দুই দশকে ‘লালমাটির সবুজ ক্যাম্পাস’, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন
Published: 28th, May 2025 GMT
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পেরিয়ে দুই দশকে পা রাখল পাহাড়, অরণ্য আর লালমাটির সবুজ ক্যাম্পাসখ্যাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আজ বুধবার দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’। এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের কোলে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আজ পথচলার ১৯ বছরপূর্ণ হয়েছে; দুই দশকে পদার্পণ করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এ সময়ে নানা অর্জন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদানের মাধ্যমে স্বমহিমায় ভাস্বর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, পথচলার দুই দশকে পা দিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু থেকেই বিভিন্ন সংকট আর সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান করে নিতে পারবে এটি।
এবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হবে জানিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, আজ সকালে পায়রা ও বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে কাটা ও দুপুর ১২টায় আলোচনা সভা ও বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা আছে। এ ছাড়া আরও কিছু আয়োজনের কথা আছে। এমন পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে উপাচার্য হায়দার আলী বলেন, ‘গৌরবের ১৯ বছর পার করে এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা এটিকে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
২০০৬ সালের ২৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০০৭ সালের ২৮ মে ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু হয়। কুমিল্লা নগর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়ের কোলে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান। উঁচু-নিচু টিলা আর লালমাটির ক্যাম্পাসে বর্তমানে ৭ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর কোলাহলে মুখর থাকে ক্যাম্পাসটি। বর্তমানে ১৯টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী আছেন ৭ হাজার ১৩০ জন এবং শিক্ষক আছেন প্রায় ৩০০ জন। শিক্ষার্থীদের জন্য আছে ৫টি আবাসিক হল। শিক্ষকদের জন্য আছে ২টি ডরমিটরিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
৫০ একর জায়গার ওপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও ক্যাম্পাসের সম্প্রসারণ হয়েছে। সম্প্রসারণসহ অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন ক্যাম্পাসের আয়তন বেড়েছে ১৯৪ দশমিক ১৯ একর। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট আয়তন ২৪৪ দশমিক ১৯ একর ছাড়িয়েছে। ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণসহ অধিকতর উন্নয়নে এক হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২২ সালে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের কাজ চলমান। এটির বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রকল্পের অধীন সম্প্রসারণকৃত ক্যাম্পাসে ৪টি ১০ তলা একাডেমিক ভবন, দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন, ৪টি ১০ তলা আবাসিক হল, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, ১০ তলা ডরমিটরি, কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, স্কুল বিল্ডিং, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, অডিটরিয়াম, ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্স, মেডিকেল ও ডে-কেয়ার সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ, স্মৃতিস্তম্ভ, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, পারিবারিক বিনোদন এলাকা উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ রাস্তাসহ আরও বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণকাজ চলমান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র দ ই দশক ক ভবন
এছাড়াও পড়ুন:
২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী
অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।
পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।
ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।