Samakal:
2025-06-17@00:45:53 GMT

নিছক আইনের বিচ্যুতি নহে

Published: 16th, June 2025 GMT

নিছক আইনের বিচ্যুতি নহে

সম্প্রতি জামালপুরে রীতিমতো ঢক্কানিনাদের মাধ্যমে সাত পরিবারকে সমাজচ্যুতকরণের যেই ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা যদ্রূপ উদ্বেগজনক, তদ্রূপ বিস্ময়কর। সোমবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তুচ্ছ বিষয় লইয়া দুইজনের মধ্যে সংঘটিত হাতাহাতির ঘটনায় শহরের দাপুনিয়া এলাকায় কতিপয় ‘মাতব্বর’ একপক্ষের সহিত সংশ্লিষ্ট সাতটি পরিবারকে ‘একঘরে’ ঘোষণা করিয়াছেন। শুক্রবার রাত্রিকালেই মাইকিং করিয়া এলাকাবাসীকে জানাইয়া দেওয়া হয়– ‘সমাজচ্যুত’ পরিবারগুলির সহিত কেহ সামাজিকতা, অর্থ বিনিময়যোগ্য ক্রিয়াকলাপ করিতে পারিবে না। এই ‘নিয়ম’ ভঙ্গকারীও অনুরূপ শাস্তি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হইবে। যদিও জনৈক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে এবং স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীর উদ্যোগে প্রশাসন সোমবার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করিয়াছে; এহেন মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর যথাযথ শাস্তি প্রদান ব্যতীত সৃষ্ট উদ্বেগ দূর হইবে না। উপরন্তু একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে যখন মানবাধিকারের ধারণাটি নিছক সংবিধানের পৃষ্ঠাতেই সীমাবদ্ধ নহে শুধু; রাষ্ট্র ও সমাজের প্রায় সর্বস্তরে সম্প্রসারিত; তখন কতিপয় ব্যক্তির পক্ষে কী প্রকারে অন্যকে ‘গৃহবদ্ধ’ করিবার ন্যায় মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা কার্যকর করা সম্ভবপর হইল, তাহাও কম বিস্ময়কর নহে। স্থানীয়দের ভাষ্য, ভুক্তভোগী মুনসুর মিয়ার পরিবারের সহিত কিছু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির বিরোধ পূর্বচলিষ্ণু। শুক্রবারের হাতাহাতি উক্ত প্রভাবশালীদিগের হীনউদ্দেশ্য চরিতার্থে ঘৃতাহুতি দিয়াছে। এই সন্দেহও অমূলক নহে, প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট। যেই কারণে ভুক্তভোগী পরিবারসমূহের ‘গৃহবদ্ধতা’ কাটিলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অদ্যাবধি স্পর্শরহিত। উহাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনি পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে এহেন অপরাধমূলক ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা যাইবে না। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, ধর্মীয় ফতোয়া বা সামাজিক বিধিবিধান ইচ্ছানুযায়ী জারি করিয়া অতীতেও বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ তাহাদের অপছন্দের নিরীহ ব্যক্তিদের অনুরূপ শাস্তি প্রদান করিয়াছেন। যদিও সংবিধান ও প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী যেই কাহারও আইন স্বহস্তে ধারণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, সামাজিক বা আর্থিক প্রভাব ব্যবহার করিয়া সংশ্লিষ্ট অপরাধে সংযুক্ত ব্যক্তিগণ শাস্তি প্রক্রিয়া হইতে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করিতে সক্ষম হইয়াছেন। এমন অভিজ্ঞতাও বিরল নহে, এই প্রকার ঘটনা ঘটিবার পর সংবাদমাধ্যমে তাহা লইয়া কিছুদিন আলোচনার এক পর্যায়ে নূতন ঘটনা পূর্ব ঘটনাকে অন্তরালে লইয়া যায়। প্রশাসনও তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়িয়া পরিত্রাণ পাইতে সচেষ্ট হয়। অন্যদিকে অপরাধীরাও দ্বিগুণ উৎসাহে নূতন কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রবৃত্ত হয়। হলফ করিয়া বলা যায়, অতীতের আলোচ্য ঘটনার অনুরূপ ঘটনাবলির হোতারা যদি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করিত, তাহা হইলে অন্তত এহেন অপরাধমূলক ঘটনা হ্রাস পাইত। অদ্যাবধি, উক্ত বিষয়ে বিশেষত রাষ্ট্রের তরফ হইতে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়িয়া তুলিবার প্রয়াসও পরিলক্ষিত হয় নাই। ফলে যেই ধরনের সামাজিক প্রতিরোধ থাকিলে এহেন অপরাধকে অঙ্কুরেই বিনাশ করা যাইত, তাহা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পরিদৃষ্ট নহে।

কোনো ব্যক্তি বা পরিবারকে সমাজচ্যুত  বা ‘গৃহবদ্ধ’ করা এমন এক অবৈধ শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া, যাহা শুধু ভুক্তভোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকারই খর্ব করে না; সমাজে নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত বিভাজন সৃষ্টি করিয়া সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে পশ্চাৎমুখী করে। তৎসহিত রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করিয়া উহা আইনের শাসনকেও দুর্বল করিয়া দেয়। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজটি দুরূহ হইয়া পড়ে। অতএব অবিলম্বে আলোচ্য ঘটনার হোতাদের আইনের আওতায় আনয়ন এবং উহার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রক র য় পর ব র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য