সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের চারা তৈরি, রোপণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এখন যে গাছগুলো রাস্তার পাশে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও মাঠেঘাটে আছে, সেই গাছগুলোর কী হবে, সেটা নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। গাছগুলোর কী হবে, সে নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।

গত ১৫ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা থেকে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব গাছের পানি শোষণক্ষমতা বেশি, এগুলো মাটিকে রুক্ষ করে তোলে; তাই দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এসব গাছের চারার পরিবর্তে দেশি প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে ওই প্রজ্ঞাপনে প্রকৃতিতে থেকে যাওয়া ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের ব্যাপারে করণীয় কিছু বলা হয়নি। বন বিভাগ বলছে, নির্দেশনা পেলে তারা গাছগুলো কাটবে। নইলে ১০ বছর পর কাটা হবে। আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভাবনা হচ্ছে, অন্তত ১০ বছর বয়স না হলে গাছ কাঠের জন্য উপযুক্ত হবে না। তাতে বোঝা যাচ্ছে, যে গাছগুলো ছোট আছে, সেগুলো কাটার জন্য কমপক্ষে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।

বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, আকাশমণির বায়ুবাহিত পুষ্পরেণু নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে অ্যালার্জি সংক্রমণ ঘটায়। এর ফলে অ্যাজমাসহ নানা অসুস্থতা হতে পারে।

দুজন ঠিকাদারের মাধ্যমে রাজশাহী-নওগাঁ সড়কের একটি অংশে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ রোপণ করা হয়েছে। রাজশাহীর কামারপাড়া থেকে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রানীপুকুর এলাকা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এসব গাছ লাগানো আছে। ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এই গাছ লাগানো এবং মরা গাছ প্রতিস্থাপন করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দরপত্রে এই রাস্তার পাশে শোভাবর্ধনকারী, বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু রাজশাহী থেকে নওগাঁ পর্যন্ত সড়কের পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় লাগানো গাছের মধ্যে কোথাও কোনো ফলদ গাছ নেই, বেশির ভাগই আকাশমণি।

রাস্তায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, আকাশমণিগাছের ফল পাখিতে খায় না। পাখি বাসাও বাঁধে না। গাছের পাতা মাটিতে পড়ে সহজে পচে না। যেখানে পড়ে, সেখানে অন্য ফসল হয় না।

সম্প্রতি নাটোরের বাগাতিপাড়া-আড়ানী সড়কের আট কিলোমিটারজুড়ে দুই পাশে আকাশমণিগাছ রোপণ করা হয়েছে। রাজশাহীর তানোর উপজেলা কলমা গ্রামের একটি সড়কের দুই পাশে অনেক ঘন করে ইউক্যালিপটাসগাছ লাগানো হয়েছে। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বাসুদেবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এক সারি ইউক্যালিপটাসগাছ অনেক বড় হয়েছে।

নওগাঁর শাহ কৃষি জাদুঘর ও পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন। তিনি ক্ষতিকর এই দুই গাছ নতুন করে রোপণ না করার সরকারি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, দেরিতে হলেও সরকার একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনো যেসব গাছ আছে, তার মধ্যে সরকারি পর্যায়ের গাছই বেশি। অনতিবিলম্বে সেসব গাছ সরিয়ে ফেলা দরকার। জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে অবশ্যই এগুলো সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। রাজশাহী-নওগাঁ সড়কের দুই পাশে ছিল সারি সারি আম ও তালগাছ। এই সড়কের পাশে তালগাছ লাগিয়ে একজন ভিক্ষুক গহের আলী পরিবেশ পদক পেয়েছিলেন। সড়ক সম্প্রসারণের কারণে সেই গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। তাহলে এই ক্ষতিকর গাছগুলো কাটতে মানা কোথায়, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বাসুদেবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, গাছ কাটতে হলে তো বন বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমতি নিতে হয়। তাঁরা যদি বলেন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ কেটে ফেলতে হবে, তাহলে কাটা হবে। এটা ছাড়া আপাতত এই গাছ নিয়ে বিদ্যালয়ে কোনো আলোচনা নেই।

তানোরের চোরখৈর গ্রামের সড়কের দুই ধারে ঘন করে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ লাগানো আছে। এই গাছের ব্যাপারে জানতে চাইলে কলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চৌধুরীর ছেলে রানা চৌধুরী বলেন, সুলতান নামের এক ব্যক্তি ইউপির সঙ্গে চুক্তিতে এই গাছ লাগিয়েছিলেন, তিনি মারা গেছেন। গাছগুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগে, কিন্তু দুই পাশের জমিতে কোনো ফসল হয় না। গাছগুলো কাটার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

রাজশাহী বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো.

মেহেদীজ্জামান বলেন, প্রজ্ঞাপনে প্রকৃতিতে থেকে যাওয়া ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। কোনো নির্দেশনা এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী–নওগাঁ সড়কে এই দুই গাছ আছে, এগুলোর বয়স ৪-৫ বছর হয়েছে, ১০ বছর হলে ভালো মূল্য পাওয়া যায়। এই গাছের কাঠের দাম অনেক। তাই এখন কাটা যাবে না। তবে নির্দেশনা পেলে দেখা যাবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক র দ ই ১০ বছর এই গ ছ পর ব শ র জন য উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঘোড়াধাপ হাটে ধান বেচা

২ / ৯হাটে মধ্যে ধানের বিশাল স্তূপ

সম্পর্কিত নিবন্ধ