চট্টগ্রামে একটি গেস্টহাউসে সাংবাদিক পরিচয়ে ক্যামেরা নিয়ে তল্লাশি চালানোর ভিডিও ভাইরাল হওয়া সেই ব্যক্তিকে চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইব্রাহিম খলিল এই আদেশ দেন।

তাঁর নাম হান্নান রহিম তালুকদার। তিনি আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। গতকাল সোমবার রাতে নগরের কোতোয়ালি মোড় থেকে হান্নানকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা–পুলিশ।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চান্দগাঁও থানার চাঁদাবাজির মামলায় আসামি হান্নান রহিম তালুকদারকে কারাগার পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁর জামিনের আবেদন করা হলে আদালত আগামীকাল বুধবার শুনানির জন্য রেখেছেন।

‘সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্টহাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি’ শিরোনামে গত রোববার প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার দাবি ওঠে।

গত শনিবার দুপুরে হান্নান রহিম তালুকদার নামের ফেসবুক আইডিতে গেস্টহাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশির একটি ভিডিও আপলোড হয়। ১৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিও আপলোডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। গেস্টহাউসে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে কক্ষে কক্ষে অতিথিদের নাম-পরিচয়, জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সাংবাদিক পরিচয়ে এভাবে কক্ষে কক্ষে গিয়ে তল্লাশি চালাতে পারেন কি না কেউ? পুলিশও বলছে, এ ধরনের অভিযান চালানোর এখতিয়ার সাংবাদিকের নেই। তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

হান্নান রহিম তালুকদার নিজের ফেসবুক আইডিতে পরিচয় দিয়েছেন দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ–এর সম্পাদক ও সিএসটিভি২৪–এর চেয়ারম্যান। তবে দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ ও সিএসটিভি২৪–এর নিবন্ধন আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ফেসবুকের দেওয়া বিভিন্ন ছবি-ব্যানারে নিজেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রেসক্লাবের সদস্য নন তিনি। এ ছাড়া ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে নগর ও জেলার বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ছবি, ভিডিও আপলোড করেছেন। নিজেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব পদপ্রার্থী বলেও উল্লেখ করে পোস্টার ও ছবি পোস্ট করেছেন।

পুলিশ জানায়, হান্নান রহিমের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় ২০০৬ সালের ৯ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে একটি মামলা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল নগরের চান্দগাঁও থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মারধর, হত্যাচেষ্টা ও চুরির মামলা হয়েছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা হয়েছিল। এ ছাড়া ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সাংবাদিক এফ এম মিজানুর রহমানকে হুমকির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় জিডি রয়েছে।

হান্নান রহিম তালুকদারের আপলোড করা ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নগরের বহদ্দারহাটে একটি গেস্টহাউসের প্রধান ফটকের দরজা খোলা হয়। গেস্টহাউসের অভ্যর্থনা কক্ষে গিয়ে অতিথি কারা কারা আছেন, জানতে চান ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে সেখানে থাকা অতিথিদের বের করে আনা হয়। তাঁদের কাছে পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। কেন, কার সঙ্গে এসেছেন—এসব প্রশ্নও করা হয়।

আরও পড়ুনসাংবাদিক পরিচয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি১৫ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ সব ক আপল ড

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ