ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ সময়ে বৃষ্টিই অনিবার্য। যদিও আষাঢ় আসতে এখনও কিছুদিন বাকি। আজ শেষ হতে যাওয়া মে মাসটিই আসলে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ, যেখানে গত বছরের শেষ সপ্তাহেই আঘাত হেনেছিল ‘রিমাল’। এবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘শক্তি’। অবশ্য শক্তি শেষ পর্যন্ত তার শক্তি দেখাতে পারেনি। ভালো বিষয়, প্রকৃতিই তাকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। তবে সারাদেশে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টির তাণ্ডব দেখা গেছে ভালোভাবেই। মুষলধারার বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকা তলিয়ে যাওয়ার খবর শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি। বিশেষ করে ১৪টি জেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে পানিবন্দি লাখো মানুষ। রাজধানীতে শুক্রবারই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ঢাকায় বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হয়েছিল ১৬৮ মিলিমিটার, আর শুক্রবার ১৯৫ মিলিমিটার।

যেখানে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই রাজধানী তলিয়ে যায়, সেখানে তার তিন গুণ বৃষ্টিতে পরিস্থিতির নাজুকতা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত বছর এ সময়ে যখন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হেনেছিল তখন আমি লিখেছিলাম, ‘জলোচ্ছ্বাস তো উপকূলে, ঢাকায় কেন জলাবদ্ধতা’ (সমকাল, ২৯ মে ২০২৪)। বস্তুত জলাবদ্ধতা বিষয়ে লেখা মানেই পুরোনো রেকর্ড বাজানো। প্রতিবছর একই আলোচনার চর্বিতচর্বণ হয়। কিন্তু সমাধানের কাঙ্ক্ষিত উদ্যোগ দেখি না। যে কারণে বৃষ্টির নাগরিক রসায়ন বৃষ্টিবিলাস নয় বরং বিপদ।  

আকাশ থেকে ঝরা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি দেখতে এক ধরনের শিহরণ জাগে। বৃষ্টির পানি সবচেয়ে বিশুদ্ধও বটে। ফলে বৃষ্টি সাহিত্যিকদের কলমে ঝরেছে ইতিবাচকভাবেই। কিন্তু রাজধানীবাসীর জন্য এ তো বিপদ! শুক্রবার অধিকাংশ নাগরিকের সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় কিছুটা রক্ষা পেলেও তার আগের দিনের ভোগান্তি ছিল তীব্র। কর্মজীবী মানুষের কর্মস্থলে পৌঁছার কষ্টের কথা বলা বাহুল্য। তাদের বাসায় পৌঁছানোর বেদনা আরও বেশি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগল ধানমন্ডি থেকে বসুন্ধরা আসতে। সঙ্গে হাঁটুপানিতে সাঁতার।’ ঢাকায় একটু বেশি বৃষ্টি মানেই চলাচলে চতুর্মুখী ভোগান্তি। প্রথমেই দেখা দেয় পরিবহন সংকট। গণপরিবহন এই সময়ে পাওয়া দুষ্কর। অটোরিকশাও অপ্রতুল হয়ে পড়ে। আবার পরিবহন পেলেও ভাড়া বেড়ে যায়। পাশাপাশি সড়কে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। স্বাভাবিকভাবেই ঢাকা শহরের যানজট অন্যতম সমস্যা। বৃষ্টিতে এ সংকট আরও বেড়ে যায়। আর বেশি বৃষ্টিতে যখন সড়কে হাঁটুপানি, তখন হাঁটার পরিস্থিতিও থাকে না। মেট্রোরেল অবশ্য কিছুটা স্বস্তি দিলেও সেখানে যাত্রীর ভিড় অসহনীয়। তার মানে স্পষ্ট, আমাদের নাগরিক ব্যবস্থাপনায় কতটা গলদ!

বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরির কারণ একটাই, পানি নামার পথ সংকীর্ণ। শুক্রবার দুপুরে একটি দৈনিকের অনলাইন সংস্করণের প্রতিবেদন– ‘নিউমার্কেট এলাকায় এখনও জমে আছে পানি; ব্যবসায়ী ও পথচারীদের দুর্ভোগ’। যেখানে মূল সড়ক তো বটেই, অলিগলিতেও পানি। দোকানপাটের মধ্যে ঢুকে পড়েছে পানি। সেখানে একজন দায়িত্বশীল বলেছেন, নিউমার্কেট এলাকার পানি পিলখানার ভেতর দিয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ার কথা থাকলেও তা বন্ধ থাকার কারণে নামতে পারছে না। ঢাকার খালগুলো দখল-দূষণের কারণে জলাবদ্ধতার সংকট স্থায়ী হয়ে আছে। গত বছর একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে, রাজধানীর দখল হয়ে যাওয়া খালগুলোর মধ্যে মাত্র ১৫টি খাল খনন করলেই জলাবদ্ধতা সমস্যার প্রায় ৮০ শতাংশের সমাধান হতে পারে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে খাল খনন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যা চলমান। এ কাজ সমাপ্ত হলে ঢাকায় পানিপ্রবাহের পথ উন্মুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। গত বছরের এই সময়ে রাজধানীর জলাদ্ধতা নিয়ে লিখেছি, এবারও লিখছি। তাহলে কি আগামী বছর নতুন এক ঢাকার গল্প বলতে পারব? নিশ্চয় অসম্ভব নয়। সদিচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। সেই আন্তরিকতাই আমরা দেখতে চাই। হয়তো কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে নাগরিকরা। 

জলাবদ্ধতার সংকট খাল উদ্ধার ও ভালো ব্যবস্থাপনায় কিছুটা কমতে পারে। এটাও সত্য, পুরো রাজধানী শহরই সমস্যাসংকুল। যেমন জলাবদ্ধতা, দূষণ, ট্রাফিক জ্যাম, পরিবহন সমস্যা। অপরিকল্পিত নগরায়ণ আর ঢাকাকে সবকিছুর কেন্দ্র বানানোর কারণে এ সংকট বাড়ছে। সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করা জরুরি। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। সে জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবহন ব্যবস্থাপনাও ভুলে গেলে চলবে না।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক রব র গত বছর পর বহন সমস য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বাজুসের নতুন সভাপতি এনামুল হক খান

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনে (বাজুস) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভাস’র এনামুল হক খান। সংগঠনটির ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য তিনি দায়িত্ব পালন করবেন ।

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে বাজুস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাজুস নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসরিন ফাতেমা আউয়াল ফলাফল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বৈধ প্রার্থীদের মধ্য থেকে কোনো প্রার্থী তাদের মনোনয়পত্র প্রত্যাহার না করায় বাণিজ্য সংগঠনের বিধিমালা-২০২৫ এর ২৪(১) ধারা মোতাবেক বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা নির্বাচনযোগ্য পদের সমান হওয়ায় ৩৫ জন প্রার্থীকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।

বাজুসের ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ মেয়াদের একজন সিনিয়র সহ-সহভাপতি, ৩ জন সহ-সভাপতি, একজন কোষাধ্যক্ষ এবং ২৯ জন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছে। এদের সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এখন থেকে আর কেউ থাকবেন না। ফলে সাধারণ সম্পদ পদে কেউ নির্বাচিত হননি। বাজুস প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম সাধারণ সম্পদ পদ বিলুপ্ত করা হলো।

বাজুসের নবনির্বাচিত সভাপতি এনামুল হক খান বলেন, আমরা সোনার ব্যবসা করি। মানুষকে বোঝাতে হবে ব্যবসায়ীরা কিন্তু চোরাকারবারী না। একটি আলোর পথ অন্যটি অন্ধকার পথ। আমরা আলোর পথে আছি। যারা চোরাকারবারী করে তারা কোনোদিন সোনা ব্যবসায় আসবে না। আর যারা সোনা ব্যবসা করে তারা কোনোদিন চোরাকারবারীতে জড়াবে না।

তিনি বলেন, আমাদের সোনা আমদানির প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। সোনা আমদানির ব্যবস্থা আছে, কিন্তু এতো কঠিন প্রক্রিয়া যে, এই কঠিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সোনা আমদানি করতে গেলে যেই দাম দাঁড়ায়, সেই দাম দিয়ে কেউ সোনা কিনতে আগ্রহী না। আর এজন্য যতদিন সোনা আমদানি সহজ না হয়, ততোদিন পর্যন্ত ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে সোনা যে সহজে আসতো, সেটা চালু করার জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ভ্যাট ৫ শতাংশ অথচ আমাদের পাশের দেশে ভ্যাট অনেক কম। আমরা ভ্যাট কমানোর জন্য কাজ করবো।

বাজুসের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সানন্দা জুয়েলার্স (প্রা.) এর রনজিৎ ঘোষ, সহ-সভাপতি পদে আপন ডায়মন্ড হাউজের আজাদ আহমেদ, জড়োয়া হাউজ (প্রা.) লিমিটেডের অভি রায় এবং জেসিএক্স গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডের ইকবাল হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন নিউ ফেন্সী জুয়েলার্স’র অমিত ঘোষ।

বাজুসের পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. মিলন মিয়া, পবন কুমার আগোওরালা, তানভীর রহমান, মো. লিটন হাওলাদার, বাবুল দত্ত, গনেশ দেবনাথ, আশিস কুমার মন্ডল, মিনাজুর রহমান, বিকাশ ঘোষ, সুমন চন্দ্র দে, মোস্তাফা কামাল, ধনঞ্জয় সাহা (বিপুল), শ্রীবাস রায়, মো. আলী হোসেন, মো. রুবেল, মো. নয়ন চৌধুরী, মো. ছালাম, ফাহাদ কামাল লিংকন, গৌতম ঘোষ, মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম, মো. তারেকুল ইসলাম চৌধুরী, আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম, সৌমেন সাহা, আককাছ আলী, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, শাওন আহমেদ চৌধুরী, মো. নাজমুল হুদা লতিফ এবং পলাশ কুমার সাহা।

ঢাকা/নাজমুল/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ