সম্প্রতি জামালপুরে রীতিমতো ঢক্কানিনাদের মাধ্যমে সাত পরিবারকে সমাজচ্যুতকরণের যেই ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা যদ্রূপ উদ্বেগজনক, তদ্রূপ বিস্ময়কর। সোমবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তুচ্ছ বিষয় লইয়া দুইজনের মধ্যে সংঘটিত হাতাহাতির ঘটনায় শহরের দাপুনিয়া এলাকায় কতিপয় ‘মাতব্বর’ একপক্ষের সহিত সংশ্লিষ্ট সাতটি পরিবারকে ‘একঘরে’ ঘোষণা করিয়াছেন। শুক্রবার রাত্রিকালেই মাইকিং করিয়া এলাকাবাসীকে জানাইয়া দেওয়া হয়– ‘সমাজচ্যুত’ পরিবারগুলির সহিত কেহ সামাজিকতা, অর্থ বিনিময়যোগ্য ক্রিয়াকলাপ করিতে পারিবে না। এই ‘নিয়ম’ ভঙ্গকারীও অনুরূপ শাস্তি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হইবে। যদিও জনৈক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে এবং স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীর উদ্যোগে প্রশাসন সোমবার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করিয়াছে; এহেন মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর যথাযথ শাস্তি প্রদান ব্যতীত সৃষ্ট উদ্বেগ দূর হইবে না। উপরন্তু একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে যখন মানবাধিকারের ধারণাটি নিছক সংবিধানের পৃষ্ঠাতেই সীমাবদ্ধ নহে শুধু; রাষ্ট্র ও সমাজের প্রায় সর্বস্তরে সম্প্রসারিত; তখন কতিপয় ব্যক্তির পক্ষে কী প্রকারে অন্যকে ‘গৃহবদ্ধ’ করিবার ন্যায় মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা কার্যকর করা সম্ভবপর হইল, তাহাও কম বিস্ময়কর নহে। স্থানীয়দের ভাষ্য, ভুক্তভোগী মুনসুর মিয়ার পরিবারের সহিত কিছু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির বিরোধ পূর্বচলিষ্ণু। শুক্রবারের হাতাহাতি উক্ত প্রভাবশালীদিগের হীনউদ্দেশ্য চরিতার্থে ঘৃতাহুতি দিয়াছে। এই সন্দেহও অমূলক নহে, প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট। যেই কারণে ভুক্তভোগী পরিবারসমূহের ‘গৃহবদ্ধতা’ কাটিলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অদ্যাবধি স্পর্শরহিত। উহাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনি পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে এহেন অপরাধমূলক ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা যাইবে না।
স্মরণ করা যাইতে পারে, ধর্মীয় ফতোয়া বা সামাজিক বিধিবিধান ইচ্ছানুযায়ী জারি করিয়া অতীতেও বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ তাহাদের অপছন্দের নিরীহ ব্যক্তিদের অনুরূপ শাস্তি প্রদান করিয়াছেন। যদিও সংবিধান ও প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী যেই কাহারও আইন স্বহস্তে ধারণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, সামাজিক বা আর্থিক প্রভাব ব্যবহার করিয়া সংশ্লিষ্ট অপরাধে সংযুক্ত ব্যক্তিগণ শাস্তি প্রক্রিয়া হইতে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করিতে সক্ষম হইয়াছেন। এমন অভিজ্ঞতাও বিরল নহে, এই প্রকার ঘটনা ঘটিবার পর সংবাদমাধ্যমে তাহা লইয়া কিছুদিন আলোচনার এক পর্যায়ে নূতন ঘটনা পূর্ব ঘটনাকে অন্তরালে লইয়া যায়। প্রশাসনও তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়িয়া পরিত্রাণ পাইতে সচেষ্ট হয়। অন্যদিকে অপরাধীরাও দ্বিগুণ উৎসাহে নূতন কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রবৃত্ত হয়। হলফ করিয়া বলা যায়, অতীতের আলোচ্য ঘটনার অনুরূপ ঘটনাবলির হোতারা যদি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করিত, তাহা হইলে অন্তত এহেন অপরাধমূলক ঘটনা হ্রাস পাইত। অদ্যাবধি, উক্ত বিষয়ে বিশেষত রাষ্ট্রের তরফ হইতে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়িয়া তুলিবার প্রয়াসও পরিলক্ষিত হয় নাই। ফলে যেই ধরনের সামাজিক প্রতিরোধ থাকিলে এহেন অপরাধকে অঙ্কুরেই বিনাশ করা যাইত, তাহা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরিদৃষ্ট নহে।
কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে সমাজচ্যুত বা ‘গৃহবদ্ধ’ করা এমন এক অবৈধ শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া, যাহা শুধু ভুক্তভোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকারই খর্ব করে না; সমাজে নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত বিভাজন সৃষ্টি করিয়া সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে পশ্চাৎমুখী করে। তৎসহিত রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করিয়া উহা আইনের শাসনকেও দুর্বল করিয়া দেয়। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজটি দুরূহ হইয়া পড়ে। অতএব অবিলম্বে আলোচ্য ঘটনার হোতাদের আইনের আওতায় আনয়ন এবং উহার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রক র য় পর ব র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষা ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
শাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর সেমিনার
শাকসুর নির্বাচন কমিশন ঘোষণা
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভর্তি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সাজেদুল করিম বলেন, “গুচ্ছ প্রক্রিয়া না থেকে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমাদের শিক্ষকরা আজ উপাচার্যের কাছে একটা স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। শিক্ষকরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকতে চায় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এককভাবে ভর্তি পরীক্ষার নেওয়ার জন্য সামনের দিকে কাজ এগোচ্ছি। অতিদ্রুত ভর্তি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি নির্ধারণ করে প্রকাশ করা হবে।”
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শাবিপ্রবি গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। এবারো একইভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে চিঠি পেলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী