অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আমাদের নেতা রাষ্ট্রের, সরকারের, বিএনপির এবং দেশের মানুষের জন্য স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে, যদি আপনারা তারিখ ঘোষণা না করেন, আমরাই তারিখ ঘোষণা করবো। 

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

দুদু বলেন, বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দল মাঠে আছে। তারেক রহমান এখনও চূড়ান্ত কথাটা বলেননি, যখন চূড়ান্ত কথাটা বলবেন, বাংলাদেশ স্থবির হয়ে যাবে। তখন বুঝতে পারবেন। 

নতুন গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কেউ কেউ বিএনপির সমালোচনা করে বলে- ট্রাক সরাতে পারেননি; তারা তো বলে না, গত ১৭ বছরে বিএনপির পৌনে ৫ হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, গুম বা নিখোঁজ হয়েছেন। বিএনপি ১৭ বছর যদি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে না থাকতো, তাহলে এক মাসের আন্দোলনে হাসিনার পতন হতো না।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে দুদু বলেন, আমাদের নেতা বলেন, সবার আগে বাংলাদেশ। আর এরা সবার আগে গ্রামীণ ব্যাংক, সবার আগে ট্যাক্স দিব না, সবার আগে লাইসেন্স চাই, লোক পাঠাবো। আমার মনে হয়, তিনি ব্যবসা করার জন্যই জাপানে গিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রের আমন্ত্রণে এখনও পর্যন্ত কোনো দেশে যাননি। 

জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে দুদু আরও বলেন, তারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে, অথচ তারাই ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে ফেলেছে। আমি নিশ্চিত, এরা নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাদের স্ত্রীরা ধানের শীষে ভোট দিবে। 

সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা। বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগাঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও