‘শরণার্থী’ শব্দটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে ‘বাস্তুচ্যুতির’। একটি নিবিড় যোগাযোগ আছে ‘ছিন্নমূল’ আর ‘ভীতির’ সঙ্গে। আর যোগসূত্র আছে ‘অসহায়ত্বের’ সঙ্গে। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে এসব শব্দগুচ্ছ নানাভাবে ফিরে ফিরে আসে।
আজ সারা বিশ্বে ১২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত ও ছিন্নমূল। পৃথিবীতে নানা রকমের সংঘাত, সংঘর্ষ, সহিংসতা, জীবনভীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণে এসব মানুষ তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। এই ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী জাপানের মতো দেশের মোট জনসংখ্যার সমান। এই ১২ কোটি মানুষের মধ্যে ৪ কোটি লোক অন্য দেশে শরণার্থী, ৭ কোটি মানুষ দেশের মধ্যেই অভ্যন্তরীণভাবেই বাস্তুচ্যুত, ৮০ লাখ লোক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী, ৪০ লাখ মানুষের কোনো দেশ নেই। ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যাই ৫০ লাখ। পৃথিবীতে ৬০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষেরই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে।
যেখানে সংঘাত, দারিদ্র্য এবং জলবায়ুর পরিবর্তন খুব তীব্র, সেখানে অভ্যন্তরীণ উৎখাত ঘটে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দরিদ্রতম এবং প্রান্তিকতম জনগোষ্ঠীই এতে আক্রান্ত হন। সাম্প্রতিক সময়ে লেবানন, গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো, ফিলিস্তিন, সুদান ও ইউক্রেনের মতো দেশ এবং ভূখণ্ডগুলোতে সংঘাত ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সংখ্যা বর্তমানে আফগানিস্তান, কলাম্বিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনের বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি বিরাট সংখ্যার জন্ম দিয়েছে। নানা দুর্যোগ মানুষের আবাসন এবং জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে বহু লোক এখনো সেসব ক্ষেত্রে কেন স্থায়ী সমাধান পায়নি এবং বছরের শেষে তারা এখনো উদ্বাস্তু।
একজন শরণার্থী ‘আশ্রয়’ প্রার্থনা করে অন্যত্র, অন্যের কাছে। সে আশ্রয় খোঁজা সব সময়ই ‘বস্তুগত আশ্রয়’ নয়, ‘মানসিক আশ্রয়ও’ বটে। মানুষ আত্মসত্তার আশ্রয় খোঁজে জীবনভর। ব্যক্তি মানুষ যেমন শরণার্থী, তেমনি তো গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষও। বাস্তুচ্যুত মানুষ ভিনদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করে। ব্যক্তিজীবনেও তো আমরা সতত আশ্রয় খুঁজি। কারণে–অকারণে মায়ের আঁচলে কি আশ্রয় নিইনি? মনে কি হয়নি যে ওটাই বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়? ভয় যখন আমাদের গ্রাস করে, তখন বাবার স্নেহবাক্যের কাছে নিজেকে সমর্পণ করি। অসফলতা যখন আমাদের ভঙ্গুর করে, তখন শিক্ষকের আশ্বাসবাণীর কাছে আশ্রয় নিই। নৈরাশ্য যখন আমাদের অন্ধকারে নিমজ্জিত করে, তখন বন্ধুর কাঁধে মাথা রাখি। দুঃখ-বেদনার অশান্তিতে শান্তির আশ্রয় খুঁজি প্রিয়জনের বক্ষে। মনে রাখা দরকার, মানুষ দুঃখে অন্যের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, সুখে সে অন্যকে আশ্রয় দেয়।
ব্যক্তিমানুষ তো শরণার্থী তার নিজের কাছেও। মানুষ আশ্রয় খোঁজে তার আবেগের কাছে, তার কান্নার কাছে, তার অভিমানের কাছে। কত সময়ে কত অবস্থায় নিজের আবেগ ভিন্ন আর অন্য কিছুর কাছে যাওয়ার অবস্থা থাকে না। কত নৈরাশ্য, কত অবিচার, কত অপমানে এক নীরব অশ্রুপাতের কাছে নিজেকে মানুষ সমর্পণ করে। প্রিয়জনের কথায়, কাজে যখন মানুষ আঘাত পায়, তখন সে আশ্রয় খোঁজে অভিমানের কাছে। কান্না, আবেগ আর অভিমানের কোনো ভাষা নেই, তবু তারা মানুষকে কতভাবে সান্ত্বনা দেয়।
কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও তো জানি যে শরণার্থী হলেও আশ্রয় মেলে না প্রায়ই। সারা পৃথিবীতে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ আজও আশ্রয়হীন। নানা বিত্তবান নগরীতে কতশত মানুষ ঠিকানাহীন। বঞ্চিত মানুষও তো শরণার্থী এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে। রাষ্ট্র উদাসীন সেসব ব্যপারে। নানা সমাজে সংখ্যালঘুদের অধিকার বঞ্চিত করে তাদের অত্যাচার করে আশ্রয়হীন করার প্রক্রিয়ায় সতত তৎপর কত অপশক্তি। নারীর প্রতি নির্যাতন ও ধর্ষণের ক্ষেত্রে তাঁদের আশ্রয়ের জায়গাটি কি দিতে পারছে রাষ্ট্র ও সমাজ? তবে কি সেই ‘না-ভাবতে চাওয়া’ ভাবনাটিই সত্যি যে চূড়ান্ত বিচারে মানুষ শুধু নির্ভর করতে পারে তার নিজের ওপরই, সে নিজেই তার একমাত্র আশ্রয়দাতা?
শরণার্থীর সমস্যা শুধু একটি মানবিক সংকটই নয়, এটি সুস্পষ্টভাবে একটি উন্নয়ন এ রাজনৈতিক সমস্যাও বটে। ফলে বর্তমানে এ বিষয়ের ওপর যতখানি নজর দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। শুধু মানবিক ত্রাণ উদ্বাস্তুর মাত্রা এবং ব্যাপ্তিকে কমিয়ে আনতে পারবে না। শরণার্থী অবস্থার একটি বজায়ক্ষম সমাধানের জন্য রাষ্ট্রকে এমন সব নীতিমালা এবং ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সংঘাত বন্ধ হয়ে শান্তি স্থাপিত হয়, দারিদ্র্য ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারে এবং পুনর্বাসিত হতে পারে, কিংবা ফেরত না যেতে পারলেও, যে জায়গায় তারা স্থানান্তরিত হয়েছে, সেই লোকালয়ে তারা যাতে সম্পৃক্ত হতে পারে।
এ–জাতীয় নীতিমালা গ্রহণে ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎখাতের ব্যাপ্তি এবং তার সমাধানের জন্য সংগৃহীত উপাত্ত একটি বিরাট ভূমিকা পালন করবে। সংক্ষেপে, শরণার্থীর ক্ষেত্রে তিন ধরনের ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্ববহ হবে—নীতিমালার সমন্বয়, যা আগের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রাসঙ্গিক; অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু মানুষের জন্য অর্থায়ন এবং একটি উপাত্ত কাঠামো বজায় রাখা। আমাদের মনে রাখা দরকার যে নিষ্ক্রিয়তার মূল্য দিন দিন বাড়ছে এবং উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীই সেই মূল্য দিচ্ছে।
আজ বড় প্রয়োজন বিশ্বের সব শরণার্থীর সঙ্গে সংহতির ও সহমর্মিতার। সংহতির মানে শুধু কথায় নয়, বরং কাজের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে একাত্ম হওয়া। এর মানে হচ্ছে, তাদের কথা শোনা এবং তাদের ভাষ্যগুলো ছড়িয়ে দেওয়া। এর মানে হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা-অধিকার সমর্থন করা, তাদের দুঃখ–কষ্টের অবসান ঘটানো এবং সংঘাত বন্ধ করা; যাতে তারা নিরাপদে তাদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সংহতি মানে হচ্ছে সুষ্ঠুভাবে এবং সাহসের সঙ্গে বলা, কোনো শরণার্থীই একা নয় এবং আমরা তাদের পাশেই আছি। তাই ২০২৫ সালের বিশ্ব শরণার্থী দিবসের মূলমন্ত্র হচ্ছে শরণার্থীর সঙ্গে সংহতি।
ড.
সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের ভূতপূর্ব পরিচাল
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শরণ র থ র স আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য আড়াল করার চেষ্টা ছিল
সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে—এ সত্য আড়াল করার চেষ্টা ছিল পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বেশির ভাগ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এর পরিবর্তে ছাত্র-জনতাকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী’ এবং আন্দোলনকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা ছিল।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোর ভাষায় ‘উসকানি’, ‘দুষ্কৃতকারী’ ও ‘বিরোধী চক্রান্ত’—এ ধরনের শব্দ বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যেসব যুক্তি দিত এবং যে ভাষায় কথা বলত, তার প্রতিফলন দেখা গেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে।
গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক এসবির ১৬টি প্রতিবেদন নানা মাধ্যমে পেয়েছে প্রথম আলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি এসবির প্রতিবেদনে সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতা-কর্মীদের মারমুখী ভূমিকা ও অস্ত্রবাজির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। উল্টো আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে তৎকালীন সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এর পাশাপাশি সরকারের পক্ষে যাতে সংবাদমাধ্যমগুলো জনমত তৈরি করে—এমন পরামর্শও দিয়েছিলেন এসবির গোয়েন্দারা।
যেমন গত বছরের ৪ আগস্ট এসবির গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের দলবদ্ধভাবে ও অধিক সংখ্যায় অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ৩১ জুলাইয়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঠে সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
এসবির মাধ্যমেই পুলিশ দেশের সামগ্রিক চিত্র, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এসবির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলো প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যায়। এ জন্য সরকার অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এসবির গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
ওই সময়কার গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো গত জুন ও জুলাই মাসের শুরুর দিকে বিশ্লেষণ করেছে এসবির বর্তমান প্রশাসন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসবির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে রাজনৈতিক ইন্ধনপ্রাপ্ত, বিএনপি-জামায়াতের সরকার পতনের ষড়যন্ত্র—এভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আন্দোলনের মূল দাবির জায়গা বা ছাত্রসমাজের ন্যায্য ক্ষোভের যৌক্তিকতার চেয়ে নাশকতা-সহিংসতার আশঙ্কা, সরকারি স্থাপনায় আক্রমণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের নিরাপত্তা—এসবে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
এসবির বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, সংলাপ, আলোচনার প্রয়োজনীয়তা বা দাবির ন্যায্যতা তুলনামূলকভাবে কম এসেছে ওই সময়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে। কিছু ক্ষেত্রে আলোচনাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হলেও সেটি আন্দোলন দমন বা নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে এসেছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনগুলোতে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের গুরুত্ব, জনগণের ক্ষোভ বা সমবেদনার জায়গা উপেক্ষিত হয়েছে।
এসবির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ওই সময়কার গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে আন্দোলন চলাকালে বিপরীত বয়ান (কাউন্টার ন্যারেটিভ) তৈরির পরামর্শও দেওয়া হতো। ‘কাউন্টার ন্যারেটিভ’ গড়ে তোলার জন্য তৎকালীন সরকার যাতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে, সে সুপারিশ ছিল।
এসবির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে ওই সময়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করায় বাস্তব পরিস্থিতি মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়েছিলেন তৎকালীন কর্মকর্তারা। পেশাদারত্বের সঙ্গে নির্মোহভাবে কাজ না করলে তা কারও জন্যই সুফল বয়ে আনে না।’
এসবির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ওই সময়কার প্রতিবেদনগুলোতে মাঠের বাস্তবতা উপেক্ষিত হয়েছে।
শেষ দিকে শঙ্কায় ছিলেন গোয়েন্দারাএসবির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তৎকালীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দমননীতির কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দ্রুত ব্যাপকতা লাভ করে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি, পেশাজীবী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষ তাতে যুক্ত হন। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দ্রুতই আন্দোলনে নতুন নতুন শ্রেণি ও শক্তি যুক্ত হয়।
কিন্তু তৎকালীন গোয়েন্দারা আন্দোলনের ব্যাপকতার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ‘বহিরাগত’, ‘রাজনৈতিক অপশক্তি’ এবং ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ হিসেবে দেখার চেষ্টা করেছে।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে ‘গণভবন, বঙ্গভবন, সচিবালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ইত্যাদি দখলের চেষ্টা হতে পারে’—এমন ইঙ্গিত ছিল ওই সময়কার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।
গত বছরের ৫ জুন থেকে ২০ জুলাইয়ের প্রতিবেদনগুলো আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করেছে এসবির বর্তমান প্রশাসন। এতে দেখা যায়, ওই সময় গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ ছিল, আন্দোলন দমন না করলে এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি সুযোগ নিতে পারে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তখনকার গোয়েন্দারা।
গত বছরের ২১ জুলাই থেকে ৪ আগস্টের প্রতিবেদনগুলোতে গণগ্রেপ্তার ও দমননীতির বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তবে ওই সময়ের প্রতিবেদনে পরিস্থিতি দ্রুত ‘গণ-অভ্যুত্থানে’ রূপ নিতে পারে, সরকার পতনের চেষ্টা হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভেঙে যেতে পারে—এসব বিষয় স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে। শেষ দিকের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ক্রমে সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে পরিণত হবে—এমন আভাস দেওয়া হয়েছিল।
একপেশে প্রতিবেদন, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বএসবির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অধিকাংশ প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ, হতাহতের ঘটনা, গণগ্রেপ্তার, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া—এসব বিষয় খুব কমই গুরুত্ব পেয়েছে। আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের প্রতি প্রতিবেদনগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল স্পষ্টতই একপেশে।
এসবির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অনেক প্রতিবেদনে আন্দোলনের প্রকৃত উৎস বা সাধারণ ছাত্রদের ক্ষোভকে সেভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। শুধু তা–ই নয়, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ অভিভাবক—এসব গোষ্ঠীর ন্যায্য অংশগ্রহণকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছে। প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করার প্রবণতা থাকায় স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলনকে পুরোপুরি অনুধাবন করা যায়নি বলেও এসবির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মনীতি মেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশ বর্তমানে সচেষ্ট রয়েছে।’