আইপিএলে লিগ পর্বের শেষ দিনেও নানা সমীকরণ
Published: 27th, May 2025 GMT
প্লে-অফ পর্বের চার দল নিশ্চিত হয়েছে বেশ কয়েক দিন আগে। ম্যাচের হিসাবে লিগ পর্বের ৭ ম্যাচ বাকি থাকতে। আইপিএল ইতিহাসে এত আগে কখনোই প্লে-অফের চার দল নিশ্চিত হয়নি।
তবে আজ লিগ পর্ব শেষ হতে চললেও সমীকরণ ও হিসাব–নিকাশ এখনো শেষ হয়নি। শীর্ষে চারের কে কোন অবস্থানে থাকবে, কারা প্রথম কোয়ালিফায়ারে এবং কারা এলিমিনেটরে মুখোমুখি, সেটি নির্ধারিত হবে আজ রাতে পন্ত–পুরানদের লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে কোহলি–পতিদারদের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ শেষে।
এরপরও আইপিএলে সমীকরণ শেষ হয়নি। প্লে-অফের লড়াই শেষ হওয়ার পর থেকেই কোয়ালিফায়ারের লড়াই শুরু হয়েছে। যে লড়াইয়ে কাল প্রথম দল হিসেবে পাঞ্জাব কিংস কোয়ালিফায়ার খেলা নিশ্চিত করেছেন।
কাল রাতে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে পাঞ্জাব কিংস। প্রীতি জিনতার পাঞ্জাবের প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলাও নিশ্চিত হয়েছে। সেই ম্যাচ তাদের প্রতিপক্ষ হবে শীর্ষ দুইয়ে থাকা আরেক দল। আম্বানি পরিবারের মুম্বাইয়ের এলিমিনেটরে খেলা নিশ্চিত হয়েছে। এলিমিনেটরে তাদের প্রতিপক্ষ কে হবে, সেটিও জানা যাবে আজ।
আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, লিগ পর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকার এক ও দুই নম্বরে থাকা দল প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলার সুযোগ পায়। তিন ও চার নম্বরে থাকা দলকে খেলতে হয় এলিমিনেটরে।
প্রথম কোয়ালিফায়ারে জেতা দল সরাসরি ফাইনালে উঠে যায়। আর হারা দল ফাইনালে ওঠার আরেকটি সুযোগ হিসেবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলে। সেই ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষ হিসাবে পায় এলিমিনেটরে জয়ী দলকে। স্পষ্টতই কোয়ালিফায়ারে উঠতে পারলে ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, তাদের হাতে দুটি সুযোগ থাকে। অন্যদিকে এলিমিনেটরে থাকা দলকে ফাইনালে উঠতে হলে দুই ধাপ পেরিয়ে আসতে হয়।
আজ লক্ষ্ণৌকে হারাতে পারলেই শীর্ষ দুই নিশ্চিত হবে বেঙ্গালুরুর। তবে তালিকার এক নম্বরে উঠতে হলে পাঞ্জাব কিংসকে ০.৩৭২ ব্যবধানে পেছনে ফেলতে হবে।
আজ হতে যাওয়া লক্ষ্ণৌ–বেঙ্গালুরু ম্যাচের ফলই নিশ্চিত করবে, কে পাঞ্জাবের বিপক্ষে কোয়ালিফায়ারে খেলবে আর কে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে এলিমিনেটেরে খেলবে।
লক্ষ্ণৌ অনেক আগেই প্লে–অফের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছে। ঋষভ পন্তের দল এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার সাতে আছে। আজ কোহলিদের বিপক্ষে জিততে পারলে ছয়ে থেকে এবং বড় ব্যবধানে হেরে গেলে আটে থেকে মৌসুম শেষ করবে।
আরও পড়ুনলাহোরে শিশির নেই, তবু কেন শিশিরে ভয় লিটনদের২ ঘণ্টা আগেআজ লক্ষ্ণৌ–বেঙ্গালুরু ম্যাচের ফল কী হলে কী হবেরয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
পয়েন্ট: ১৭
নেট রান রেট: +০.২৫৫
বাকি ম্যাচ: লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস
এই ম্যাচে লক্ষ্ণৌকে হারাতে পারলেই শীর্ষ দুই নিশ্চিত হবে বেঙ্গালুরুর। তবে তালিকার এক নম্বরে উঠতে হলে পাঞ্জাব কিংসকে ০.৩৭২ ব্যবধানে পেছনে ফেলতে হবে। সে জন্য দরকার—২০০ রান করে ৩৪ রানে জয় অথবা ২০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২১ বল বাকি রেখে জয়।
এই শর্ত পূরণ না হলেও জিতলেই তারা দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। তবে হারলে ১৭ পয়েন্টেই আটকে থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে তারা তৃতীয় হয়ে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে এলিমিনেটরে খেলবে।
লক্ষ্ণৌ আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বাদউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম ক য় ল ফ য় র ন শ চ ত হয় ল গ পর ব এল ম ন ট পর ব র লক ষ ণ ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাথুয়া গ্রামের যে স্কুলে পড়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রাথমিক পাঠ নিয়েছিলেন তাঁর নিজ গ্রাম হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের ‘পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’। ৯২ বছরের পুরোনো এই বিদ্যালয়টির এলাকায় পরিচিত ছিল ‘মহাজন ফইরের স্কুল’ নামে। চাটগাঁইয়া ভাষায় ‘ফইর’ মানে পুকুর। স্কুলের প্রবীণ শিক্ষকেরা বলছেন, এলাকার একটি পুকুরের পাশে হওয়ায় লোকমুখে স্কুলটির এমন নামকরণ।
‘মহাজন ফইরের স্কুল’ বা ‘পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টির জন্য জমি দান করেছিলেন ‘১৯৩৭ সাবান’ কারখানার মালিক নুরালী সওদাগরের ছেলে নেয়ামত আলী। মহাজন পুকুরের পাশে টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ভবন বিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে নাম ছিল ‘পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুল’। পরে ১৯৭৯ সালে দুই কিলোমিটার দূরে গ্রামেরই আরেকটি জমিতে স্কুলটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় একসঙ্গে সরকারি হওয়ার সময় ‘আলামিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলও’ সরকারি হয়। এরপর এটির নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।
অধ্যাপক ইউনূসের শৈশবের বিদ্যালয়
বাথুয়া গ্রাম ঘুরে, একাধিক বাড়িতে গিয়েও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো সহপাঠীর সন্ধান মেলেনি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁর সঙ্গে পড়ালেখা করেছেন যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগই বেঁচে নেই, নয়তো শয্যাশায়ী।
তবে তাঁর সমবয়সী মুহাম্মদ শফি নামের একজনকে পাওয়া যায়। যিনি অধ্যাপক ইউনূসের দেড় বছরের বয়সে ছোট এবং খেলার সঙ্গী ছিলেন। শফি পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর করেছেন জুয়েলারি দোকান। তাঁরও প্রাথমিক পাঠ আলামিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে। ৮৪ বছরের প্রবীণ মুহাম্মদ শফির সঙ্গে তাঁর বাসায় বসে কথা হয়। তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৪৫ সালে গ্রামের স্কুলটিতে ভর্তি হন অধ্যাপক ইউনূস। পড়েন তৃতীয় পর্যন্ত। শফি তাঁর এক ক্লাস নিচে পড়তেন। জুনিয়র হলেও তাঁদের সম্পর্ক ছিল একদম সহপাঠীর মতো। খেলেছেন, মেলায় ঘুরেছেন, নাটকও করেছেন একসঙ্গে।
মুহাম্মদ শফি বলেন, শৈশব থেকেই লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন ইউনূস। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন। ছাত্রাবস্থায় বয়েজ স্কাউটে যোগ দিয়ে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এসব দেখে সবারই মনে হতো, ইউনূস একদিন অনেক বড় হবেন।
কিশোর বয়স থেকে অধ্যাপক ইউনূস ভালো ছবি আঁকতেন বলে জানালেন মুহাম্মদ শফি। তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রতি বরাবরই আকর্ষণ ছিল। ‘বিজ্ঞান সাময়িকী’ নামে একটি পত্রিকাও বের করতেন ১৯৬১ সালের দিকে। ছোটবেলায় দুই ঈদে গ্রামে আসতেন। গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা এবং নাটক করতেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতেও আসতেন। বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় বেড়াতেন সারা গ্রাম। ছাত্রাবস্থায় একবার বক্তৃতা দিতে উঠে মাইক হাতে নিয়ে তিনি হ্যালো বলেননি। বলেছিলেন, ‘মনোযোগ দিন, মনোযোগ দিন’। তার মানে বাংলাচর্চায় ছোটবেলা থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিল।
আলামিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুল যে জায়গায় শুরু হয়, সেখানে দাঁড়িয়ে কথা হয় বাথুয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি রহমত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি কথায় কথায় জানালেন, একই স্কুলে অধ্যাপক ইউনূসের শিক্ষক ছিলেন তাঁর বাবা আবুল হোসেন মাস্টার। বাবা তাঁকে বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূসকে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। নোবেল বিজয়ী হয়ে যখন ২০০৭ সালে গ্রামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি আসেন, তখন ওই অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী ছাত্রকে দেখতে এসেছিলেন তাঁর বাবা। আবুল হোসেন ২০১৩ সালে মারা যান। রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতেন, তাহলে অনেক খুশি হতেন। তাঁর ছাত্র যে আজ দেশের সরকারপ্রধান।’
বিজ্ঞান ও সাহিত্যের প্রতি বরাবরই আকর্ষণ ছিল। ‘বিজ্ঞান সাময়িকী’ নামে একটি পত্রিকাও বের করতেন ১৯৬১ সালের দিকে। ছোটবেলায় দুই ঈদে গ্রামে আসতেন। গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা এবং নাটক করতেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতেও আসতেন। বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় বেড়াতেন সারা গ্রাম। ছাত্রাবস্থায় একবার বক্তৃতা দিতে উঠে মাইক হাতে নিয়ে তিনি হ্যালো বলেননি। বলেছিলেন, ‘মনোযোগ দিন, মনোযোগ দিন’। তার মানে বাংলাচর্চায় ছোটবেলা থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিলমুহাম্মদ শফি, পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেই কোনো স্মৃতি
পূর্ব বাথুয়া আলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানে না, তাদের বিদ্যালয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পড়তেন একসময়। পঞ্চম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তারা অবাক হয়। একাধিক শিক্ষার্থী বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, ‘না, এটা তো জানতাম না।’ তবে তথ্যটি জানার পর তারা সবাই উচ্ছ্বসিত হয়।
বিদ্যালয়ে নেই কৃতী শিক্ষার্থীদের কোনো তালিকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজ কার্যালয়ে বসে প্রধান শিক্ষক নাসিমা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে এখানে যে অধ্যাপক ইউনূস পড়তেন, সেটা অনেকেই জানেন না। আমরা শিক্ষকেরাও জানতাম না। কোনো কারণে আগে এই তথ্য প্রচার হয়নি। আগের শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে কোনো কৃতী শিক্ষার্থীর তালিকা রাখেননি। এখন এমন একটি তালিকা করার কথা ভাবছি।’
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক লাকি পালিত প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা খুবই গর্বের বিষয়। একজন নোবেল বিজয়ীর প্রাথমিক পাঠ নেওয়া বিদ্যালয়ে আমি শিক্ষকতা করছি, এটা ভাবতেই ভালো লাগে।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস