‘সুদের ওপর’ নেওয়া টাকার বাঁধে কি ভাঙন ঠেকবে
Published: 9th, June 2025 GMT
তিস্তা নদীর ভাঙনে প্রতিবছর হাজার হাজার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়। সরকারিভাবে এসব ভাঙন রোধে তেমন কোনো পদক্ষেপ অতীতে নেওয়া হয়নি। অনেক সময় স্থানীয় লোকজন টাকা দিয়ে বাঁধ তৈরি করে সেই ভাঙন রোধের চেষ্টা করেন।
কখনো সফল হন, কখনো ব্যর্থ। সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দেন তাঁরা। যাঁরা গরিব, তাঁদের অনেকে টাকা দেওয়ার জন্য মুরগি-হাঁস-ছাগল বিক্রি করেন। যাঁদের কোনো উপায় নেই, তাঁরা দিনমজুরির টাকা দেন। কেউ কেউ স্বেচ্ছাশ্রম দেন। দাদন ব্যবসায়ীর কাছে চড়া সুদে টাকা নিয়েও ভাঙন প্রতিরোধমূলক কাজ করা হয়। কখনো স্থানীয় বিত্তশালীদের কিছু সহায়তাও মেলে এসব কাজে।
এ কাজ মূলত সরকারের করার কথা। তিস্তাপারের মানুষের প্রতি সরকারের বিশেষ কোনো দরদ না থাকায় এই কাজ অতীতে হয়নি। যখন ভাঙন তুমুলভাবে শুরু হয়, তখন জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এতে খুব বেশি লাভ হয় না নদীপারের মানুষের। প্রচলিত আছে, এসব কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের খুব লাভ হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নদীপারের এক গণশুনানিতে তিস্তার ভাঙন প্রতিরোধমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই কাজ মাত্র এক মাসের মধ্যে শুরুও হয়েছে। প্রতিশ্রুত কাজ শেষ হবে দুই বছরে। যেসব স্থান বেশি ভাঙনপ্রবণ, প্রথম পর্বে কেবল সেসব স্থানে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে সরকার যে কাজ হাতে নিয়েছে, এতে আগামী বছরও লাগবে। ৪৫ কিলোমিটারের ভাঙনপ্রবণ এলাকা সুরক্ষিত হলে ভাঙন অনেকটাই কমে আসবে। এরপর প্রতিবছর যেসব এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা থাকবে, এগুলো যদি রোধ করা যায়, এতে ক্ষতি কম হবেযেসব পয়েন্টে এ কাজ শুরু হয়নি, তারই একটি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের বৈরাতী। কয়েক দিন আগে খবর পেয়েছি, সেখানে স্থানীয় ব্যক্তিরা চাঁদা তুলে ভাঙন রোধের কাজ করছেন।
ঈদুল আজহার ছুটিতে গিয়েছিলাম সরেজমিন দেখতে। রংপুর থেকে মোটরসাইকেলে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ওই স্থানে গিয়ে দেখলাম, স্থানীয় লোকজন নিজেদের টাকায় বালু-মাটি দিয়ে একটি ক্রস বাঁধ তৈরির কাজ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৈরাতীতে গত তিন বছরে তিন-চার হাজার বাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা সেখানে পাওয়া যায়নি। বাড়ি ভাঙার পর যেখানে বাড়ি করেছেন, সেই স্থানও ভাঙার আশঙ্কায় দিন কাটছে অনেকের।
নদীভাঙন যাতে আর না হয়, সে জন্য তাঁরা একটি ক্রস বাঁধের দাবিতে স্থানীয় ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন। কেবল তা–ই নয়, রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ের সামনে তাঁরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এ জন্য তাঁরা নিজেরা উদ্যোগী হয়েছেন ক্রস বাঁধ তৈরির জন্য।
ক্রস বাঁধটি করতে অন্তত ৩০ লাখ টাকা লাগবে। এ বাঁধটি টিকবে কি না, তাঁরা জানেন না। সর্বোচ্চ চেষ্টার অংশ হিসেবে তাঁরা ক্রস বাঁধটি করছেন। সামান্য কিছু টাকা অনুদান পেয়েছেন। যাঁদের বাড়িঘর ও জমি ভাঙার আশঙ্কা আছে, তাঁরা সবাই কিছু টাকা দিয়েছেন। এই টাকা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছে জমানো ছিল না। অনেকেই টাকা ধারদেনা করেছেন।
বৈরাতীতে আবদুর রহিম বলেন, ‘সুদের ওপর টাকা নিয়ে এখানে দিছি।’ সুদের ওপর টাকা নেওয়ার অর্থ হলো, দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ঋণ নিলে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের যে সুদ দিতে হয়, সেটাকে ‘সুদের ওপর’ টাকা নেওয়া বলে। যাঁরা নদীর পাড়ে সমবেত হয়েছেন, তাঁদের কাছে আরও জানতে পারলাম, ৫১ জনের একটি কমিটি হয়েছে ক্রস বাঁধ করার জন্য।
এই কমিটি স্থানীয় একজন সুদারুর (দাদন ব্যবসায়ীর) কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সেই ঋণের সুদ হিসেবে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে।
ভাঙনের তিন বছরে সেখানে ভাঙন বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আবেদন-আন্দোলন তাঁদের কোনো কাজে আসেনি। বিগত সরকারের সময়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাকি সারা বছরে কেবল বালু উত্তোলন করতেন। সেই বালু উত্তোলনের কারণে নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
অনেকের বাড়ির কাছে এখন তিস্তা চলে আসছে। দিনরাত তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন ভাঙন প্রতিরোধ করতে। তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে সরকার যে কাজ হাতে নিয়েছে, এতে আগামী বছরও লাগবে। ৪৫ কিলোমিটারের ভাঙনপ্রবণ এলাকা সুরক্ষিত হলে ভাঙন অনেকটাই কমে আসবে। এরপর প্রতিবছর যেসব এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা থাকবে, এগুলো যদি রোধ করা যায়, এতে ক্ষতি কম হবে।
তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স দ র ওপর র আশঙ ক সরক র র ক রস ব
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ
রাজশাহীর পুঠিয়ায় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে এক কাঠ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না পাওয়ার জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। আজ সোমবার দুপুরে এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
এই ব্যবসায়ীর নাম আবদুল হান্নান। তিনি উপজেলার হাতিনাদা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন বলে জানিয়েছেন। অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। একই সঙ্গে তিনি বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, নন্দনপুর বাজারের চায়ের দোকানে তাঁর ছোট ছেলে তুষার আহমেদ মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে বসে চা খাচ্ছিল। এ সময় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ছেলের চোখাচোখি হয়। এতেই রফিকুল ইসলাম কী বুঝে তার ছেলেকে মারধর করেছেন। তিনি ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়েছেন যে ওরা মেরেছে মারুক। এ নিয়ে কিছু করার দরকার নেই।
আবদুল হান্নান আরও বলেন, তাঁর বড় ছেলে সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন, ছুটিতে বাড়িতে আছে। ছোট ছেলেকে মারার কিছুক্ষণ পরেই বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম লোকজন সঙ্গে করে এসে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। বুঝতে পেরে তিনি বড় ছেলেকে নিয়ে পাশের একটি বাড়ির চাতালে পালিয়ে থাকেন। রফিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে বাড়ির সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছেন। যাওয়ার সময় আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে তাঁর বাড়ির রান্নাঘর, খড়ির ঘর ও একটি ছোট ঘর পুড়ে গেছে। দুটি ছাগল ও একটি গরু পুড়ে গেছে।
কাঠ ব্যবসায়ীর ভাঙচুর হওয়া বাড়ি। আজ সোমবার বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার হাতিনাদা গ্রামে