ইরান কি সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি
Published: 14th, June 2025 GMT
ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন শহরে গত শুক্রবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির গোপন কর্মসূচি বন্ধে আগাম ব্যবস্থা হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছে। তাঁর দাবি, তেহরান ইতিমধ্যে ৯টি পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে।
তবে নেতানিয়াহুর সমালোচকেরা বলছেন, তিনি মূলত অন্য কিছু প্রতিরোধ করতে আগাম পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেটা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নস্যাৎ করা কিংবা নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঠেকানো।
মূলত ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যের ভিত্তিতে নেতানিয়াহু ইরান সম্পর্কে এমন দাবি করেছেন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) চেয়েও বেশি তথ্য রাখে বলে ধারণা করা হয়।
আরও পড়ুনআগেই ইরানে ঢুকে কীভাবে হামলার ক্ষেত্র গড়ে তুলেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ৫৮ মিনিট আগেযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড গত ২৫ মার্চ সিনেটের গোয়েন্দা কমিটিকে জানিয়েছেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে না। তবে গ্যাবার্ড বলেছেন, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, যা কোনো পারমাণবিক অস্ত্রহীন দেশের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন।
আরও পড়ুন‘আমরা সব জানতাম’, ইরানে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মুখ খুললেন ট্রাম্প৭ ঘণ্টা আগেচলতি সপ্তাহে আইএইএ ২২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে এমন কিছু বলা হয়নি, যাতে বোঝা যায় ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বরং এতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বেসামরিক উদ্দেশ্যে সীমাবদ্ধ কি না, তা যাচাই করতে পারেনি আইএইএ। তবে ইরান শিগগিরই একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে, এমন কোনো কথা প্রতিবেদনে বলা হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু কর্মকাণ্ডে বৈশ্বিক বাধ্যবাধকতা মানছে না: আইএইএ
ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বৈশ্বিক বাধ্যবাধকতা মানছে না বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।
সংস্থাটির গভর্নর বোর্ডে আজ বৃহস্পতিবার গৃহীত একটি প্রস্তাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগ ভবিষ্যতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপনের পথ খুলে দিতে পারে।
গত সপ্তাহে আইএইএ ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি সংস্থাটির গভর্নর বোর্ডে আজকের সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল, ইরান আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। তারা কিছু এলাকায় গোপনে পারমাণবিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তদন্তের আওতায় থাকা কিছু এলাকায় এমন কিছু পারমাণবিক উপকরণ রেখেছে, যার বিষয়ে তারা তথ্য দেয়নি।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি আইএইএর বৈঠকের আগে ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে প্রস্তাবটি সমর্থন না করার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এতে তাঁরা বড় ভুল করবেন এবং ইরান এর ‘জবাব’ দেবে।
আইএইএর প্রতিবেদন এবং গভর্নর বোর্ডের এমন প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে নতুন পারমাণবিক চুক্তির লক্ষ্যে চলমান আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
আরও পড়ুননিরাপত্তাঝুঁকিতে ইরাকের দূতাবাস থেকে কর্মীদের আংশিকভাবে সরাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র১১ ঘণ্টা আগেতা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। এমন এক সময়ে আইএইএর গভর্নর বোর্ডে প্রস্তাবটি গৃহীত হলো, যার মাত্র এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কিছু নাগরিককে মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের নাগরিকদের অঞ্চলটি ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে।
তবে ইরান জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং তারা কখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরি বা অর্জনের চেষ্টা করবে না।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল ইরান। এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)। ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল, যাতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে।
আরও পড়ুন‘শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম’ থেকে বঞ্চিত হলে পারমাণবিক চুক্তি নয়: ইরান০৪ জুন ২০২৫চুক্তি করার বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি থেকে একতরফা বের হয়ে যায়। তাঁর মতে, এই চুক্তি ইরানের পরমাণু বোমা তৈরির পথ বন্ধে যথেষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে চুক্তিটি একধরনের বাতিল হয়ে যায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে চুক্তিটি নবায়নের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
আইএইএর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ মে পর্যন্ত ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের কাছাকাছি এবং প্রায় ৯টি পারমাণবিক বোমা বানানোর জন্য যথেষ্ট। পরমাণু অস্ত্র নেই—এমন যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত নজিরবিহীন ঘটনা। ফেব্রুয়ারির সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই মজুতের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে ১৩৩ দশমিক ৮ কেজিতে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুনইরানের উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের মজুত ৪০৮ কেজি, যা নজিরবিহীন: আইএইএ৩১ মে ২০২৫