ম্যানসিটির নতুন অধিনায়কের নাম জানালেন গার্দিওলা
Published: 18th, June 2025 GMT
ম্যানচেস্টার সিটির নতুন মৌসুম শুরুর আগে ক্লাবের নতুন অধিনায়ক হিসেবে বার্নার্ডো সিলভার নাম ঘোষণা করেছেন পেপ গার্দিওলা। যদিও সাধারণত খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের ভোটে অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়, তবে এবার সেই প্রক্রিয়া না মেনে নিজেই সিলভাকে অধিনায়ক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গার্দিওলা। তার সঙ্গে সহ-অধিনায়ক হিসেবে আছেন রুবেন ডিয়াস, রোদরি এবং আর্লিং হালান্ড।
এই মৌসুমটাই হতে পারে বার্নার্ডো সিলভার শেষ মৌসুম, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। কারণ, ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তি থাকলেও নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালে মোনাকো থেকে আসা এই ৩০ বছর বয়সী ফুটবলারের নিজের শৈশবের ক্লাব বেনফিকায় ফেরার গুঞ্জনও রয়েছে।
সিলভা বলেন, ‘‘আমি কী করব সেটা আমি জানি। তবে এখন সেটা বলার সময় নয়। আমি পুরোপুরি সিটির হয়ে এই মৌসুমে ভালো খেলার দিকেই মনোযোগী। সঠিক সময় আসলে তখন এ বিষয়ে কথা বলব।’’
আরো পড়ুন:
চোখের জলে, উষ্ণ অভ্যর্থনায় ম্যানসিটি ছাড়লেন ডি ব্রুইন
ম্যাচ জিতিয়ে মর্মাহত ডি ব্রুইনে জানালেন, চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব পাননি
তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘আমার চুক্তির আর এক বছর বাকি। তাই পরের মৌসুমে আমি সিটি ছাড়তে পারি। আগেও কিছু সুযোগ এসেছিল, এবারও ছিল। তবে এবার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার আগ পর্যন্ত আমি ম্যানচেস্টার সিটিতেই থাকছি।’’
গত মৌসুমে ক্লাবের ‘লিডারশিপ গ্রুপ’-এর অংশ ছিলেন বার্নার্ডো। সেখান থেকেই এবার মূল অধিনায়কের ভূমিকায় পদোন্নতি পেলেন তিনি।
গত বছর কাইল ওয়াকারকে অধিনায়ক করা হলেও চলতি মৌসুমে গার্দিওলা নিজেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, গত মৌসুমে কিছু বিষয় তার অপছন্দ হয়েছিল। যা তাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
কাইল ওয়াকার জানুয়ারিতে ধারে ইতালির ক্লাব এসি মিলানে গিয়েছিলেন। তবে চুক্তিটি স্থায়ী করা হয়নি। পাশাপাশি, ক্লাব বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকেও বাদ পড়েছেন তিনি।
গার্দিওলা বলেন, ‘‘এটাই আমার কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথমবার আমি নিজেই অধিনায়ক নির্বাচন করেছি। গত মৌসুমে যা যা ঘটেছে তা আমার পছন্দ হয়নি। তাই এবার আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাঝে মাঝে কোচ হিসেবে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এ বছর আমি সেটাই করেছি। চারজন অধিনায়ক ঠিক করেছি, বিশ্বকাপের পর প্রয়োজনে আরও একজন বা দুজনকে যুক্ত করব।’’
প্রথমবারের মতো সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন আর্লিং হালান্ড। জানুয়ারিতে দীর্ঘ ১০ বছরের চুক্তিতে সই করেন তিনি। গার্দিওলার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে তিনিই হবেন সিটির মূল অধিনায়ক।
‘‘হালান্ড এখনো তরুণ। তবে তাকে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি এখন থেকেই শেখা শুরু করতে হবে,’’ বলেন গার্দিওলা। ‘‘আমার বিশ্বাস সে এখানে আরও বহু বছর থাকবে। একসময় না একসময় সিটিতে সে-ই হবে প্রথম অধিনায়ক।’’
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।