প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের সঙ্গে বৈঠকের পর চলমান কর্মবিরতির কর্মসূচি আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ। তিন দফা দাবিতে গত সোমবার থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা।

আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো—প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করা পরামর্শক কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি।

কর্মবিরতি চলার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। এ সময় মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে সংগঠনের পক্ষে সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বৈঠকের বিষয়বস্তু ও কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।

সংগঠনটি জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রায় চূড়ান্ত। আর ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন কার্যক্রম চলমান এবং দ্রুততম সময়ে এই বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে বলে তারা আশা করছে। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের শুরুর পদের বেতন ১১তম গ্রেডের প্রস্তাব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এবং খুব শিগগির শিক্ষকনেতাদের সমন্বয় করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হবে।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ বলছে, শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের প্রতি সহযোগী মনোভাব রেখে তারা চলমান কর্মসূচি আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময়ে দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।

আরও পড়ুনদাবি আদায়ে কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা২৬ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহক র চলম ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোথাও কর্মবিরতি, কোথাও পাঠদান

চাকরির শুরুতে ১১তম বেতন গ্রেড নির্ধারণসহ তিন দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। তবে সব বিদ্যালয়ে তা হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি হচ্ছে, আবার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেখানে পড়াশোনার ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হলেও সরকারের উচ্চমহল বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আবার কোথাও কোথাও শিক্ষা কর্মকর্তাদের বাধার কারণে শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালনে বাধার মুখে পড়েছেন।

আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো—প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করা পরামর্শক কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন ও প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি।

কোথাও পাঠদান, কোথাও কর্মবিরতি

আজ রাজশাহী নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষকেরা অফিসকক্ষে বসে দাপ্তরিক কাজ করছেন। কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এলেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হচ্ছে না।

একজন সহকারী শিক্ষক বললেন, প্রাথমিক শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। অথচ এখানেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের।

অবশ্য নগরের বিনোদপুরে অবস্থিত মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছে। শিক্ষার্থী উপস্থিতি স্বাভাবিক। প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা জেসমিন জানান, বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। কেউ কর্মবিরতিতে নেই।

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বৌলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। সহকারী শিক্ষক নূরুল ইয়াহিয়া শাহীন তৃতীয় শ্রেণির কক্ষে বসে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অন্যান্য দিনের মতোই বিদ্যালয়ে এসেছে। তারা যাতে শ্রেণিকক্ষে বসে হট্টগোল না করে, সে জন্য তাদের পাঠদানের কাজ দিয়ে রেখেছি। তিন দফা দাবিতে তাঁরা আন্দোলনে আছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে যাতে কোনো রকম দাগ না কাটে, সে জন্য তাদের বিষয়টি বুঝতে দেওয়া হচ্ছে না।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ধর্মপাশা উপজেলায় ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়েছেন ১৫টি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের ডি এল লাহিড়ী সরকারি শহর পাঠশালা, সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয় ও শোলাকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে সকাল থেকে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চলছে।

নড়াইলের বিদ্যালয়গুলোতে কর্মবিরতির তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নড়াইল পৌরসভার শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভওয়াখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সদর উপজেলার নাকশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আউড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পংকবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

নাকশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের যে দাবি, সেটি অবশ্যই ন্যায্য দাবি। দাবির সঙ্গে তাঁরা রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথাও চিন্তা করে তাঁরা ক্লাস নিচ্ছেন।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে আজ
  • প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোথাও কর্মবিরতি, কোথাও পাঠদান