একটি আধুনিক শহরে যেসব নাগরিক সুবিধা থাকার কথা, বলতে গেলে তার সামান্যই আছে দেড় কোটির বেশি জন–অধ্যুষিত এই ঢাকা শহরে। এটা ঢাকাবাসীর অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। ঢাকা শহর মানেই মশার উপদ্রব থাকবে, ব্যস্ত সড়ক দখল করে জনসমাবেশ হবে, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কের আকার ছোট হতে থাকবে, আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট করে একের পর এক বাণিজ্যিক ভবন উঠতে থাকবে। কিন্তু অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন ঢাকার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়, তখনই নগরবাসীর জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ।

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় সড়কে যানবাহন আটকে পড়তে পারে, বাণিজ্যিক, আবাসিক এলাকায় পানিও জমতে পারে। যদিও এবার বিগত বছরের তুলনায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। এরপরও এখনো অনেক এলাকা থেকে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারছে না। সড়কে পানি জমে থাকছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোসহ সব ধরনের যান আটকা পড়েছে।

মূলত খালগুলো উদ্ধার করা ছাড়া ঢাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা পুরোপুরি কাটবে না। কথা হচ্ছে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব কার—এ নিয়েও বছরের পর বছর ‘যুদ্ধ’ চলেছে। একসময় ঢাকার খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও উদ্ধার করার দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। তারা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ওয়াসার কাছ থেকে সেই দায়িত্ব অর্পণ করে দুই সিটি করপোরেশনকে। তারা খাল উদ্ধার ও সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও কোনো খাল উদ্ধার হয়নি। 

জনগণ উত্তম সেবা পাবে—এই অঙ্গীকার নিয়ে সরকার এক সিটি করপোরেশন ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটি করপোরেশন করল। কিন্তু যখন মে মাসের শেষে ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তি তৈরি হলো, তখন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সদর কার্যালয় নগর ভবন তালাবদ্ধ নির্বাচনী ফলাফল জটিলতার কারণে। উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে বটে, কিন্তু পানি দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা তাদেরও নেই। 

এভাবে কোনো রাজধানী শহর চলতে পারে না। ঢাকার খাল উদ্ধারের নামে যে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলো, তা কোথায় গেল? ঢাকা ওয়াসাও বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেছে খাল উদ্ধার কর্মসূচির নামে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর আড়ম্বর করে খাল উদ্ধার প্রকল্প উদ্বোধনের ছবিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এসব প্রকল্পের অগ্রগতি বা পরিণতি সম্পর্কে নগরবাসী কিছু জানেন না।

 বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে খাল সংস্কারের সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে তাদের আরও একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে খাল উদ্ধার বা সংস্কারের জন্য। এ অপেক্ষার পালা কবে শেষ হবে? গত এক দশকে খাল উদ্ধার ও সংস্কারের নামে যে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও জলাবদ্ধতা সমস্যা আগের মতোই আছে। ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করবেন কে—প্রশাসক, ‘মেয়র’ না তাঁদের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়?

চট্টগ্রামকে বলা হয় জলাবদ্ধতার নগরী। গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে বিগত অনেক বছর পর এবারই প্রথম দেখা গেল চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ তৎপরতায় সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সব কর্তৃপক্ষ এবার অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়েছে। সেটির সুফল দেখা গেল চট্টগ্রামে। তেমন পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি রাজধানী শহরকে ঘিরেও হবে না কেন? 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শত্রুতার জেরে সাত গরুকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ, মারা গেছে ৩টি

গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিনটি গরু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আরো চারটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দুই কৃষক পরিবারের অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে সদর উপজেলার সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে গরুগুলো মারা গেছে তা খতিয়ে দেখতে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পুলিশ বলছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।

আরো পড়ুন:

‎নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত

গাইবান্ধায় ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের 

এলাকাসাসী জানান, সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামের দুই ভাই মো. রাসুল গাজী ও হাসিব গাজী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তারা খামার করে কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে গরুর গোঙানির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির এক আত্মীয় ছুটে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন দুই ভাইকে। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসককে খবর দেন। সকাল হওয়ার আগেই তিনটি গরু মারা যায়। একই গোয়াল ঘরে থাকা একটি বড় ষাঁড়, একটি বাছুর ও অপর গোয়ালে থাকা দুটি ষাঁড় এখনো অসুস্থ। 

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. রাসুল গাজী জানান, শত্রুতা করেই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। রাতেই টের পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাঁচানো যায়নি গরুগুলো। দুই ভাইয়ের আরো চারটি গরু অসুস্থ রয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

তিনি জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

কারা তাদের গরু হত্যা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসুল গাজী বলেন, “ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তাদের চেহারা দেখতে পারিনি। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি।” 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসিব গাজী বলেন, ‍“কারো সঙ্গে আমাদের শত্রুতা থাকতেই পারে। এই অবলা পশুগুলো কার কী ক্ষতি করেছে। কোন অপরাধে এদের হত্যা করা হলো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

এলাকাবাসী মো. ইমদাদ শেখ বলেন, “গত শনিবার রাতে বৃষ্টি হয়। এই সুযোগে গরুগুলোকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সর্দার বলেন, “সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরুকে বিষ খাওয়ানো হয় এমন খবর পেয়ে সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তিনি অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়জনজনিত কারণেই গরুগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই গরু তিনটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”

গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে তদন্ত শুরু করি। মারা যাওয়া গোরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ