রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজও দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় অংশ নেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অলোচনা শুরু হবে।

সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা অনুষ্ঠান বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

সোমবার বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এই আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৩০টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আমরা মনে করি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা খুবই সম্ভব। এর আগে যে সব সংস্কার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নির্বাচনমুখি, সেই সংস্কারগুলো চিহ্নিত করে ঐকমত্যের মাধ্যমে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা যায়।”

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সংবিধান সংশোধন ছাড়া কিছু কিছু সংস্কার অফিস আদেশের মাধ্যমে, অর্ডিন্যান্স কিংবা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব।”

বৈঠক শেষে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে ভোটের তারিখ দিলেই জনমনে শঙ্কা কেটে যাবে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা.

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ তাহের বলেন, “সব দল প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তার নেতৃত্বেই একটি সফল সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এটা চেয়েছি।  নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে বলেছি, জুন এবং মে মাস আবহাওয়াগতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উপযোগী নয়। তাহলে মে ও জুন বাদ দিলে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। এর মাঝে একটি রোজা আছে। এর ভেতরেই একটা তারিখ ঘোষণার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে একটি সুবিধামতো সময়ে প্রধান উপদেষ্টা তারিখ দিলেই জনমনে যে শঙ্কা ও অস্বস্তি আছে, তা কেটে যাবে।”

গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়। সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

পুলিশ সংস্কার কমিশন বাদে বাকি পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি প্রস্তাব ছক আকারে দলগুলোর কাছে পাঠিয়ে মতামত নেয় কমিশন। এরপর ২০ মার্চ শুরু হয় দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে প্রথম পর্বের আলোচনা। প্রথম পর্বের আলোচনা শেষ হয় ১৯ মে। প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন।

পরে ২৬ মে ঐকমত্য কমিশন সংবাদ সম্মেলন করে প্রথম ধাপের আলোচনার অগ্রগতি তুলে ধরে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেগুলোয় ঐকমত্য হয়নি, এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বা সুপারিশের কথা সেদিন সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

ক্ষমতার ভারসাম্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি বলে সেদিন জানিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতবার নির্বাচিত হতে পারবেন, একজন সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া কী হবে— ধরনের মৌলিক কাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অমীমাংসিত থেকে গেছে। তবে এসব বিষয়ে অনেক দল আরো আলোচনার কথা বলেছে এবং আলোচনায় নমনীয়তা দেখিয়েছে বলে জানায় ঐকমত্য কমিশন।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম পর ড স ম বর দলগ ল র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চায় বাসদ

ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে বলে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ জানিয়েছেন।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বজলুর রশীদ ফিরোজ। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুন কেন, এমন প্রশ্ন তুলে বাসদের এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে, জুলাই মাসের মধ্যেই তারা প্রস্তুত। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে এবং নির্বাচনের তারিখ দিয়ে সংস্কার প্রস্তাবকে এগিয়ে নিতে হবে এবং বিচারকে দৃশ্যমান করতে হবে।’

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আমরা বলেছি যে প্রধান উপদেষ্টা জাপান গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছে, সেটা একটি পার্টিকে ব্লেম করা হয়েছে। বন্দর ও মানবিক করিডর দেওয়ার যে চক্রান্ত, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নয়। আমরা বলেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ সেটা প্রমাণ করতে হবে।’

এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জাতির সামনে স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বাসদ। বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, ‘তিন মাস ধরে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, সেই তিন মাসের আলোচনার সারসংক্ষেপ কী? কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের কাছে পরিষ্কার করতে হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ চায় বাংলাদেশ জাসদ

বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের আলোচনাকে যদি আমাদের অর্থবহ করতে হয়, তাহলে সর্বাগ্রে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে, সম্ভব হলে ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা যায়।’

এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদকে তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাসদের এই নেতা বলেন, ‘প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে যারা নির্বাচনের ডিউটি করবে, তাদেরও নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। যদি সংস্কারের আলোচনা করতে হয়, তাহলে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশের সঙ্গে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ চুক্তি করা যাবে না। এগুলো যদি আমরা নিশ্চয়তা পাই, তাহলে সংস্কারের আলোচনা সফল হতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০ ভাগ সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে চায় জামায়াত
  • শতাধিক সংস্কার প্রস্তাব চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে: আইন উপদেষ্টা
  • নির্বাচনে সব দল থেকে ২০ শতাংশ নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব গণসংহতি আন্দোলনের
  • বিএনপি, এনসিপিসহ কয়েকটি দল সরকারের স্থায়িত্বের জন্য আস্থা ভোটের পক্ষে
  • সরকারের স্থায়িত্বের জন্য আস্থা ভোটের পক্ষে বিএনপি, এনসিপিসহ কয়েকটি দল
  • সংস্কারের বৈঠকেও নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনা
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপিসহ অনেক দল
  • ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন চায় জামায়াত
  • ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চায় বাসদ