স্কুলের গেট থেকে ছাত্রকে তুলে নিয়ে মারধর, অস্ত্র উঁচিয়ে শিক্ষকদের হুমকি
Published: 8th, July 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে স্কুল ছুটির পরপরই বিদ্যালয়ের গেট থেকে নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় বাধা দিতে গেলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেন অভিযুক্তরা। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামের হাজী প্রি ক্যাডেট স্কুলের সামনে ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনার ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রের নাম ফেরদৌস (১৪)। সে নয়াপাড়া গ্রামের মো.
আরো পড়ুন:
নরসিংদীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবককে গণধোলাই
গোপালগঞ্জে জমিজমা বিরোধের জেরে শিশুকে বেদম প্রহার
অভিযুক্তরা হলেন- ধনুয়া গ্রামের ইমান আলীর ছেলে মো. কাওসার আহমেদ (৩০)। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন- এমদাদুল হক, নূরুল হক, মোস্তফাসহ আরো কয়েকজন যুবক।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরা এক ছাত্রকে কয়েকজন যুবক মারধর করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এসময় শিক্ষক রুবেল হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে অভিযুক্ত কাওসার একটি পিস্তল বের করে তাদের ভয় দেখান। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্কুলের সামনে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে এদিক-সেদিক দৌঁড়াতে থাকেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নবম শ্রেণির ছাত্র হৃদয় বলেন, “স্কুল ছুটির পর আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কয়েকজন এসে ফেরদৌসকে মারধর করে তুলে নিতে থাকে। আমরা বাধা দিলে তারা আমাদের দিকে তেড়ে আসে। একজন তো স্যারকে পিস্তল দিয়ে ভয় দেখান।”
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, “ছাত্রদের চিৎকার শুনে আমরা বাইরে যাই। দেখি, একদল যুবক মারধর করে ছাত্রটিকে তুলে নিচ্ছে। আমরা রক্ষা করতে চাইলে তারা আমাদের দিকে পিস্তল তাক করে এবং গুলি করার হুমকি দেয়।”
প্রধান শিক্ষক নূরুনাহার বলেন, “স্কুল ছুটির পরপরই ঘটনা ঘটে। সবাই আতঙ্কে পড়ে যান। কি কারণে ছেলেটিকে তুলে নেওয়া হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। তবে, মারধর করার দুই ঘণ্টার মাথায় অস্ত্রধারীরা ছাত্রটিকে ফেরত দেয়।”
অপহৃত ছাত্রের মামা নাদিম মাহমুদ বলেন, “ঘটনার পর আমরা তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে যাই এবং অভিযুক্তদের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তারা ফেরদৌসকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়। ঘটনাটির সঠিক কারণ এখনো অজানা।”
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আকতার বলেন, “ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। ভিডিও ফুটেজ যাচাই করা হচ্ছে। পিস্তলটি আসল নাকি নকল, তা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের পর জানা যাবে।”
ঢাকা/রফিক/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর অভ য গ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসির পর বিদেশে পড়াশোনা, এসওপি-বৃত্তি পেতে কীভাবে নেবেন প্রস্তুতি
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যেতে চাইলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-পরবর্তী সময় উত্তম সময়। দেশে স্নাতক করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কোর্স আউটলাইনসহ অনেক সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু স্নাতক স্তর থেকে বিদেশে পড়াশোনা শুরু করা গেলে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আর এ অসামঞ্জস্যতার আশঙ্কা থাকে না। তাই এইচএসসির পরপরই বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্ভব হলে দূর ভবিষ্যতে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে প্রবেশ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। দীর্ঘ মেয়াদে এই সুফলের জন্য দেশে থাকা অবস্থাতেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এইচএসসির পরপরই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক—
প্রবেশিকা পরীক্ষা
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন একাডেমিক পর্যায়ের প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়। এর মধ্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পরীক্ষাগুলো হলো এসএটি (স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট) এবং এসিটি (আমেরিকান কলেজ টেস্টিং)। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর রিডিং, রাইটিং ও গাণিতিক বিশ্লেষণের মতো প্রাথমিক দক্ষতাগুলো যাচাই করা হয়। স্যাটে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ স্কোর তুলতে হয়, সেখানে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য এসিটিতে ২৫ থেকে ৩০ স্কোর প্রয়োজন হয়। যুক্তরাজ্যের জন্য ইসিএএস (ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজেস অ্যাডমিশন সার্ভিস) ট্যারিফ বা এ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক কিছু পরীক্ষার ফলাফলকেও গুরুত্ব দেয়। যেমন যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের জন্য বিএমএটি (বায়োমেডিকেল অ্যাডমিশন টেস্ট) অথবা ইউসিএটি (ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক্যাল অ্যাপটিটিউড টেস্ট) পরীক্ষা দিতে হয়।
ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা—আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এই আবশ্যকীয় যোগ্যতাটি যাচাইয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বেশ কিছু পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন—
আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম)
টোয়েফেল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাস ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ)
পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অব ইংলিশ)
ডুওলিঙ্গো
এগুলোর মধ্যে আইইএলটিএস ও টোয়েফেল বহু বছর ধরে ইংরেজি ভাষাভাষীসহ অন্য ভাষার দেশগুলোতেও অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইইএলটিএস স্কোর সাধারণত ৬ থেকে ৭ দশমিক ৫-এর মধ্যে থাকলে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে আবেদন করা যায়।
অপর দিকে টোয়েফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৮০ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর দেখাতে হয়। কিছু ইউরোপীয় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসসির মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন (এমওআই) বা পাঠদানের মাধ্যম ইংরেজি ভাষায় হলেই ভর্তি নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি মূলত শুধু ইংলিশ মিডিয়াম ও ইংরেজি ভার্সন কলেজগুলোর জন্য প্রযোজ্য।
ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার দেশগুলোতে অধ্যয়নের জন্য সেখানকার স্থানীয় ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য আলাদা পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন জার্মানির ক্ষেত্রে টেস্টডিএএফ (টেস্ট অব জার্মান অ্যাস আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) বা ডিএসএইচ (জার্মান ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সামিনেশন ফর ইউনিভার্সিটি এনট্রান্স) পাস করতে হয়। একইভাবে ফ্রান্সে গুরুত্ব দেওয়া হয় ডিএএলএফ (ডিপ্লোমা ইন অ্যাডভান্সড ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ) পরীক্ষার ফলাফলকে।
আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসনের প্রয়োজনীয় নথি তৈরি—শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে কিছু দরকারি নথি প্রয়োজন হয়। প্রথমটি হচ্ছে স্টেটমেন্ট অব পার্পাস (এসওপি)। এখানে আবেদনকারীর একাডেমিক লক্ষ্য, দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা তার প্রোগ্রাম নির্বাচনের কারণগুলো উল্লেখ করতে হয়।
এরপরেই আসে লেটার অব রিকমেন্ডেশন (এলওআর)। এটি হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার ব্যাপারে সুপারিশনামা। সাধারণত মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা এই সুপারিশ করে থাকেন। সংগত কারণেই এই লেটারের কয়েকটি কপি তৈরি করে রাখতে হয়। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ থেকে ৩টি এলওআর সরবরাহের প্রয়োজন হয়।
এসওপি ও এলওআরের সঙ্গে একটি সিভি বা রেজুমি ও কাভার লেটার বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট যুক্ত করা হলে আবেদনটি আরও শক্তিশালী হয়। সিভি বা রেজুমিতে শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে একাডেমিক ও একাডেমির বাইরের যাবতীয় অর্জনগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। পারসোনাল স্টেটমেন্টের আরও একটি নাম মোটিভেশনাল লেটার। এখানে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত কোর্সটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীর আবেগের বিষয়টি পেশাগত কায়দায় ফুটিয়ে তুলতে হয়।
সর্বোপরি, এসব নথি তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে।
ফাইল ছবি