নির্বাচনের সময়সীমা জুন কেন, সন্দেহ বিএনপির
Published: 28th, May 2025 GMT
এত আলোচনা ও দাবির পরও জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নয়, কেন সেটি প্রাকৃতিক বৈরী মৌসুম জুন পর্যন্ত নিতে হবে, সেটা বুঝে উঠতে পারছে না বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এ নিয়ে সংশয়-সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, নানাভাবে নির্বাচন বিলম্ব করার জন্য কিছু দৃশ্যপট তৈরি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সে ঘোষণা না আসায় তাঁরা হতাশ।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলের গুলশানের কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের কাছে নির্বাচন বিষয়ে আমরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলাম। সেটি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার বিষয়ে তাঁর প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গেছে, তাতে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় বিএনপি হতাশ হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ ‘নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য কিছু অসিলা তৈরি করা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যেমন একটা অসিলা হলো (আওয়ামী লীগের) বিচার শেষ করতে হবে। আমরাও তো বিচার চাই। এই আওয়ামী লীগ স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে, তারা আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য কী করেনি!.
গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। সে বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনায় বিএনপি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বৈঠকের তিন দিন পর এ বিষয়ে গতকাল দলীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল বিএনপি। দলটি অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিতে অনড় অবস্থানই প্রকাশ করেছে।
এর আগে গত সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের অধীন ‘টক শো ডিসকাশন গ্রুপ’-এর মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রুদ্ধদ্বার এই সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দুরভিসন্ধির অভিযোগ করেন। বিষয়টি টেলিভিশন ও ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে অংশ নেওয়া আলোচকদের ভালোভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নয়, কেন সেটি জুন পর্যন্ত নিতে হবে। এর মধ্যে নিশ্চয়ই সরকারের কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে।
আমরা আগেও বলেছি নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর মাস উপযুক্ত সময়, এখনো সেই কথার ওপরই আছি।খন্দকার মোশাররফ হোসেন , বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যতারেক রহমানের সভাপতিত্বে এই সভায় ৬০ জন অংশ নেন। টক শোর আলোচকদের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী ছাড়াও সরাসরি বিএনপি করেন না কিন্তু সমর্থন করেন, এমন অনেকে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘টক শো ডিসকাশন গ্রুপ বিএনপির মিডিয়া সেলের অধীন। আমরা প্রতি মাসে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে মতবিনিময় করি। সেখানে আমাদের আলোচকেরা যাতে যে বিষয়ের ওপর আলোচনা করবেন, সে বিষয়ে জেনেবুঝে কথা বলেন, অহেতুক ও অযৌক্তিক কথা না বলেন, এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরামর্শ দিয়েছেন। এবারের মতবিনিময়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।’
টক শো ডিসকাশন গ্রুপের আলোচনায় কয়েকজন বক্তা বিএনপির নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তাঁরা দলীয় প্রধান ও মহাসচিবের বক্তব্য অনুসরণ করার কথা বলেছেন।
জুন মাস নির্বাচনের উপযুক্ত সময় নয়প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে সময়সীমা দিয়েছেন, সেটি নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় বলে মনে করে বিএনপি।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বর মাস উপযুক্ত সময়, এখনো সেই কথার ওপরই আছি।’ এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ডিসেম্বরের পর ফেব্রুয়ারিতে রোজা চলে আসবে। এরপর বর্ষা। এসএসসি ও এইচএসসির মতো বড় পাবলিক পরীক্ষাগুলো আছে। সে জন্য ওই সময়টা নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা। ঢাকা, ২৭ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপয ক ত সময় ব এনপ র ন ত ড স ম বর র সরক র র র জন য সদস য সময় ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের একটি ধারা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধারাটিতে অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা উল্লেখ রয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।
২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনের ১৮ ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ধারাটি বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ করা না হলে আদালত ওই অপরাধ আমলে গ্রহণ করবে না।
ওই ধারার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান গত মাসের শেষ দিকে রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী।
রুলে অপরাধের অভিযোগ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা আরোপ–সংক্রান্ত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৮ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুলের বিষয়টি জানিয়ে আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এসেছে। আইনের ১৮ ধারায় সময়সীমা উল্লেখ করে দুই বছরের মধ্যে মামলা না করতে পারলে কোনো আদালত অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারবে না বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিচার করতে পারবে না। যে মেয়েটির ১১–১২ বছরে বিয়ে হয় তারপক্ষে দুই বছরের মধ্যে মামলা করা সব সময় সম্ভব না–ও হতে পারে। তখন সে নিজেই শিশু। দুই বছর পর আদালত বিচার করতে পারবে না এবং সময়সীমা আইনে বেঁধে দেওয়া সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী—এমন সব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।