দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে বের হওয়া স্ক্র্যাপ ভর্তি ট্রাক আটক করে চাঁদাবাজির অভিযোগে পার্বতীপুর উপজেলা নাগরিক পাটির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক শিক্ষানবিস আইনজীবী তারিকুল ইসলামকে (৪০) আটক করেছে সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার রাতে পার্বতীপুর-মধ্যপাড়া সড়ক থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক তারিকুল ইসলাম উপজেলার পশ্চিম রাজাবাসর গ্রামের প্রয়াত মাহমুদুল সরকারের ছেলে।

জানা যায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পরিত্যক্ত লোহার স্ক্র্যাপ দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করে সেনাবাহিনী পরিচালিত সেনাকল্যাণ সংস্থা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্ক্র্যাপ ভর্তি দুটি ট্রাক খনি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ট্রাক দুটি খনি থেকে কিছুদূর গেলে কিছু লোকজন ট্রাক দুটি আটক করে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ট্রাকে উঠে চালককে জিম্মি করে চাঁদা দাবি করে। খবর পেয়ে যৌথবাহিনী ও র‌্যাব ট্রাক উদ্ধার ও ঘটনাস্থলে থাকা নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক তারিকুল ইসলামকে আটক করলে অন্যরা পালিয়ে যান।

সেনাকল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধি ও লেবার ফোরম্যান মো.

আরিফুল ইসলম সমকালকে জানান, সেনাকল্যাণ সংস্থা টেন্ডারের মাধ্যমে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কিছু স্ক্র্যাপ মালামাল ক্রয় করে। গোপনে জানতে পারি স্ক্র্যাপ ভর্তি ট্রাকগুলো রাস্তায় আটক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই বিষয়টি আমি ঘটনার পূর্বেই সেনাকল্যাণ সংস্থাকে জানিয়ে রাখি। যাত্রাপথে সেনাকল্যাণ সংস্থার লোগো লাগানো ট্রাকগুলো রাস্তায় আটকে চাঁদা দাবি করে ৫০-৬০ জনের একটি দল। বৈধ মালামালে চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তারা ট্রাক চালকদের জিম্মি করে অন্য রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেনাবাহিনী ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে ট্রাক উদ্ধারসহ তারিকুল ইসলামকে আটক করে। 

এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ভবানীপুর এলাকার সুরুজ আহম্মেদ বলেন, কয়লা খনি থেকে অবৈধভাবে স্ক্র্যাপ বাইরে যাচ্ছে তথ্যে আমরা ছাত্র-জনতা ও সমন্বয়করা ট্রাক দুটি আটক করি। এতে পতিত সরকারের কিছু লোকজন আমাদের ধাওয়া দেয়। পরে আমরা উপজেলা সংগঠক তারিকুল ইসলামকে ডেকে আনি। সেনাবাহিনী আমাদের কথা না শুনে সংগঠক তারিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাকে মুক্তি না দিলে আমরা আন্দোলনের ডাক দিব।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মো. জাফর সাদিক বলেন, বৈধ টেন্ডার ছাড়া কোনো ধরনের স্ক্র্যাপ মালামাল খনি থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। টেন্ডারের মাধ্যমেই সেনাকল্যাণ সংস্থা স্ক্র্যাপ মালামাল কিনেছে, যা খনি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দপ্তর অবগত আছে।

পার্বতীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, খনি থেকে টেন্ডারে পাওয়া স্ক্র্যাপ মালামাল নিয়ে যাওয়ার পথে দুটি ট্রাক গতিরোধ করে চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পার্বতীপুরে দায়িত্বরত সেনাক্যাম্পের সদস্য ও র‌্যাব দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারিকুল ইসলাম নামের একজনকে আটক করে। এ ঘটনায় থানায় ১৬ জনের নামে মামলা করেছেন সেনাকল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। পলাতকদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট স ন কল য ণ স স থ ত র ক ল ইসল ম বড়প ক র য় স গঠক

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় আরেক মামলা দায়ের

গোপালগঞ্জে গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের ৪৪৭ জন নেতাকর্মি ও সমর্থকদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং পাঁচ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় মোট আসামি ৫ হাজার ৪৪৭ জন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মতিয়ার মোল্লা বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এ মামলাটি দায়ের করেন। 

গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছে, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, গোপালগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলী (লেকু), জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মাসুদ রানা, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতীশ রায়, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান (বিটু), শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান জিমি।

আরো পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দু পাড়ায় হামলা: গ্রেপ্তার ৫ জন আদালতে

শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অবরোধ

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জুলাই এনসিপির গোপালগঞ্জ পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের সমাবেশ স্থলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। আসামিরা রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। সরকারি কাজে বাধাদান ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর জখম করে।

এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ও হত্যার ঘটনায় মোট ১৩টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় এসব মামলা করা হয়। ১৩টি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ হাজার ৬৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ২৬ জুলাই হামলায় নিহত রমজান মুন্সীর ভাই জামাল মুন্সী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এ মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। গত ১৯ জুলাই রাতে ৪ যুবকের নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করে। ৪ হত্যা মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি ও জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় ২টি, কোটালীপাড়া থানায় ১টি ও টুঙ্গিপাড়া থানায় ১টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ১ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাড়ায় পাঁচ জনে। আহত হয় সাংবাদিক ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক মানুষ। 

ঢাকা/বাদল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ