Samakal:
2025-08-01@09:06:54 GMT

নিছক আইনের বিচ্যুতি নহে

Published: 16th, June 2025 GMT

নিছক আইনের বিচ্যুতি নহে

সম্প্রতি জামালপুরে রীতিমতো ঢক্কানিনাদের মাধ্যমে সাত পরিবারকে সমাজচ্যুতকরণের যেই ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা যদ্রূপ উদ্বেগজনক, তদ্রূপ বিস্ময়কর। সোমবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তুচ্ছ বিষয় লইয়া দুইজনের মধ্যে সংঘটিত হাতাহাতির ঘটনায় শহরের দাপুনিয়া এলাকায় কতিপয় ‘মাতব্বর’ একপক্ষের সহিত সংশ্লিষ্ট সাতটি পরিবারকে ‘একঘরে’ ঘোষণা করিয়াছেন। শুক্রবার রাত্রিকালেই মাইকিং করিয়া এলাকাবাসীকে জানাইয়া দেওয়া হয়– ‘সমাজচ্যুত’ পরিবারগুলির সহিত কেহ সামাজিকতা, অর্থ বিনিময়যোগ্য ক্রিয়াকলাপ করিতে পারিবে না। এই ‘নিয়ম’ ভঙ্গকারীও অনুরূপ শাস্তি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হইবে। যদিও জনৈক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে এবং স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীর উদ্যোগে প্রশাসন সোমবার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করিয়াছে; এহেন মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর যথাযথ শাস্তি প্রদান ব্যতীত সৃষ্ট উদ্বেগ দূর হইবে না। উপরন্তু একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে যখন মানবাধিকারের ধারণাটি নিছক সংবিধানের পৃষ্ঠাতেই সীমাবদ্ধ নহে শুধু; রাষ্ট্র ও সমাজের প্রায় সর্বস্তরে সম্প্রসারিত; তখন কতিপয় ব্যক্তির পক্ষে কী প্রকারে অন্যকে ‘গৃহবদ্ধ’ করিবার ন্যায় মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা কার্যকর করা সম্ভবপর হইল, তাহাও কম বিস্ময়কর নহে। স্থানীয়দের ভাষ্য, ভুক্তভোগী মুনসুর মিয়ার পরিবারের সহিত কিছু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির বিরোধ পূর্বচলিষ্ণু। শুক্রবারের হাতাহাতি উক্ত প্রভাবশালীদিগের হীনউদ্দেশ্য চরিতার্থে ঘৃতাহুতি দিয়াছে। এই সন্দেহও অমূলক নহে, প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট। যেই কারণে ভুক্তভোগী পরিবারসমূহের ‘গৃহবদ্ধতা’ কাটিলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অদ্যাবধি স্পর্শরহিত। উহাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনি পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে এহেন অপরাধমূলক ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা যাইবে না। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, ধর্মীয় ফতোয়া বা সামাজিক বিধিবিধান ইচ্ছানুযায়ী জারি করিয়া অতীতেও বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ তাহাদের অপছন্দের নিরীহ ব্যক্তিদের অনুরূপ শাস্তি প্রদান করিয়াছেন। যদিও সংবিধান ও প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী যেই কাহারও আইন স্বহস্তে ধারণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, সামাজিক বা আর্থিক প্রভাব ব্যবহার করিয়া সংশ্লিষ্ট অপরাধে সংযুক্ত ব্যক্তিগণ শাস্তি প্রক্রিয়া হইতে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করিতে সক্ষম হইয়াছেন। এমন অভিজ্ঞতাও বিরল নহে, এই প্রকার ঘটনা ঘটিবার পর সংবাদমাধ্যমে তাহা লইয়া কিছুদিন আলোচনার এক পর্যায়ে নূতন ঘটনা পূর্ব ঘটনাকে অন্তরালে লইয়া যায়। প্রশাসনও তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়িয়া পরিত্রাণ পাইতে সচেষ্ট হয়। অন্যদিকে অপরাধীরাও দ্বিগুণ উৎসাহে নূতন কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রবৃত্ত হয়। হলফ করিয়া বলা যায়, অতীতের আলোচ্য ঘটনার অনুরূপ ঘটনাবলির হোতারা যদি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করিত, তাহা হইলে অন্তত এহেন অপরাধমূলক ঘটনা হ্রাস পাইত। অদ্যাবধি, উক্ত বিষয়ে বিশেষত রাষ্ট্রের তরফ হইতে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়িয়া তুলিবার প্রয়াসও পরিলক্ষিত হয় নাই। ফলে যেই ধরনের সামাজিক প্রতিরোধ থাকিলে এহেন অপরাধকে অঙ্কুরেই বিনাশ করা যাইত, তাহা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরিদৃষ্ট নহে।

কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে সমাজচ্যুত  বা ‘গৃহবদ্ধ’ করা এমন এক অবৈধ শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া, যাহা শুধু ভুক্তভোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকারই খর্ব করে না; সমাজে নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত বিভাজন সৃষ্টি করিয়া সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে পশ্চাৎমুখী করে। তৎসহিত রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করিয়া উহা আইনের শাসনকেও দুর্বল করিয়া দেয়। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজটি দুরূহ হইয়া পড়ে। অতএব অবিলম্বে আলোচ্য ঘটনার হোতাদের আইনের আওতায় আনয়ন এবং উহার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রক র য় পর ব র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।

‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।

এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ