ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় জুটি কোয়েল মল্লিক ও দেব। ‘পাগলু’, ‘পাগলু টু’, ‘মন মানে না’, ‘হিরোগিরি’, ‘রংবাজ’-এর মতো একাধিক সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছে তারা। এ জুটির অনস্ক্রিন বন্ধুত্ব অফ স্ক্রিনে অটুট।

কোয়েল অভিনীত ‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’ সিনেমা আজ মুক্তি পেয়েছে। এ উপলক্ষে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রঞ্জিত মল্লিকের কন্যা। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে দেবের সঙ্গে শুটিংয়ের স্মৃতিচারণ করেছেন কোয়েলে।

কোয়েল মল্লিক বলেন, “এটা অন‌্যরকম এক অভিজ্ঞতা। এই সিনেমায় যেমন রাজস্থানের ঠান্ডায় সোয়েটার পরতে পেরেছি, সেটাই যেন একটা বিলাসিতা। আর দশ বছর আগে, ঠান্ডায় সুইজারল‌্যান্ডে হাড় কাঁপানো শীতে ছোট জামা-স্কার্ট পরে হাসছি, গাইছি, নাচ করেছি। আর শট কাট হওয়ার পরই কম্বলের তলায় ঢুকেছি। গরম জল, কফি খেয়েছি। এটাও অভিজ্ঞতা।”

আরো পড়ুন:

কলকাতায় এলেই মনে হয়, মায়ের বাড়ি এলাম: কাজল

২৮৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে অজয়ের সিনেমার আয়

ঠান্ডায় দেবের সঙ্গে শুটিংয়ে অভিজ্ঞতা জানিয়ে কোয়েল বলেন, “অনেকবার সুইজারল‌্যান্ডে গান শুট করেছি, আমরা প্রায়ই বলতাম এবার অন্তত ঠান্ডায় শুট করিও না। দেব হয়তো জিনসের নিচে তিনটা প‌্যান্ট পরে কাঁপছে আর আমি স্কার্ট পরেও হাসছি। সবসময় বলতাম, ‘খবরদার আমার সামনে কাঁপবে না। মাঙ্কি ক‌্যাপ পরে, বহুত ঠান্ডা হ‌্যায় বলবে না।’ এটা অন‌্যরকম থ্রিল। এখন স্মৃতি হাতড়ালে মনে হয় এটা কোন যুগের কোয়েল!”

প্রায় সাত বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১৩ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কোয়েল মল্লিক ও নিশপাল সিং। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম সন্তানের জন্ম দেন কোয়েল। পুত্রসন্তানের নাম রেখেছেন কবীর। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর কন্যা সন্তানের মা হন এই অভিনেত্রী।

স্বামী-সন্তান নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন কোয়েল। ফলে চলচ্চিত্রের কাজ কমিয়ে দেন। প্রায় দুই বছর পর ‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’ সিনেমার মাধ্যমে প্রেক্ষাগৃহে ফিরলেন কোয়েল। এতে তার সহশিল্পী হিসেবে রয়েছেন পরমব্রত চ্যাটার্জি।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ