প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার কারণে বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ। সামান্য বৃষ্টিতে এই সড়ক সয়লাব হয়ে যায় কাদাপানিতে। তখন বাইসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশা চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটেও যেতে পারেন না পথচারীরা। কখনও হালকা যানবাহন ঠেলে পার করাও কঠিন হয়ে পড়ে। বারবার দাবি জানিয়ে এলেও এই সড়কটি পাকাকরণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 
উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়ারচর গ্রামের প্রবেশ পথেই এই রাস্তাটির শুরু; যা গিয়ে মিশেছে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের আমান সরকারের বাজারে। গতকাল শুক্রবার ওই গ্রামে গিয়ে জনসাধারণের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। 
এই সড়কের বিভিন্ন জায়গায় এসে মিশেছে বিভিন্ন পাড়ার সরু কাঁচা রাস্তা। এসব রাস্তার হালও করুণ। একটি কাঁচা রাস্তা থেকে অন্য একজনের সহায়তায় অটোরিকশা ঠেলে তুলছিলেন চালক হুমায়ুন। তিনি বলেন, গ্রামের এই সড়কটি বহুকালের পুরোনো। কখনোই এই সড়ক পাকা করা বা উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। 
এদিন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা সারোয়ার মোহাম্মদ হিমেল। তিনি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে জেলার কুলিয়ারচরে কর্মরত। সঙ্গে আসেন প্রবাসফেরত আলাউদ্দিন, রায়হান মিয়া, অটোরিকশাচালক হুমায়ুন, সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া রবিন। তাদের সবার ভাষ্য, এ রাস্তাটিই গ্রামের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এ রাস্তা ব্যবহার করে কয়েকটি বিদ্যালয় ছাড়াও জেলা সদর, হোসেনপুর সদর, আমান সরকারের বাজার, গাঙ্গাটিয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের যাতায়াত করতে হয়। বৃষ্টির মৌসুমে রাস্তাটি ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। যানবাহন তো দূরে থাক, হেঁটে গেলেও জুতা হাতে নিয়ে কোনোরকমে যেতে হয়। কাদার কারণে প্রায়ই মানুষের পা পিছলে পড়ে। পানি জমে থাকলে খানাখন্দ দেখাও যায় না। তখন বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনারও শিকার হয়।
গোবিন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রাহমান স্থানীয় লোকজনের এ ভোগান্তির কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ এলে রাস্তাটির উন্নয়নে উদ্যোগ নেবেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক এই সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমি অধিগ্রহণ না করেই কাজ

সাঁথিয়া উপজেলার গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়ক উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছিল ছয় বছর আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগের অপ্রশস্ত সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাজে বাধা দেন। তারা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে সড়কটি খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টিতে বেহাল সড়কটি কাদাপানিতে সয়লাব। পাটগাড়ি এলাকায় কালভার্ট নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটিও কোনো কাজে আসছে না। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী ৫০ হাজার মানুষ। 
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়কের কাজ শুরু হয়। আট কিলোমিটারে  ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কাজ পায় ঢাকার এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। 
গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগ জমিই ব্যক্তিমালিকানাধীন। মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কাজ শুরু করায় তারা বাধা দেন এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেন। এখনও মামলার চূড়ান্ত রায় হয়নি। এ কারণে কাজ বন্ধের জন্য আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত অংশ অধিগ্রহণের জন্য টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাগজপত্র জমা দিয়ে ভূমিমালিকরা টাকা তুলে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নামমাত্র কয়েকজন জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পেলেও অনেকেই পাননি। কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কাগজপত্র সঠিক নয়। 
এ বিষয়ে জমির মালিক তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন, ‘আমার কাগজপত্র সঠিক আছে। আমার মতো গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫ জনের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি।’ 
তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলা, গোলাম রসুল, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল ওহাব, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল বারি, আলমগীর হোসেন, রিজিয়া খাতুনসহ কয়েকজন জমির মালিক বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাবনা আদালতে মামলা করেছি। ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া পাইনি। ক্ষতিপূরণ পেলে মামলা তুলে নেব।’ 
মামলার বাদী ফেচুয়ান গ্রামের মকবুল হোসেন, সুজন হোসেন ও আজিজ খাঁ জানান, সড়ক হলে সবারই সুবিধা হয়। জমির মালিকরা সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। 
কথা হলে সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান জানান, সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকাদারের সময় পেরিয়ে যাওয়াসহ কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। 
সরেজমিন পাটগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে রাখায় কাদামাটিতে একাকার। এ পথ দিয়ে চলাচল এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কটি দ্রুত নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন তেঘড়ি গ্রামের গোলাম কিবরিয়া, পাটগাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম সান, স্কুলশিক্ষার্থী সিমি খাতুনসহ অনেকে। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রহ্লাদ কুমার বলেন, ‘আমরা যথাসময়ে কাজ শুরু করেছিলাম। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং মামলার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। এরই মধ্যে সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আমাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়েছে।’
পাবনা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী  সাদেকুর রহমান বলেন, ‘যাদের জমির কাগজপত্র সঠিক ছিল, তারা টাকা পেয়েছেন। যাদের কাগজ সঠিক নেই, তারা পাননি। জটিলতা এখনও কাটেনি। মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন প্রকল্প এলে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভূমি অধিগ্রহণ না করেই কাজ
  • রূপগঞ্জে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেচ্ছাসেবীদের মানববন্ধন