আজ ২৮ মে, বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস। এই বিশেষ দিনে, মেয়েদের মাসিককালীন স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ গোলটেবিল বৈঠক। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণির অংশীজনেরা। যেখানে আলোচনার বিষয় ছিল ‘সংক্রমণমুক্ত ও নিরাপদ পিরিয়ড নারীর অধিকার’।

প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ বৈঠকে আলোচনা করেন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা.

সালমা রউফ। তাঁর কথায় উঠে আসে মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক নানা দিক। ডা. সালমা রউফ বলেন, ‘নারীর স্বাস্থ্যশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হলো সচেতনতা। মাসিককালীন নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিষ্কার–পরিছন্নতা নিয়ে পরিবারের খোলামেলা আলোচনা খুব একটা হয় না। মাসিককালীন করণীয় সম্পর্কে মায়েরা তাঁদের মায়েদের থেকে যা শিখেছেন, তা–ই তাঁরা সন্তানদের শেখান। এ শিক্ষা ও পদ্ধতিগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কি না, সে বিষয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা থাকে না। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়গুলো শেখানোর আয়োজন আমরা এখনো করতে পারেনি।’

ডা. সালমা রউফ আরও বলেন, ‘মাসিক–সংক্রান্ত কোনো সমস্যা না হলে শুধু স্বাস্থ্য সুরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে কেউ ডাক্তারের কাছে আসেন না। মাসিককালে কাপড় ব্যবহার করেন জানতে পারলে আমরা তাঁকে তা না ব্যবহার করতে জানাই। স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পরামর্শ দিই। মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হলে স্কুলগুলোয় মেয়েদের এ বিষয়গুলো জানাতে হবে।’

প্রচলিত কুসংস্কার থেকে মুক্তি পেতে করণীয় সম্পর্কে ডা. সালমা রউফ বলেন, ‘এ বিষয়ে পরিবারগুলোকে সচেতন করতে গণমাধ্যমের সহায়তা নিতে হবে। মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে মীনা কার্টুনের মতো করে কোনো প্রচারণা করা যেতে পারে। তাতে এ বিষয়গুলো নিয়ে ট্যাবুগুলো ভাঙবে। মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যে আলোচনা করা যায়, সে বিষয়ে মানুষ সচেতন হবে। এ–সংক্রান্ত ট্যাবুগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হলে ভেতর থেকে কাজ করতে হবে।’

ডা. সালমা রউফ আরও বলেন, ‘নারী প্রজননতন্ত্র নিজেই নিজের সুরক্ষা নিতে পারে। এখানে কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যেগুলো অ্যাসিড উৎপাদন করে। ফলে নারীর যৌনাঙ্গের পিএইচের মান অ্যাসিডিক থাকে। অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়া এখানে বৃদ্ধি পেতে পারে না। আর সুগন্ধিযুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিনে কেমিক্যাল থাকে। এসব ব্যবহারের ফলে নারী প্রজননতন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই সুগন্ধি সাবান বা সুগন্ধিযুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা উচিত নয়। সুগন্ধিযুক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলোর দামও বেশি হয়। যেহেতু নারীরা একটি ন্যাপকিন পরেই দীর্ঘক্ষণ কাটান। যার ফলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।’

অধ্যাপক ডা. সালমা রউফ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য স রক ষ ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি

মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’

এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’

ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’

আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫

এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’

ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।

আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫

চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।

২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।

নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’

আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ