টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ কুমিল্লা শহর, জনজীবনে দুর্ভোগ
Published: 30th, May 2025 GMT
টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে কুমিল্লা শহরের চেহারাই বদলে গেছে। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি—সবখানেই হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে আছে। ফলে, জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, নজরুল এভিনিউ, সিটি কর্পোরেশন গেট, টমছম ব্রিজ, চকবাজার, ঝাঁপানীপুর, মনোহরপুর, রেজিস্ট্রি মাঠ, শাসনগাছা, ঠাকুর পাড়া, আশোকতলা ও বড় শালগাঁওসহ বহু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা ঠেলে চলতে হচ্ছে চালকদের। অনেক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে যেতে পারেনি। শ্রমজীবী মানুষরা যেতে পারেননি কর্মস্থল ও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
শহরের নিচু এলাকায় ভবনগুলোর নিচতলা, দোকান ও অফিসে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি। ড্রেন উপচে পড়া আবর্জনা পানির সঙ্গে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে, বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
নাগরিকদের অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষা এলেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। কিন্তু, সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নেই কার্যকর উদ্যোগ। অপরিকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও দখল হওয়া খালগুলোই বারবার জলাবদ্ধতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
যদিও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন দাবি করছে, পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ চলছে। বাস্তবে এর তেমন কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় টানা কয়েকদিন ধরে জমে আছে পানি।
কুমিল্লা নগরীর কমপক্ষে ১০ জন বাসিন্দা রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদককে বলেছেন, দ্রুত ড্রেন সংস্কার, খাল উদ্ধার এবং আধুনিক ও দীর্ঘমেয়াদি ড্রেনেজ পরিকল্পনা ছাড়া এ সমস্যার কোনো সমাধান নেই। জলাবদ্ধতা যেন কুমিল্লা শহরের স্থায়ী ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ আল-আমীন খান বলেছেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল ও জলাধারগুলোকে প্রাকৃতিক নকশায় ফিরিয়ে আনতে হবে। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না। সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা.
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভুঁইয়া বলেছেন, “খাল খননের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়েছে। খুব শিগগির কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি ড্রেনগুলো পরিষ্কারের জন্যও কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।”
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. সৈয়দ আরিফুর রহমান বলেছেন, “বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি আরো দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে।”
ঢাকা/রুবেল/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কতটা এগিয়ে চীন
চীন চলতি মাসে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছে। সেখানে যুদ্ধজাহাজ–বিধ্বংসী হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনী করেছে তারা। এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে একটি পরোক্ষ সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোনো সংঘাত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বিমানবাহী রণতরি সমুদ্রের তলদেশে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী হিসেবে শুধু চীনই নয়, রাশিয়াও এ ধরনের অস্ত্র তৈরিতে বিনিয়োগ করছে। তারাও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে। উচ্চগতি ও চলাচলের বিশেষ ক্ষমতার কারণে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে আদর্শ অস্ত্র বলে বিবেচনা করা হয়।
তবে চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরিতে এখনো পিছিয়ে আছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটি এ ক্ষেত্রে উন্নতি করছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) জ্যেষ্ঠ ফেলো টম কারাকো বলেন, ‘আমরা যখন সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিলাম, তখন চীন এ–জাতীয় প্রযুক্তি নিয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করেছে। তারা এ বিষয়ে এগিয়ে রয়েছে ঠিক। তবে আমরাও দ্রুত উন্নতি করছি।
হাইপারসনিক অস্ত্র শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে এগুলোর বিশেষ সামরিক সুবিধা রয়েছে। তবে এতে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তা অনেক সময় নকশায় সমস্যার সৃষ্টি করে।
বিশ্বজুড়ে এখন হাইপারসনিক অস্ত্রের দুটি প্রধান ধরন নিয়ে গবেষণা চলছে। এর একটি হলো রকেটচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, আর অন্যটি হলো হাইপারসনিক গ্লাইড যান। এগুলো বায়ুমণ্ডলে উৎক্ষেপিত রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হাইপারসনিক গতিতে চলে।
এ দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ও গতিপথ পরিবর্তনের ক্ষমতা রয়েছে। ফলে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে এগুলোকে আটকানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের আদর্শ লক্ষ্যবস্তু হলো অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থান বা এমন জায়গা, যেখানে আঘাত করতে সঠিক সময় গুরুত্বপূর্ণ। যেমন বিমানবাহী রণতরি বা উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো যেতে পারে।
চীন ও রাশিয়া হাইপারসনিক অস্ত্রপ্রযুক্তিতে উন্নতি করছে বলে মনে করা হয়। তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অতিরঞ্জিত দাবির কারণে তাদের প্রকৃত সামর্থ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
৩ সেপ্টেম্বরের সামরিক কুচকাওয়াজে চীন বিভিন্ন ধরনের হাইপারসনিক অস্ত্র প্রদর্শন করেছে। এগুলোর মধ্যে ওয়াইজে-১৭, ওয়াইজে-১৯ এবং ওয়াইজে-২০ ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিতে বেইজিং এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
এসব ক্ষেপণাস্ত্রের সব নকশা এখনো পরীক্ষা–নিরীক্ষার ধাপ অতিক্রম করেনি। বিভিন্ন সময় সামনে আসা তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে চীন তাদের সেনাবাহিনীতে ডিএফ-জেডএফ হাইপারসনিক গ্লাইড যান সরবরাহ শুরু করেছে।
এ নিয়ে চীনের গভীর মনোযোগের আরেকটি নিদর্শন হলো হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষায় তাদের ব্যাপক বিনিয়োগ। ২০১৮ সালে তৎকালীন জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মাইকেল গ্রিফিন এক সম্মেলনে বলেছিলেন, গত দশকে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন ২০ গুণ বেশি হাইপারসনিক পরীক্ষা চালিয়েছে।
রুশ বিমানবাহিনীর মিগ-৩১ যুদ্ধবিমানে বসানো হয়েছে কিনঝাল হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র