বিপুল টাকা খরচ, খাল উদ্ধার হলো না কেন
Published: 31st, May 2025 GMT
একটি আধুনিক শহরে যেসব নাগরিক সুবিধা থাকার কথা, বলতে গেলে তার সামান্যই আছে দেড় কোটির বেশি জন–অধ্যুষিত এই ঢাকা শহরে। এটা ঢাকাবাসীর অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। ঢাকা শহর মানেই মশার উপদ্রব থাকবে, ব্যস্ত সড়ক দখল করে জনসমাবেশ হবে, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কের আকার ছোট হতে থাকবে, আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট করে একের পর এক বাণিজ্যিক ভবন উঠতে থাকবে। কিন্তু অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন ঢাকার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়, তখনই নগরবাসীর জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ।
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় সড়কে যানবাহন আটকে পড়তে পারে, বাণিজ্যিক, আবাসিক এলাকায় পানিও জমতে পারে। যদিও এবার বিগত বছরের তুলনায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। এরপরও এখনো অনেক এলাকা থেকে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারছে না। সড়কে পানি জমে থাকছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোসহ সব ধরনের যান আটকা পড়েছে।
মূলত খালগুলো উদ্ধার করা ছাড়া ঢাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা পুরোপুরি কাটবে না। কথা হচ্ছে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব কার—এ নিয়েও বছরের পর বছর ‘যুদ্ধ’ চলেছে। একসময় ঢাকার খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও উদ্ধার করার দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। তারা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ওয়াসার কাছ থেকে সেই দায়িত্ব অর্পণ করে দুই সিটি করপোরেশনকে। তারা খাল উদ্ধার ও সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও কোনো খাল উদ্ধার হয়নি।
জনগণ উত্তম সেবা পাবে—এই অঙ্গীকার নিয়ে সরকার এক সিটি করপোরেশন ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুই সিটি করপোরেশন করল। কিন্তু যখন মে মাসের শেষে ভারী বৃষ্টির কারণে অনেক সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তি তৈরি হলো, তখন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সদর কার্যালয় নগর ভবন তালাবদ্ধ নির্বাচনী ফলাফল জটিলতার কারণে। উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে বটে, কিন্তু পানি দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা তাদেরও নেই।
এভাবে কোনো রাজধানী শহর চলতে পারে না। ঢাকার খাল উদ্ধারের নামে যে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলো, তা কোথায় গেল? ঢাকা ওয়াসাও বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেছে খাল উদ্ধার কর্মসূচির নামে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর আড়ম্বর করে খাল উদ্ধার প্রকল্প উদ্বোধনের ছবিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এসব প্রকল্পের অগ্রগতি বা পরিণতি সম্পর্কে নগরবাসী কিছু জানেন না।
বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে খাল সংস্কারের সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে তাদের আরও একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে খাল উদ্ধার বা সংস্কারের জন্য। এ অপেক্ষার পালা কবে শেষ হবে? গত এক দশকে খাল উদ্ধার ও সংস্কারের নামে যে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও জলাবদ্ধতা সমস্যা আগের মতোই আছে। ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করবেন কে—প্রশাসক, ‘মেয়র’ না তাঁদের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়?
চট্টগ্রামকে বলা হয় জলাবদ্ধতার নগরী। গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে বিগত অনেক বছর পর এবারই প্রথম দেখা গেল চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ তৎপরতায় সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সব কর্তৃপক্ষ এবার অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়েছে। সেটির সুফল দেখা গেল চট্টগ্রামে। তেমন পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি রাজধানী শহরকে ঘিরেও হবে না কেন?
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫