ইসরায়েলের গুপ্তহত্যার পর ইরানের নতুন সামরিক নেতৃত্বে কারা এলেন
Published: 16th, June 2025 GMT
ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ও পাল্টা হামলার মধ্যে ইরান নিজেদের সশস্ত্র বাহিনী ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজন দেশটির অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি। গত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের বহুমুখী বিমান হামলায় তিনি নিহত হন।
এ পরিস্থিতিতে সামরিক নেতৃত্বে শূন্য পদ পূরণে ইরান বেশ কয়েকজন নতুন কমান্ডারকে পদোন্নতি দিয়েছে।
কোন কোন কমান্ডার নিহত হয়েছেন, তাঁদের জায়গায় কারা এসেছেন এবং তাঁরা এই প্রাণঘাতী সংঘাতের ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা দিচ্ছে, তা দেখে নেওয়া যাক।
নিহত কমান্ডাররা কতটা শীর্ষ পর্যায়ের ছিলেনশুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের বহুমুখী হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরিও রয়েছেন। এই অভিজ্ঞ যোদ্ধা ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তিনি কেবল দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে কাজের জবাবদিহি করতেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের আরও কয়েকজন সদস্য ছিলেন, যাঁদের মধ্যে অপারেশনস বিভাগের উপপ্রধান মেহেদি রাবানি ও গোয়েন্দা বিভাগের উপপ্রধান গোলামরেজা মেহরাবি অন্যতম।
শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের বহুমুখী হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরিও ছিলেন।আইআরজিসির শীর্ষ পদে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তাও ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামিও রয়েছেন।
ইরানের বিস্তৃত ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইআরজিসির বিশিষ্ট মহাকাশ বিভাগ তেহরানে ভূগর্ভস্থ একটি বাংকারে বৈঠকে থাকা আটজন শীর্ষ কমান্ডারের নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আইআরজিসির মহাকাশ বিভাগের দীর্ঘদিনের পরিচালক আলি আকবর হাজিজাদেহ রয়েছেন, তাঁর সঙ্গে বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ও ড্রোন উইংয়ের কমান্ডাররাও প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় ইরানের সেনাপ্রধান নিহত: রাষ্ট্রীয় টিভির খবর১৩ জুন ২০২৫নতুন কমান্ডাররা কারাখামেনি ইরানের সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ আবদোলরহিম মোসাভিকে সশস্ত্র বাহিনীর নতুন চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
৬৫ বছর বয়সী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোসাভি সেনাবাহিনীর প্রথম কোনো কর্মকর্তা, যিনি এ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে এ দায়িত্বে থাকা সবাই আইআরজিসি থেকে আসা কর্মকর্তা ছিলেন।
মোসাভিও একজন যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর তিনি সুপ্রিম ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিতে সামরিক প্রশিক্ষণ ও লেখাপড়া সম্পন্ন করেন।
আইআরজিসির নেতৃত্বের জন্য মোহাম্মদ পাকপুরকে বেছে নিয়েছেন খামেনি। যুদ্ধে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাকপুর আইআরজিসিতেই নিজের সামরিক জীবন শুরু করেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৮০-এর দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের সময় পাকপুরকে আইআরজিসির সাঁজোয়া ইউনিটের নেতৃত্ব দেন, পরে যুদ্ধে অংশ নেওয়া একটি ডিভিশনের দায়িত্বও সামলেছেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি নিহত১৩ জুন ২০২৫প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে পাকপুর টানা ১৬ বছর আইআরজিসির স্থলবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আইআরজিসিতে অপারেশনস বিভাগের উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বাহিনীর দুটি প্রধান সদর দপ্তরের নেতৃত্বেও ছিলেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি সেনা কর্মকর্তা আমির হাতামিকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ৫৯ বছর বয়সী হাতামি একজন অভিজ্ঞ সামরিক কর্মকর্তা, যিনি ইরাকে আক্রমণের সময়, বিশেষ করে অপারেশন মেরসাদের পর সেনাবাহিনীতে ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে ওপরে উঠে আসেন।
আইআরজিসির মহাকাশ বিভাগের নতুন প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ মোসাভি। ধারণা করা হয়, তিনি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন প্রযুক্তি ও মহাকাশ উৎক্ষেপণ কার্যক্রম উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
পদোন্নতি পাওয়া সব কমান্ডার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের ব্যাপারে তাঁদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ইরানজুড়ে এখন কেবল শোনা যাচ্ছে, ‘আপনারা যুদ্ধ শুরু করেছেন, আমরা শেষ করব।’
আরও পড়ুনআগেই ইরানে ঢুকে কীভাবে হামলার ক্ষেত্র গড়ে তুলেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ১৪ জুন ২০২৫এখন পর্যন্ত ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিসহ আবাসিক ভবনে আঘাত হেনেছে। হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ইরানের তেল ও গ্যাস সংস্থা, পেট্রোকেমিক্যাল, স্টিল ও অটোমোবাইল কারখানা এবং বিভিন্ন আবাসিক ভবনগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণের জবাব দিতে তেহরান রোববার ভোর পর্যন্ত ইসরায়েলের শক্তি অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে।
ইরান বলেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২৫ শিশুসহ ২২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। রোববারও তেহরানজুড়ে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প৯ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র ব হ ন ইসর য় ল র ব আইআরজ স র কম ন ড র কর ছ ন ন ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
তেল আবিবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশে আগুন
ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মধ্যেই দেশটির তেল আবিব শহরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরের পাশে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৩ এই খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েল হাওম নামের আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের সাতটি জায়গায় ইরান থেকে উড়ে আসা রকেট পড়েছে।
শুক্রবার ভোররাতে ইরানে ২০০ জঙ্গিবিমান দিয়ে হামলা চালায় ইসরায়েল। মূলত ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, আইআরজিসির বিমানবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহসহ অন্তত ২০ জন কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এ হামলায় সব মিলিয়ে অন্তত ৭৮ জনের প্রাণহানি এবং তিন শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান, তেল আবিবে বিস্ফোরণ–ধোঁয়ার কুণ্ডলী৩৩ মিনিট আগেএর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরায়েল আবার নতুন করে ইরানে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
এসব হামলার জবাব দিতে শুরু করেছে ইরান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে, সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে কাজ করছে। তেল আবিব শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনইরানে নতুন করে ইসরায়েলের হামলা, তেহরানে বিস্ফোরণ৫২ মিনিট আগে