মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের একজন। বিভিন্ন সময়ে বিল গেটস যদি তাঁর মাইক্রোসফটের শেয়ার বিক্রি না করতেন বা বিভিন্ন গবেষণা ও দাতব্য কাজে শত শত কোটি মার্কিন ডলার দান না করতেন, তবে তিনিই হতেন বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার বা এক লাখ কোটি ডলারের মালিক। জনপ্রিয় মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিল গেটস ও তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চের কাছে থাকা শেয়ারের মূল্য বর্তমানে হতো প্রায় ১.

৪ ট্রিলিয়ন ডলার। শেয়ারের লভ্যাংশ হিসাবে আরও ১০০ বিলিয়ন ডলার পেতেন তাঁরা। শুধু বিল গেটসের একক সম্পদের মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেত। কিন্তু লাভের দিকে না ছুটে বিল গেটস তাঁর গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ও অন্যান্য গবেষণা খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করে যাচ্ছেন।  

ফোর্বসের তথ্যমতে, বিল গেটস যদি তাঁর মাইক্রোসফটের সব শেয়ার ধরে রাখতেন, তাহলে তিনি বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হতে পারতেন। ১৯৮৬ সালে যখন মাইক্রোসফট শেয়ারবাজারে প্রবেশ করে, তখন গেটসের মালিকানায় ছিল ১ কোটি ১২ লাখ শেয়ার। মাইক্রোসফটের প্রায় ৪৯ শতাংশ শেয়ার ছিল বিল গেটসের দখলে, যার মূল্য তখন ছিল প্রায় ২০ কোটি ডলার। সেসব শেয়ারের বর্তমান মূল্য হতো প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুনবিল গেটসের শৈশব কেমন ছিল২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিল গেটস কাজ থেকে অবসর নিলেও নিজের প্রতিষ্ঠা করা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন ও গবেষণার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এ জন্য ধীরে ধীরে নিজের মালিকানায় থাকা মাইক্রোসফটের শেয়ার বিক্রি করে ফাউন্ডেশনটিতে অনুদান দেন তিনি। আর তাই বর্তমানে মাইক্রোসফটের মাত্র ০.৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক বিল গেটস।

আরও পড়ুনবিল গেটস যে কারণে নিজের মেয়ের ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিনিয়োগ করেননি২৭ এপ্রিল ২০২৫

২০০০ সালে বিল ও মেলিন্ডা প্রাথমিক তহবিল দিয়ে গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে ৬০.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়ে কাজ শুরু করে ফাউন্ডেশনটি। এরই মধ্যে বিল গেটস আগামী দুই দশকের মধ্যে তাঁর অবশিষ্ট সম্পদের প্রায় ৯৯ শতাংশ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গেটস ফাউন্ডেশন ২০৪৫ সালের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন বিল গেটস।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুনবিল গেটসের পছন্দের পাঁচ বই০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল গ টস র

এছাড়াও পড়ুন:

সব বাধা পেরোনো উল্লাস

জন্ম থেকেই দুই হাত ও দুই পা বাঁকা। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারতেন না। শৈশবে স্কুলে যেতেন বাবার কোলে চড়ে। সহপাঠীরা মাঠে খেলতেন, তিনি পাশে দাঁড়িয়ে দেখতেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যেন বারবার পথরোধ করেছে তাঁর। তবু দমে যাননি উল্লাস পাল। অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নকে সঙ্গী করে অবশেষে ছুঁয়ে ফেলেছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য, ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন এই জীবনযোদ্ধা। এর আগে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
উল্লাস পালের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের কার্তিকপুর গ্রামে। মৃৎশিল্পী উত্তম কুমার পাল ও আন্না রানী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। 
জন্মগ্রহণের পর দুই পায়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শেখা হয়নি। দুই হাত দিয়েও স্বাভাবিক কাজ করতে পারতেন না। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেন উল্লাস। ভারতে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পর ডান পায়ের কিছুটা উন্নতি হয়। তাহলেও স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেননি কখনোই।
উল্লাসের প্রাথমিক শিক্ষার শুরু ১৯৯৯ সালে, কার্তিকপুর পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাবা প্রতিদিন তাঁকে কোলে করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। লেখার কাজ করতেন বাম হাতে। এসএসসি পাস করেন ২০১০ সালে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে, পান জিপিএ ৫। এরপর যান ঢাকায়। ইচ্ছা ছিল ঢাকা কলেজে পড়ার। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে সুযোগ পাননি। ঢাকা নর্দান কলেজ থেকে ২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে বিবিএ এবং পরে এমবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর ৪০তম ও ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন। ৪০তম বিসিএসে পাস করলেও কোনো পদে সুপারিশ পাননি। তবে ৪১তম বিসিএসে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নড়িয়া সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। লক্ষ্য ছিল প্রশাসন ক্যাডার।  ৪৪তম বিসিএসে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।
উল্লাস পাল বলেন, ‘আমি রেজাল্ট দেওয়ার কথা শুনে প্রশাসন ক্যাডারে আমার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার মিলাচ্ছিলাম। যখনই আমার নম্বরটি মিলে যায়, আনন্দে চোখ দিয়ে জল বের হয়ে যায়। আমার পরিবারের সবাই দারুণ খুশি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় সমাজের অনেকেই ঠাট্টা-মশকরা করেছে। আবার অনেকেই প্রচণ্ড ভালোবেসেছে। আমি কখনও দমে যাইনি। লক্ষ্য স্থির রেখে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।’
যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, সমাজ চাইলেই তাদের জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন উল্লাস। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, যারা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে, সমাজের কেউ যেন তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব না দেখায়।’
উল্লাসের মা আন্না রানী পাল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই উল্লাস অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। সে পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল। সবাই ওকে নিয়ে গর্বিত।’
ছেলেকে বড় করে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি জানিয়ে উত্তম কুমার পাল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই উল্লাসকে বিশেষভাবে যত্ন করে বড় করেছি। লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহের জন্য আজ সে এই সাফল্য অর্জন করেছে।’
উল্লাসের মেধাবী। তাঁর মতো সৎ, আত্মমর্যাদাশীল ছেলে সত্যিই কম দেখেছেন মন্তব্য করে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি চাই, ও (উল্লাস) ওর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আরও এগিয়ে যাক।’
উল্লাস পালের বন্ধু অসীম পাল। একসঙ্গে স্কুলে যেতেন। বললেন, উল্লাসের চলাফেরায় যে প্রতিবন্ধিতা ছিল, সেটি কখনোই তার মনের জোরকে দুর্বল করতে পারেনি। ক্লাসে সবসময় সবার আগে থাকত। কেউ একটি বিষয় এক ঘণ্টা পড়লে উল্লাস সেটি তিন ঘণ্টা পড়ত। 
অসীম বলেন, ‘আমি কাছ থেকে দেখেছি, ওর (উল্লাস) জেদ, স্বপ্ন, আর লড়াই। আমি গর্ব করে বলি, উল্লাস শুধু আমার বন্ধু না, ও আমাদের সময়ের এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ