ফিলিস্তিন-ইরানে হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে ইসরাইলি পতাকায় অগ্নিসংযোগ
Published: 19th, June 2025 GMT
ফিলিস্তিন ও ইরানসহ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দখলদার অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ।
সংঠনটি ইসরাইলের আগ্রাসন মোকাবিলায় ফিলিস্তিন ও ইরানকে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও সৈন্য দিয়ে সহযোগিতা করতে সব মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এবারো দেশসেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিগত সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে: আব্দুল মঈন খান
বিক্ষোভে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ফজলুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাকিস্তানি ছাত্র মোহাম্মদ তাহের, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আহ্বায়ক রাকিব মণ্ডল প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার সদস্য সচিব মো.
মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, “৭০ বছর ধরে অবৈধভাবে ফিলিস্তিন দখল করে রাখার ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার পর ইরানে মুসলিমবিরোধী আগ্রাসন শুরু হয়েছে। তাই অস্তিত্বের স্বার্থে বাংলাদেশের মুসলমান, আমেরিকার মুসলমান, জাপানের মুসলমান, সৌদি আরবের মুসলমান, আফ্রিকার মুসলমানসহ গোটা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল মুসলমান যদি এক ও অভিন্ন সত্তা হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারি তাহলে আমরা হামলা ও আগ্রাসন থেকে বাঁচতে পারব না।”
এ সময় নিপীড়িত আক্রান্ত মুসলমানদের রক্ষায় জাতিসংঘের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমরা যদি মনে করি জাতিসংঘ মুসলমানদের রক্ষা করবে তাহলে আমরা ভুলের মধ্যে থাকব। কারণ জাতিসংঘে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা কোন মুসলিম রাষ্ট্রের নেই। যখনই জাতিসংঘে মুসলিম বিরোধী ইসরায়েলি ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব উত্থাপিত হয় তখনই যুক্তরাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে ভেটো দেয়। দেখা গেছে, মানবতা বিরোধী অপরাধের পক্ষে, জায়নবাদের পক্ষে ও মুসলিম উম্মাহর বিপক্ষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করা হয়েছে।”
বিক্ষোভ শেষে ইসরাইল বিরোধী একটি মিছিল কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও কলাভবন হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে শেষ হয়।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ম সলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘আল–কাহহার’: অপরাজিত প্রভুত্ব শুধু আল্লাহর
যখন আকাশের বিশালতা থরথর করে কাঁপে, পাহাড়ের গর্বিত শিখর নত হয়, তখন একটি নাম হৃদয়ের গভীরে শিহরণ জাগায়, সেটি হলো আল–কাহহার। তিনি আল্লাহ, যিনি সৃষ্টির প্রতিটি কণাকে তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর সামনে কোনো শক্তি টিকে না, কোনো অহংকার টেকে না।
তিনি সেই সত্তা, যিনি অত্যাচারীদের ধূলিসাৎ করেন, মৃত্যুর মাধ্যমে সবাইকে নতজানু করেন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বচরাচর পরিচালিত হয়। আল–কাহহার নামটি শুধু তাঁর শক্তির প্রকাশ নয়; বরং আমাদের জীবনকে আলোকিত করার এক আধ্যাত্মিক পথনির্দেশ। আসুন, এই নামের গভীর তাৎপর্যে ডুব দিই, যা আমাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঞ্চার করে।
আল–কাহহার আল্লাহর সেই গুণ, যা তাঁর সর্বোচ্চ প্রভুত্ব ও অপরিমেয় ক্ষমতার কথা বলে। তিনি সেই সত্তা, যাঁর হাতে সমগ্র সৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত।
বলো, বিভিন্ন ইলাহ ভালো, না একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহ?সুরা রাদ, আয়াত: ১৬পবিত্র কোরআনে এ নামটি ছয়বার উল্লেখিত হয়েছে এবং প্রতিবারই এটি তাঁর আল–ওয়াহিদ নামের সঙ্গে জুড়ে এসেছে। সুরা আর–রাদে বলা হয়েছে, ‘বলো, বিভিন্ন ইলাহ ভালো, না একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহ?’ (আয়াত: ১৬)
আবার সুরা ইবরাহিমে বলা হয়েছে, ‘এবং তারা সবাই একক, অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।’ (আয়াত: ৪৮)
এই আয়াতগুলো আমাদের হৃদয়ে গেঁথে দেয় যে তিনি একক এবং তাঁর ক্ষমতার সামনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি সেই সত্তা, যাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটে না।
আরও পড়ুন‘আল-ওয়াহিদ’ আল্লাহর অনন্য নাম২৩ জুন ২০২৫ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, ‘আল–কাহহার তিনি, যিনি অহংকারীদের শাস্তির মাধ্যমে নত করেন এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সব সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর মহিমার সামনে সবকিছু অসহায়।’ (আল–সালাবি, কিসসাতু বাদ’ইল খালক, পৃ. ১১৩৬)
তিনি সেই সত্তা, যাঁর ক্ষমতা কোনো সীমার মধ্যে বাঁধা নয়। পবিত্র কোরআন বলে, ‘কোনো প্রাণী নেই, যার কপাল তাঁর হাতে নেই। তাঁর হুকুম তাতে চলে এবং তাঁর ফয়সালা তাতে ন্যায়পরায়ণ।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৫৬)
এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছুই নেই—না আমাদের জীবন, না আমাদের মৃত্যু।
আল–কাহহার ও আল–ওয়াহিদ নামের সংযোগ একটি অপূর্ব সত্য উন্মোচন করে। আল্লাহর একত্ব তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যিনি সবকিছুর ওপর অপ্রতিরোধ্য, তিনিই একক। ক্ষমতা ও একত্ব একে অপরের পরিপূরক। দুটি সমান ক্ষমতাশালী সত্তা কখনোই থাকতে পারে না।’ (তারীকুল হিজরাতাইন, পৃ. ২৩৩)
আল–কাহহার তিনি, যিনি অহংকারীদের শাস্তির মাধ্যমে নত করেন এবং মৃত্যুর মাধ্যমে সব সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর মহিমার সামনে সবকিছু অসহায়।ইমাম খাত্তাবি (রহ.), কিসসাতু বাদ’ইল খালক, পৃ. ১১৩৬পৃথিবীর রাজারা তাদের সেনাবাহিনী ও সমর্থকদের দ্বারা ক্ষমতা প্রয়োগ করে, কিন্তু আল্লাহ তাঁর একক সত্তায়, কারও সাহায্য ছাড়াই সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি সেই সত্তা, যাঁর কাছে সবাই নতজানু, যিনি কোনো সাহায্যকারীর মুখাপেক্ষী নন।
আল্লাহর এই ক্ষমতা শুধু শাস্তি বা ধ্বংসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে একটি অপূর্ব ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘তিনি বাতাস সৃষ্টি করেছেন, যা একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি পানি সৃষ্টি করেছেন, যাকে বাতাস প্রভাবিত করে। তিনি আগুন সৃষ্টি করেছেন, যাকে পানি নিভিয়ে দেয়। তিনি লোহা সৃষ্টি করেছেন, যাকে আগুন গলিয়ে দেয়। তিনি পাথর সৃষ্টি করেছেন, যাকে লোহা ভেঙে দেয়।’ (তারীকুল হিজরাতাইন, পৃ. ২৩৩)
এই ভারসাম্য তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার প্রমাণ। তিনি সৃষ্টির প্রতিটি উপাদানকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন, যেন প্রতিটি তাঁর ইচ্ছার অধীনে থাকে।
আরও পড়ুনআল্লাহর ‘আল মুমিন’ নামের মহিমা১৮ জুন ২০২৫তবে আল্লাহর এই অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাকে অস্বীকার করে না। তিনি আমাদের পছন্দের স্বাধীনতা দিয়েছেন, যার জন্য আমরা জবাবদিহি করব। আমরা যখন কোনো কাজ করি, যেমন ভ্রমণের পরিকল্পনা, খাওয়া বা বিশ্রাম, তখন আমরা তা নিজেদের ইচ্ছায় করি। এই স্বাধীনতা আমাদের দায়িত্বশীল করে। ‘তিনি অপ্রতিরোধ্য, কিন্তু তিনি আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন। আমাদের কাজ আমাদের পছন্দের ফল।’ (মা’আল্লাহ, সালমান আওদাহ, পৃ. ১০৭)
এই সত্য আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদেরকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির প্রতি সচেতন করে।
পবিত্র কোরআনে এ নামটি ছয়বার উল্লেখিত হয়েছে এবং প্রতিবারই এটি তাঁর আল–ওয়াহিদ নামের সঙ্গে জুড়ে এসেছে।আল–কাহহার নামটি আমাদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভীতি জাগায়। যখন আমরা জীবনের ঝড়ে হতাশ হই, তখন এ নামটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। তাঁর অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা আমাদের শেখায় যে আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর ইচ্ছার অধীনে। আমরা যখন তাঁর এই নামের প্রতি চিন্তা করি, তখন আমাদের হৃদয়ে তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও বিনয় আরও গভীর হয়। তিনি আমাদের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক এবং আমাদের একমাত্র উপাস্য।
এ নামটি আমাদের জীবনে একটি আলোকবর্তিকা। তিনি আমাদের শেখান যে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নির্ভর করা আমাদের কর্তব্য। তাঁর ক্ষমতার সামনে আমরা নতজানু হই, তাঁর প্রভুত্বের সাক্ষ্য দিই। তিনি আল–কাহহার, যিনি অপ্রতিরোধ্য, একক ও অতুলনীয়। তাঁর মহিমার কাছে আমাদের হৃদয় নুয়ে পড়ে এবং আমরা তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পণের মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পাই।
সূত্র: আল–জাজিরা ডট নেট। অনুবাদ: মনযূরুল হক
আরও পড়ুনইসমে আজমের শক্তি ও রহস্য৩০ জুন ২০২৫