Prothomalo:
2025-06-18@13:14:48 GMT

কেন শিরক সবচেয়ে বড় পাপ

Published: 18th, June 2025 GMT

ইসলামে চূড়ান্ত সত্য হলো তাওহিদ, মানে আল্লাহর একত্ব। বিপরীতে, শিরক বা তার অংশীদার সাব্যস্ত করা হলো চূড়ান্ত পাপ। শুধু তা-ই নয়, শিরক ইসলামে সবচেয়ে জঘন্য বিষয়। কোরআনে বলা হয়েছে: ‘আর তারা বলল, আর–রহমান (দয়াময়) একটি পুত্র গ্রহণ করেছেন। তোমরা এক ভয়ানক বিষয়ের অবতারণা করেছ। এর ফলে আকাশ যেন ফেটে যায়, পৃথিবী বিদীর্ণ হয় এবং পাহাড় ধসে পড়ে।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত: ৮৮-৯০)

আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং প্রয়োজন থেকে মুক্ত। তাহলে তিনি কেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের ওপর জোর দেন এবং শিরক অপছন্দ করেন? এ প্রশ্নের উত্তর বোঝার আগে জেনে নেওয়া জরুরি:

আসল কথা হলো, শিরক সমগ্র ঐশ্বরিক বাস্তবতাকে লঙ্ঘন করে, তাই এটি এমন একটি গাছ, যার কোনো শিকড় বা ফল নেই।

১.

আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ: তাঁর আদেশ ও নিষেধ আমাদের প্রয়োজন, তাঁর নয়।

২. আল্লাহ ক্ষতি বা উপকার থেকে মুক্ত: তিনি যা আদেশ বা নিষেধ করেন, তা আমাদের কল্যাণ ও ক্ষতির কারণে করেন। এ জন্য কোরআন ওহিকে নিরাময়, পথপ্রদর্শন, আলো ও রহমত হিসেবে বর্ণনা করে।

৩. আল্লাহ আল-হক (সত্য) আর শিরক তাঁর একত্বের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন।

৪. আল্লাহ আল-মুকসিত (ন্যায়বিচারক): পাপকে শাস্তি না দেওয়া তাঁর ন্যায়বিচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শিরক, সবচেয়ে বড় পাপ হওয়ায়, এর শাস্তিও সবচেয়ে কঠিন।

আরও পড়ুনযে ৬ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না২২ মে ২০২৫শিরক কেন আল্লাহ ক্ষমা করবেন না

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আল্লাহ অন্য পাপ ক্ষমা করেন, তাহলে শিরক কেন ক্ষমা করেন না? কোরআনে শিরকের জন্য একটি গাছের উপমা দেওয়া হয়েছে, ‘এবং একটি মন্দ কথার উপমা একটি মন্দ গাছের মতো, যা মাটির ওপর থেকে উৎপাটিত, যার কোনো স্থিতিশীলতা নেই।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ২৬)

আসল কথা হলো, শিরক সমগ্র ঐশ্বরিক বাস্তবতাকে লঙ্ঘন করে, তাই এটি এমন একটি গাছ, যার কোনো শিকড় বা ফল নেই। তাওহিদের ওপর ভিত্তিতে বেড়ে ওঠা গাছ সব সময় শিকড়যুক্ত ও ফলদায়ক হয়। আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত এই ভিত্তির ওপর নির্ধারিত। আল্লাহর শিরককে পছন্দ করেন না, কেননা, তিনি চান না আমরা এই দুনিয়া ও পরকালে শিরকের ক্ষতির মধ্যে পড়ি।

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? তিনি বললেন, “তুমি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করছ, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।”সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৪৭৭কেন শিরক এত মন্দ

তাওহিদ এমন একটি নীতি, যা কখনো লঙ্ঘন করা যায় না । শিরক এই নীতির সরাসরি লঙ্ঘন, তাই এটি চূড়ান্ত পাপ। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘শিরক হলো ‘মানুষ যার জন্য সৃষ্ট হয়েছে তার সরাসরি বিরোধিতা করা।’ (তাবিকুল হিজরাতাইন, পৃ. ৫২৪)

কেননা, শিরকের মূলে রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা—জীবনের উদ্দেশ্য এবং স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। কুফর (অবিশ্বাস) শব্দটি অকৃতজ্ঞতাকেও বোঝায়। বিশ্বাসঘাতকতা সব পাপের মূল। রাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো রাষ্ট্রদ্রোহ, কারণ এটি রাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। ব্যভিচার বৈবাহিক সম্পর্কে বিশ্বাসঘাতকতা এবং হত্যা ও চুরি সামাজিক চুক্তির বিশ্বাসঘাতকতা।

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? তিনি বললেন, “তুমি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করছ, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৪৭৭)

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, শিরক আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাকে হ্রাস করে এবং তা অন্য কাউকে স্থানান্তর করে, যা প্রেমিকের প্রতি প্রিয়তমের সবচেয়ে বড় অপরাধ। আল্লাহ, সবচেয়ে উদার, আমাদের অস্তিত্ব ও সব নিয়ামত দিয়েছেন। তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা সবচেয়ে বড় অপরাধ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘হে মানুষ, তোমার দয়াময় রব থেকে কিসে তোমাকে বিভ্রান্ত করল? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাকে গঠন করেছেন, এবং যেরূপে ইচ্ছা তোমাকে সুষম করেছেন।’ (সুরা ইনফিতার, আয়াত: ৬-৮)

তা ছাড়া আল্লাহ মানুষকে আমানত (দায়িত্ব) দিয়েছেন, যা আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড় বহন করতে অস্বীকার করেছিল। এই আমানতের লঙ্ঘন শিরকের মাধ্যমে হয়। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৭২)

শিরকের চূড়ান্ত ক্ষতি পরকালে, যেখানে এটি ব্যক্তির সব কাজ বাতিল করে এবং তাকে চিরস্থায়ী শাস্তির দিকে নিয়ে যায়।আরও পড়ুনসুরা ইখলাস পাঠে জান্নাত লাভের আশ্বাস২৮ ডিসেম্বর ২০২৪শিরকের ক্ষতি

শিরক মানুষকে আল্লাহর ইবাদত থেকে দূরে সরিয়ে তার নিজের ইচ্ছাকে ঐশ্বরিক করে তোলে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘তুমি কি তাকে দেখেছ, যে তার নিজের ইচ্ছাকে তার মাবুদ বানিয়েছে?’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৪৩)

পরকালের ক্ষতি: শিরকের চূড়ান্ত ক্ষতি পরকালে, যেখানে এটি ব্যক্তির সব কাজ বাতিল করে এবং তাকে চিরস্থায়ী শাস্তির দিকে নিয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘তোমার ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহি করা হয়েছে, যদি তুমি শিরক করো, তোমার কাজ বাতিল হবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে হবে।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৬৫)

ইবনুল কাইয়্যিম বলেন, শিরক ব্যক্তিকে জান্নাত, আল্লাহর রহমত এবং তাঁর যত্ন থেকে বঞ্চিত করে। (তারিকুল হিজরাতাইন, পৃ. ৫২৭)

মানসিক ক্ষতি: শিরক মানুষের জীবনের অর্থ ও পরিপূর্ণতাকে ধ্বংস করে। পবিত্র কোরআনে শিরকের তুলনা দেওয়া হয়েছে এমন এক দাসের সঙ্গে, যার একাধিক পরস্পরবিরোধী মালিক রয়েছে: ‘আল্লাহ একটি উপমা দিয়েছেন: একজন দাস, যার ওপর পরস্পরবিরোধী অংশীদারদের মালিকানা এবং আরেকজন, যে একজনের অধীনে। তারা কি সমান?’ (সুরা জুমার, আয়াত: ২৯)

এই উপমা দেখায় যে শিরক মানুষকে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতায় নিয়ে যায়। ড. ভিক্টর ফ্রাঙ্কলের গবেষণা দেখায়, জীবনের অর্থের অভাব মানুষকে মানসিকভাবে ধ্বংস করে। শিরক জীবনের উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে, ফলে মানুষ উদ্বেগ ও অস্থিরতায় ভোগে।

হে মানুষ, তোমাদের রব এক এবং তোমাদের পিতা আদম এক। আরবের ওপর অ-আরবের, বা অ-আরবের ওপর আরবের, অথবা সাদা চামড়ার ওপর কালো চামড়ার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্ব কেবল ধর্মপরায়ণতায়।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,৪৮৯

বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতি: শিরকের কারণে মানুষ অযৌক্তিক কুসংস্কার, যেমন, অশুভ লক্ষণ, ভাগ্য বা জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর নির্ভর করে। নবীজি (সা.) এ ধরনের কুসংস্কারকে শিরক হিসেবে নিষিদ্ধ করে বলেছেন, ‘মন্ত্র, তাবিজ ও জাদু শিরক।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৮৩)

শিরক বিশ্বের প্রাকৃতিক শৃঙ্খলার বিপরীত, যা তাওহিদের মাধ্যমে বোঝা যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘যদি আকাশ ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া অন্য ইলাহ থাকত, তবে তা ধ্বংস হয়ে যেত।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ২২)

সামাজিক ক্ষতি: শিরকভিত্তিক সমাজে শ্রেণিবিন্যাস ও প্রান্তিক মানুষের ওপর নিপীড়ন দেখা যায়। তাওহিদ মানুষের সমতার ভিত্তি প্রদান করে। নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘হে মানুষ, তোমাদের রব এক এবং তোমাদের পিতা আদম এক। আরবের ওপর অ-আরবের, বা অ-আরবের ওপর আরবের, অথবা সাদা চামড়ার ওপর কালো চামড়ার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্ব কেবল ধর্মপরায়ণতায়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,৪৮৯)

ইসলামের প্রথম দিকের সমাজগুলো তাওহিদের এই সমতাভিত্তিক দৃষ্টিকোণের কারণে অনন্য ছিল। মুক্ত ক্রীতদাস, নারী ও প্রান্তিক মানুষ উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

সূত্র: ইয়াকিন ইনস্টিটিউট

আরও পড়ুনইমান নষ্ট হওয়ার কারণ ২৯ এপ্রিল ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরব র ওপর অ আরব র এমন এক আল ল হ জ বন র কর ছ ন শ রক র সবচ য পরক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় আ’লীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এসব অভিযান চালানো হয়। 

ডিবি বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা দেশকে অস্থিতিশীল করাসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা এবং মুজাহিদ নগর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, কাফরুল থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক আল মামুন, ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম লিংকন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী লুৎফর রহমান ও তুরাগ থানার ৫৩ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। 

ডিবি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে বেলায়েত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি ওয়ারী বিভাগ। সেদিন ডিবি মিরপুর বিভাগের একটি দল রাত পৌনে ১২টার দিকে ধানমন্ডি থেকে আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করে। কাছাকাছি সময়ে মিরপুরের পাইকপাড়া থেকে শফিকুল ইসলাম লিংকনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি রমনা বিভাগ। একই রাতে ডিবি লালবাগ বিভাগ চকবাজার থেকে লুৎফর রহমান এবং ডিবি ওয়ারী বিভাগ দিয়াবাড়ি থেকে শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ