বছরের পর বছর ধরে ‘পাথররাজ্য’ সিলেটের কোয়ারি ও নদ-নদীগুলো থেকে পাথর লুট চলছে। এভাবে পাথর তোলার ফলে ভয়াবহ পরিবেশগত ও মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি নদীভাঙন, ভূমিধস ও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জানায়, সিলেট জেলার আটটি পাথর কোয়ারির মোট আয়তন প্রায় ১ হাজার ১৭৫ দশমিক ৪৫ হেক্টর। এ ছাড়া জাফলং, কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর, সংরক্ষিত বাংকার অঞ্চলসহ অন্তত ১০টি এলাকায় পাথর আছে। এসব স্থানে ‘বোমা মেশিন’ ব্যবহার করে পাথর তোলা হয়, যা পরিবেশ ও জনপদে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীভাঙন, ভূমিধস হয়েছে, প্রাণহানি ঘটেছে।

বেলার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত পাথর উত্তোলনের সময় ১১৭ জন শ্রমিক নিহত ও ৫৩ জন আহত হয়েছেন। বেলার একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করার রায় দেন। আরেকটি রিট আবেদনের রায়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়।

বেলা সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার বলেন, পাথর কোয়ারি পুনরায় চালু করে দেওয়ার জন্য পাথর ব্যবসায়ীরা যে দাবি করছেন, সেটা অনায্য। এমনিতেই পাথর উত্তোলনের কারণে সিলেটের যে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হতেই অনেক দিন সময় লাগবে। জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্পও বাধাগ্রস্ত হয়েছে পাথর উত্তোলনের ফলে। সিলেট থেকে স্থায়ীভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী (কিম) প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পাথর সনাতন পদ্ধতিতে উত্তোলন করলে নদী ও নদীতীরবর্তী এলাকার কোনো সমস্যা হয় না। এভাবে আগেও পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু ‘বোমা মেশিন’ ব্যবহার করে যখন পাথর উত্তোলন করা শুরু হয়, তখন থেকেই সমস্যার শুরু।

এই পরিবেশবাদী বলেন, খাসিয়া ও জৈন্তা হিলের পাদদেশে অবস্থিত সিলেটের সীমান্তবর্তী নদী থেকে অবাধে পাথর উত্তোলনে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকে। ডাউকি ফল্টের স্পর্শকাতর অবস্থানে থাকা সিলেটের সীমান্তবর্তী নদী ও কৃষিজমি থেকে পাথর উত্তোলন তাই বিপজ্জনক। এটা বিবেচনায় নিয়েই পাথর উত্তোলন বন্ধে পরিবেশবাদীরা সোচ্চার।

প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় দেশের ৫১টি পাথর কোয়ারির মধ্যে ১৭টির ইজারা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইজারা স্থগিত রাখা কোয়ারির অধিকাংশই সিলেটে। পরিবেশবিদদের দাবি, টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সিলেটে স্থায়ীভাবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা উচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাওয়ে ‘অভিষেকে’ নাঈমের ফাইফার

২০১৮ সালে নাঈম হাসানের টেস্ট অভিষেক। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা পোশাকে পথচলা শুরু। সাত বছর পর নাঈমের দীর্ঘ এক অপেক্ষা ফুরাল। দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট ম্যাচে বোলিংয়ের সুযোগ পেলেন তিনি। একটু ঘুরিয়ে হলেও বলা যায় অ্যাওয়ে ‘অভিষেক’। যেখানে ৫ উইকেট নিয়ে নাঈম নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

একটু ঘুরিয়ে কেন সেটা খোলাসার প্রয়োজন। ২০১৯ সালে ইডেনে নাঈমের খেলার সুযোগ হয়েছিল। একাদশে থেকে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করে ১৯ রান করেছিলেন। কিন্তু ২২ গজে হাত ঘোরানো হয়নি। ফিল্ডিংয়ে চোট পাওয়ায় নাঈম ছিটকে যান। ফলে তার অ্যাওয়ে ম্যাচে বোলিংয়ের অভিষেকের অপেক্ষা দীর্ঘ হয়। টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার সাত বছর পর দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট খেলেই বাজিমাত করলেন। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফাইফারের স্বাদ পেলেন। ৪৩.২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১২১ রানে ৫ উইকেট নেন এই অফস্পিনার।

আরো পড়ুন:

শ্রীলঙ্কার কড়া জবাব

ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের একাদশ ঘোষণা

এর আগে তিনবার ফাইফার পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন যা তার ক্যারিয়ার সেরা। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আছে ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তি। সাত বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে নাঈম ঘরের মাঠেও খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি। এই ম্যাচের আগে তার টেস্টের সংখ্যা ছিল ১২টি। সব মিলিয়ে ১৩ টেস্টে তার উইকেট ৪৪টি।

এই ম্যাচেও তার খেলা হতো কিনা সেটাও বিরাট প্রশ্নের। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ দুই ডান হাতি অফস্পিনার খেলানোর চিন্তা করতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরাজ ও নাঈম একই সঙ্গে খেলতে পারেন। দেশের বাইরে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। ব্যাটিংয়ে এগিয়ে থাকায় মিরাজ হয়ে যান অটোমেটিক চয়েজ। ফলে নাঈমকে থাকতে হয় ডাগআউটে। থাকতে হয় সুযোগের অপেক্ষায়। এই টেস্টের আগে হঠাৎ মিরাজের জ্বর আসায় নাঈমের ভাগ্য খুলে যায়। অফস্পিনারের সুযোগ হয় হাত ঘুরানোর। সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে ফাইফারের স্বাদ পেয়ে গেলেন অ্যাওয়ে অভিষেকেই।

উইকেট ফ্ল্যাট। বল বিরতি দিয়ে ঘুরছে। সমান বাউন্সের উইকেট থেকে বাড়তি টার্ন ও বাউন্স পাওয়ায় নাঈমের বোলিং ছিল ধ্রুপদী। বাংলাদেশ ১০ রানের লিড পেয়েছে। নাঈমের ফাইফারের সুবাদেই মিলেছে এই সাফল্য। এই টেস্টে ফল পেতে হলে দ্বিতীয় ইনিংসেও অভাবনীয় পারফর্ম করতে হবে বোলারদের।

তার সঙ্গে তাইজুল ও মুমিনুল ১টি করে উইকেট পেয়েছেন। হাসান মাহমুদের পকেটে গেছে ৩ উইকেট।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ