রংপুরে জাপা-এনসিপির পাল্টাপাল্টি মামলা নিল পুলিশ
Published: 2nd, June 2025 GMT
রংপুরে শহরের সেন পাড়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবন স্কাইভিউয়ে হামলার দুই দিন পর জাপা ও এনসিপির দায়ের করা পাল্টাপাল্টি মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ।
রবিবার (১ জুন) বিকেলে রংপুর মহানগরের কোতোয়ালি থানায় এ দুটি মামলা নেওয়া হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে জাপা এবং শনিবার রাতে এনসিপির পক্ষ থেকে থানায় লিখিত এজাহার জমা দেওয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নেওয়া হয়নি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান মামলা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, এ মামলা দুটি তদন্তাধীন আছে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা বাড়ির জানালার কাচ ভাঙচুর করে ও একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় জি এম কাদের বাসায় অবস্থান করছিলেন।
জাপা অভিযোগ করেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির কর্মীরা এ হামলায় জড়িত। তবে, এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতারা পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে, জি এম কাদেরের রংপুর আগমনকে ঘিরে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে জাপার লোকজন হামলা চালিয়েছে।
জাপার দায়ের করা মামলার বাদী জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতা আরিফ। মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরো ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দায়ের করা মামলার বাদী দলটির রংপুরের সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন। এতে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের, কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরো ৮০-৯০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার পর থেকেই রংপুরে জাপা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। রবিবার রাত ৯টার দিকে রংপুর শহরের স্টেডিয়ামের অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্পে দুই দলের নেতাদের বৈঠক করেন ৭২ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম।
এ সময় ঘটনায় জড়িত দুই দলের অভিযুক্ত চার জন হাজির হন। জাপা চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলার প্রসঙ্গে কর্মীদের হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন বিএনপির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের সমন্বয়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে আইন-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন না ঘটানোর অঙ্গীকার করেন দুই দলের স্থানীয় নেতারা। সেনা কর্মকর্তা রংপুরকে শান্তিপূর্ণ রাখতে মব ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথাও জানান সেই বৈঠকে।
সেনাবাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও জাপার বাসভবনে হামলাকে কেন্দ্র করে এখনো রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঢাকা/আমিরুল/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এম ক দ র এনস প র
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ডিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের জেরে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবনে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার এলাকাসহ সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করা হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষে মিছিল করা হয়। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও এনসিপির পথসভা নস্যাৎ করতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করতে জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জেলা কারাগারে হামলা, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। ১৪টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জুলাই থেকে গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রাতেই কারফিউ জারি করা হয়। পরে কারফিউর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। পরে ২০ জুলাই রাত আটটায় কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়।