মেঘের তর্জন-গর্জন, মুহুর্মুহু বজ্রপাত, ভারী বর্ষণ, আর পাহাড়ি ঢল। মা মাছের ডিম ছাড়ার জন্য এমন পরিবেশ দরকার। এবার ঘটেছে তাই। অনুকূল পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদায় ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। কয়েক বছর ধরে মা মাছ সমানতালে ডিম ছাড়ছিল না। গত মৌসুমে তো তেমন ডিম পাওয়া যায়নি। ফলে হালদার পোনা সংগ্রহকারীদের মধ্যে ছিল হতাশা। এবার বিপুল পরিমাণে ডিম পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটছে। প্রাথমিক হিসাবে সংগ্রহ করা ডিমের পরিমাণ ১৪ হাজার কেজির বেশি।
আগে থেকে ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন সংগ্রহকারীরা। পরিবেশ-প্রকৃতি দেখে তারা বুঝে যান– মা মাছ ডিম ছাড়বে। ফলে জাল, বালতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে নৌকায় করে হালদায় নেমে পড়েন তারা। এক পর্যায়ে তাদের উৎকণ্ঠার অবসান ঘটে। মধ্যরাতে ডিম ছাড়তে থাকে মা মাছ। শুরু হয় ডিম সংগ্রহের উৎসব। প্রতিযোগিতা দিয়ে চলে সংগ্রহের কার্যক্রম। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তিনশ নৌকা নিয়ে মাছের ডিম সংগ্রহ করেন তারা।
বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামের হালদার মদুনাঘাট ছায়ার চর থেকে রামদাস মুন্সির হাট, আজিমের ঘাট, মাচুয়াগোনা, কাগতিয়া, আইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহীঘাট, নোয়াহাট, কেরামতলীর বাঁক ও অঙ্কুরিঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন নদীর পাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং ট্র্যাডিশনাল মাটির কুয়াগুলোতে ডিম পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পেশাদার সংগ্রহকারীরা। শুরু থেকে ডিম সংগ্রহের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি।
হালদা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ২টার দিকে জোয়ারের সময় হালদার আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। পরে ডিমগুলো হালদার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিলেন, তারা বেশি পেয়েছেন। সংগ্রহকারীরা গড়ে আড়াই বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছেন।’
হালদার সিপাহীঘাট কুম এলাকার প্রবীণ ডিম আহরণকারী মো. ইদ্রিস বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীতে অবস্থান করি। রাত ২টার দিকে ডিম ছাড়ে মা মাছ। আমি দুই থেকে তিন বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। এর আগে ২০০ গ্রাম নমুনা ডিম সংগ্রহ করি।’
সংগ্রহকারী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা নদীতে ১০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতিটি নৌকায় গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম পেয়েছি। রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ মাছের ডিম রয়েছে।’ হালদার ডিম আহরণকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম জানান, ছয়টি নৌকা ও দুটি বাঁশের ভেলায় ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন তিনি।
সমকালের রাউজান সংবাদদাতা প্রদীপ শীল জানান, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করে দুই পারের মানুষ। রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, প্রথমে দুই দফা নমুনা ডিম ছাড়ে মাছ। রাতে পুরোদমে ডিম ছাড়ে। রাউজান ও হাটহাজারী অংশে ৭০০ ডিম সংগ্রহকারী তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেন।
সমকালের হাটহাজারী সংবাদদাতা মো. মহিন উদ্দিন জানান, বংশপরম্পরায় ডিম সংগ্রহ করেন হালদা পারের সংগ্রহকারীরা। তারা রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের ডিম সংগ্রহ করে সরকারি হ্যাচারি, মাটি ও সিমেন্টের কুয়ায় রেণু ফোটাবেন। এ কাজে সময় লাগবে চার দিন। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া এসব রেণুর পোনা দ্রুত বড় হয় বলে এটি সারাদেশের মাছচাষিদের প্রথম পছন্দ। তাই দামও থাকে বেশি।
ডিম ছাড়ার পর ক্লান্ত মা মাছগুলোকে যাতে কেউ শিকার করতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হালদায় বাড়তি লোকবল নিয়োগ করে নজরদারিতে রেখেছে। এজন্য কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসনও।
হাটহাজারীর গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘এবার ভালো ডিম সংগ্রহ হয়েছে। চার দিন পর রেণু ফুটবে। দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখবেন ডিম সংগ্রহকারী ও হ্যাচারি মালিকরা।’
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে কিছু নমুনা ডিম ছাড়া আর কোনো ডিম ছাড়েনি মা মাছ। ২০২৩ সালে কমবেশি ১৪ হাজার কেজি ডিম পাওয়া যায়। এর আগে ২০২২ সালে
প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি ও ২০২১ সালে
সাড়ে ৮ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। ২০২০ সালে হালদায় রেকর্ড ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ম স গ রহক র স গ রহক র র স গ রহ র পর ব শ মৎস য সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
গরুর হাটে ছাগলকাণ্ডের ছায়া, দুশ্চিন্তায় বড় খামারিরা
গত বছর ঈদুল আজহার আগে ১২ লাখ টাকার এক ছাগল দেশজুড়ে শোরগোল ফেলেছিল। রাজধানীর ‘সাদিক এগ্রো’ থেকে ছাগলটি কিনেছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছেলে। মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ছাগল নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। ছাগলকাণ্ড ঘিরে যেন বেরিয়েছিল কেঁচো খুঁড়তে সাপ! দেশজুড়ে তৈরি হয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ। একে একে বেরিয়ে আসে দুর্নীতবাজ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের নানা অপকীর্তির তথ্য।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বছর ঘুরে আবার কোরবানির ঈদ সামনে। তবে এবার দামি গরু কিংবা ছাগলের বিজ্ঞাপনের চাকচিক্য নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই কোরবানির পশু নিয়ে বাগাড়ম্বর। খামারে খামারে নেই আগের সেই রোশনাই। পশুর হাটে হাটে এক ধরনের সতর্কতা, শঙ্কা। যার পেছনে রয়েছে ছাগলকাণ্ডের ছায়া। এ বাস্তবতায় বড় খামারির মধ্যে আছে উদ্বেগও।
এবার কোরবানির ঈদ ৭ জুন। প্রস্তুত হচ্ছে পশুর হাট। তবে বড় গরু নিয়ে বেকায়দায় আছেন খামারিরা। যেসব বড় গরু সাধারণত বিত্তবানের কাছে বিক্রি হতো, সেসব ক্রেতার অনেকেই আত্মগোপনে। পাশাপাশি আতঙ্কে আছেন ধনাঢ্য ক্রেতারাও। ফলে এবার চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর।
বড় গরু বোঝা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার গবাদি পশু।
এর মধ্যে গরু-মহিষ ৫৬ লাখ ২ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার। চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ২০ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর গরুর চেয়ে ছাগল ও ভেড়ার কোরবানি বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালে গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার, আর ছাগল-ভেড়া ৫০ লাখ ৩৮ হাজার। অথচ ২০১৯ সালে গরু-মহিষ কোরবানি ছিল ৫৭ লাখের বেশি।
খামারিরা বলছেন, যারা একসময় কোরবানির হাটে লাখ লাখ টাকা ঢালতেন– রাজনীতিক, প্রভাবশালী আমলা, প্রবাসী পরিবার কিংবা বড় ব্যবসায়ী; তাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে। কেউ দুর্নীতির মামলায়, কেউ হয়তো পরিস্থিতি বুঝে সতর্ক। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, দুর্নীতির তদন্ত, গণঅভ্যুত্থানের পর দামি পশু কেনা অনেকেই এখন ‘ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ মনে করছেন। খামারিরা বলছেন, এ বছর বড় গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। অনেকেই সস্তা ও ছোট পশুর দিকেই ঝুঁকছেন। সব মিলিয়ে ছাগলকাণ্ডের রেশ গিয়ে ঠেকেছে গোয়ালঘরে, কোরবানির হাটের দরকষাকষিতে, এমনকি খামারির সংসারেও।
পাবনার সাঁথিয়ার শামুকজানি গ্রামের খামারি মনজেল হোসেন ‘মোহন রাজ’ নামে ষাঁড়টি তিন বছর ধরে লালনপালন করছিলেন। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, খাওয়া-দাওয়া, পরিচর্যা করে ৯৫ হাজার টাকায় কেনা গরুটাকে বিশাল আকৃতি দিয়েছি। কিন্তু ১০ লাখের আশায় রাখা গরুটি শেষ পর্যন্ত ৬ লাখ টাকায় এক গরু ব্যাপারীর কাছে দিতে বাধ্য হয়েছি।
রাজশাহীর খড়খড়ির খামারি আনোয়ার হোসেন ৬০টি বড় গরু প্রস্তুত করেছেন। শাহিওয়াল, ব্রাহমা ও দেশি জাতের। বললেন, আগে যারা ৮-১০ লাখে গরু কিনতেন, তারা এখন যোগাযোগই করছেন না। অনলাইনেও সাড়া নেই।
মেহেরপুর সদরের হরিরামপুর গ্রামের খামারি ইলিয়াস আলীর ২৩টি গরু। আগে যেগুলোর একেকটির দাম ছিল ৭ থেকে ১৫ লাখ টাকা, এখন সেই গরু কেউ নিতে আসছেন না। গত বছরের ছাগলকাণ্ডের পর এবার সবাই সতর্ক। ব্যাপরীরা বড় গরু নিতেই চাচ্ছেন না।
পাবনা সদরের খামারি রিপন হোসেন বলেন, গতবার বড় গরু বিক্রি করতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলাম। এবার ৩৫টি ছোট গরু রেখেছিলাম। ১ থেকে ২ লাখের মধ্যে এগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গার নিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি এবার ছোট জাতের ১১টি গরু এনেছি। এগুলোর দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ। বড় গরু নিয়ে এখন ভিডিও কিংবা চটকদার বিজ্ঞাপন দিলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো জমকালো অবস্থা নেই। ৯-১০ মণ ওজনের গরু আছে। ফলকে দাম লেখা ৮-৯ লাখ টাকা। কিন্তু কেউ এসে দামও জানতে চাচ্ছেন না।
রাজধানীর গাবতলী হাট ঘুরেও ছোট-মাঝারি গরুর সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। গরু ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, মানুষ বড় গরুতে ভয় পায়। এই ভয় শুধু টাকার না– সামাজিক, প্রশাসনিক, সব ধরনের ভয় কাজ করছে। ছোট গরু মানেই এখন ‘নিরাপদ’।
বড় গরুতে খরচ বাড়লেও লাভ নেই
খামারিরা বলছেন, খরচ বাড়লেও লাভের মুখ দেখা কঠিন হয়ে গেছে। প্রাণী খাদ্যের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৮৭ শতাংশ। ভুসি, খৈল, ভুট্টা, খড়–সবকিছুর দাম বেড়েছে।
পাবনার রাইয়ান ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপক ইকবাল মৃধা বলেন, প্রতিটি গরুর পেছনে দিনে ৫০০-৫৫০ টাকা খরচ হয়। দেড় বছরে ২ লাখের বেশি খরচ পড়ে। যে ভুসির বস্তা আগে ১ হাজার ৬০০ টাকায় পেতাম, এখন তা ২ হাজার ২০০ টাকা।
চুয়াডাঙ্গার খামারি নিয়াজ উদ্দিন বললেন, ১১টি গরু আছে, খরচ আকাশছোঁয়া। লাভ দূরে থাক, মূলধন তুলতেই হিমশিম খেতে হবে। প্রাণী খাদ্য ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। বড় গরু পালনে আগে ছিল বিনিয়োগ, এখন সেটা বোঝা। উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রির সমন্বয় হচ্ছে না। সরকারিভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ না এলে এই খাত টিকে থাকবে না।
এদিকে অন্য বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির গরু নিয়ে প্রচার ছিল। এবার এখনও অনলাইন হাট জমেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উদ্যোক্তা বলেন, আগের বছর যেখানে বড় গরুর বিজ্ঞাপন ছিল ৩০-৪০ ভাগ, এবার তা ১০ ভাগের নিচে। এ বছর বড় গরুর বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না। ছোট-মাঝারি গরুর প্রতি মনোযোগ বেশি।
ছিনতাই-ডাকাতির নতুন আতঙ্ক
বাজার আর দামে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নতুন করে ভয় ঢুকেছে পরিবহনে। বর্ষাকালীন ঈদের মৌসুমে পশুবাহী ট্রাক অনেক সময় দীর্ঘ যানজটে পড়ে। সেই সঙ্গে মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। খাগড়াছড়ির খামারি আব্দুর রহমান বলেন, জেলার বাইরের ব্যাপারীরা ছিনতাই ও ডাকাতির ভয়ে খামারে আসতেই চান না। এবারের ঈদ বর্ষাকালে। মহাসড়কে যানজট, কাদাযুক্ত গ্রামীণ রাস্তা আর ছিনতাইকারীর তৎপরতা মিলিয়ে বিক্রির পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক।
বিশেষজ্ঞ মত
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, কোরবানির হাট কখনও ছিল ধর্মীয় আবেগের জায়গা, কখনও সামাজিক প্রতিপত্তির। এখন সেখানে জায়গা নিয়েছে আতঙ্ক, হিসাবনিকাশ আর সম্ভাব্য জবাবদিহির ভয়।
তিনি বলেন, বড় গরুর পরিচর্যায় সময়, শ্রম, অর্থ সবই ব্যয় করেছেন খামারিরা। কিন্তু এবার সেই গরুর ক্রেতা নেই। বড় গরুর খামারিদের দীর্ঘমেয়াদি লাভ নিশ্চিত করতে হলে দরকার পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পরিবহন ও সরকারি সহায়তা। পাশাপাশি দরকার ভয় দূর করা। সামর্থ্য থাকলে বড় গরু কিনতে যেন কোনো বাধা দেওয়া না হয়। কারণ, দেশে হাজার হাজার বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে, যারা শুধু কোরবানি ঘিরে বড় গরু উৎপাদন করে। তারা লোকসানে পড়লে সার্বিক মাংস উৎপাদন ব্যাহত হবে।
সরকারি উদ্যোগ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা এ বছর সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশেষ নজর দিয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় পশু আনতে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ব্যবস্থা থাকবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বড় গরু বিক্রির সুযোগ থাকছে। হাটগুলোতে ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে, যেন গরুর স্বাস্থ্য নিয়ে বিভ্রান্তি না থাকে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ঈদের সময় হাটের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি ট্রাকে নির্দিষ্ট হাটের তথ্য থাকতে হবে। রাস্তায় পশু নামানো যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মহাসড়কে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে।