ইশরাক হোসেনের কাছে দায়িত্বশীল ও পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করব: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
Published: 16th, June 2025 GMT
মেয়র পরিচয়ে সিটি করপোরেশনে ইশরাক হোসেনের সভা প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, তাঁর কাছে আরও দায়িত্বশীল ও পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করছেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে আজ সোমবার দুপুরে ইশরাকের করা একটি সভার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে রাতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করব, বিএনপির মতো একটা বড় দল নাগরিকদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নেবে। একই সঙ্গে যিনি (ইশরাক) পুরো কর্মসূচি পালন করছেন, নগর ভবনে গিয়ে বসছেন, তাঁর কাছ থেকেও আরও দায়িত্বশীল ও পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করব।’
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নগর ভবনের মিলনায়তনে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইশরাক হোসেন। সেখানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকের ব্যানারে ইশরাক হোসেনের পদবি মেয়র লেখা ছিল।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বলা হচ্ছে, ইশরাক হোসেনের পুরো বিষয়টাতে স্থানীয় সরকার বিভাগ আইন ভঙ্গ করেছে। আসলে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোনো আইন ভঙ্গ করেনি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনেরও মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে সেখানে নির্বাচন করেই নতুন একজনকে মেয়র করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া শপথ পাঠ করানোর কোনো সুযোগ নেই।’
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইশরাক হোসেনের সভার বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। সিটি করপোরেশন নগরের অধিকাংশ নাগরিক সেবা দিয়ে থাকে। আমাদের নিরীক্ষা অনুযায়ী, এক মাস ধরে আন্দোলনের কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নাগরিক সেবা হ্রাস পেয়েছে। সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আসছে। এ ছাড়া যেহেতু এখন বর্ষাকাল, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতাসহ আরও কিছু সমস্যা আছে। এগুলো মোকাবিলা করাটা সিটি করপোরেশনের জন্য একধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।’
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা ওয়াসা কার্যালয়ে বসে বৈঠক করছেন এবং কার্যক্রম চলমান রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনে যেতে চাইলে তাঁদের প্রতি মারমুখী আচরণ করা হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন র স থ ন য় সরক র কর মকর ত উপদ ষ ট করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট
এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।
আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:
হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।
মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।
প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।
কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?
Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?
হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।
বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?
জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।
তাহলে বাবা-মা কী করবেন?
শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।
একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।
তারা//