লন্ডন বৈঠকের পর এখন বিএনপির দৃষ্টি নির্বাচনে , কী ভাবছে অন্য দলগুলো
Published: 15th, June 2025 GMT
লন্ডন বৈঠকের পর বেশ উচ্ছ্বসিত বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এখন তাদের দৃষ্টি জাতীয় নির্বাচনের দিকে। একই সঙ্গে এখন বিএনপির নেতা-কর্মীদের অধীর অপেক্ষা, দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিকে।
অন্যদিকে লন্ডন বৈঠকের পর কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। যারা আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার আভাস দিচ্ছে।
গত শুক্রবার লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে আগামী রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ও সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এত দিনের মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়।
অন্যদিকে লন্ডন বৈঠকের পর কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। যারা আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার আভাস দিচ্ছে।যদিও লন্ডন বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের একান্ত আলোচনায় নির্বাচনের সময় ছাড়া আর কী কী বিষয়ে কথা হয়েছে, তা নিয়ে সব মহলে কৌতূহল রয়েছে। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, এ বৈঠকে বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা ও মিয়ানমারের রাখাইনে খাদ্যসহায়তা পাঠানোর জন্য মানবিক করিডর বা ত্রাণ চ্যানেলের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি বিএনপি এর আগে সরকারের যে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছিল, সেটাও আলোচনায় তোলা হয়নি। এমনকি পদত্যাগের দাবি করা তিন উপদেষ্টার একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন। তিনি তারেক রহমানকে বৈঠকে অভ্যর্থনা জানান।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিংয়ে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা। লন্ডন, যুক্তরাজ্য, ১৩ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন র ন উপদ ষ ট ব এনপ র সরক র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত
আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি।
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম।
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি।