০ নেতা মিলিত হন। সেখানে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেস এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ভয়ংকর পরিস্থিতি চলছে। গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ যুদ্ধ থামাতে হবে।’ বৈঠকে অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা বলেন, ইসরায়েলের সরকারের উচিত গাজায় দুর্ভিক্ষ ও গণহত্যা বন্ধ করা।
গাজায় স্কুলে তৈরি করা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে সেখানে আশ্রয় নেওয়া অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮ জনই শিশু। রয়েছেন বেশ কয়েকজন নারীও। হামলায় আহত ও দগ্ধ হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ। রোববার গভীর রাতে গাজা সিটির দারাজ উপকণ্ঠে ফাহমি আল-জারজাওয়ি স্কুলে ইসরায়েল এ হামলা চালায়। বিস্ফোরণের পরপরই ওই স্কুলে আগুন ধরে যায়। একই দিনে উপত্যকার অন্য এলাকাগুলোতেও হামলা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ৬১ জন নিহত হয়েছেন। এদিকে গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, ফাহমি আল-জারজাওয়ি স্কুলে কয়েকশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যেসব শ্রেণিকক্ষে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেগুলো থেকে আগুনের শিখা বের হচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর হামলাটি চালানো হয়। বিস্ফোরণের পর শিশুদের অনেকেই গুরুতর দগ্ধ হয়।
স্কুলটি অদূরেই বাস করে রামি রফিকের পরিবার। তিনি ফোনে বিবিসিকে বলেন, ‘সর্বত্র আগুন জ্বলছিল। আমি মাটিতে পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। ভয়াবহ দৃশ্য দেখে আমার ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।’ নিহতদের মধ্যে উত্তর গাজার হামাস পুলিশের তদন্ত প্রধান মোহাম্মদ আল-কাসিহ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা রয়েছেন। গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়, এটা জাতিগত নিধনের আরেকটি ধাপ, যা আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন।
আল-আহলি হাসপাতালের পরিচালক ডা.
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এরই মধ্যে নতুন স্থল অভিযানে উত্তর গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নিয়েছে আইডিএফ। গতকাল সোমবার তারা উত্তরের ইন্দোনেশিয়া ও আল-আওদা হাসপাতাল ঘিরে ফেলে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র প রস ত ব ত হয় ছ হয় ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।