আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসের চারা ধ্বংস করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়
Published: 9th, July 2025 GMT
সারাদেশে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংসে মাঠ পর্যায়ে অভিযান শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর এ কার্যক্রম চলছে। পরিবেশ ও মাটির ক্ষতি করে এমন গাছ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে এসব চারা উৎপাদন, রোপণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে কৃষি বিভাগের অধীন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা নার্সারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে গাছের ধ্বংস করছেন। সঙ্গে প্রতিটি গাছের জন্য দেওয়া হচ্ছে ৪ টাকা করে প্রণোদনা। পাশাপাশি নার্সারি মালিকরা আর এই চারা উৎপাদন করবেন না এমন অঙ্গীকারও করছেন। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আগ্রাসী এসব প্রজাতির বদলে নারিকেল, আম, কাঁঠাল, নিম, তালসহ নানা দেশি গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
চলতি বছরের ১৫ মে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা তৈরি ও রোপণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, অতিরিক্ত পানি শোষণ, মাটি অনুর্বর করা, আশপাশের গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়া, পাখির অনুপযোগী পরিবেশ তৈরি করে এসব গাছ। তাই দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আগ্রাসী প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশি প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে বনায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই প্রজ্ঞাপনের পর কৃষি মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ের সব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এসব গাছের চারা শনাক্ত করে ধ্বংসের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী গাছের চারা সরবরাহ এবং কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে কৃষি বিভাগের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নার্সারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে গিয়ে আকাশমণি এবং ইউক্যালিপটাস চারা ধ্বংস করছেন। নার্সারি মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ‘আর এ গাছ উৎপাদন করা হবে না’—এই মর্মে অঙ্গীকারও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং জানিয়েছে, সারাদেশে ২ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার ৭৭টি আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে আকাশমণি ৭৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮৪টি এবং ইউক্যালিপটাস এক কোটি ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৩টি। ৪৯টি জেলার ৪৩০টি উপজেলায় এই দুটি গাছের চারা ধ্বংসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত ১৬১টি উপজেলায় ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০টি গাছের চারা ধ্বংস করা হয়েছে। ৪২টি উপজেলায় আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে, এসব উপজেলায় চারার সংখ্যা ২৪ লাখ ১০ হাজার ৭৭০টি। বাকি ২২৭টি উপজেলায় এক কোটি ৯ লাখ ৪৮ হাজার ২৩১টি চারা ধ্বংস করা বাকি আছে।
ধ্বংস করা প্রতিটি চারা বাবদ কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে চার টাকা করে প্রণোদনা। এরই মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কৃষকদের মধ্যে নারিকেল, আম, কাঁঠাল, নিম, তালসহ ৩৩ লাখ দেশি ফলদ ও বনজ গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো.
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, পরিবেশবান্ধব বনজ গাছের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ক্ষতিকর গাছের রোপণ ও বাণিজ্য বন্ধে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এই ধ্বংস কার্যক্রম চলছে। ভবিষ্যতে যেন ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি আর না বেড়ে ওঠে, সে জন্য একটি কর্মসূচি বা প্রকল্প নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানো যেমন জরুরি, তেমনি কী গাছ কোথায় লাগবে, সে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে।
তিনি বলেন, ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয় পরিবেশ রক্ষায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এ কার্যক্রমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আমাদের সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে যেন এমন গাছ রোপণ না হয়, সে জন্য জনসচেতনতা বাড়ানো এবং বিকল্প গাছের বাজার সম্প্রসারণে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম মাহফুজুর রহমান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির চারা ধ্বংস অভিযান পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই বনায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ কৃষি মন্ত্রণালয়ের একেবারে ইউনিয়ন পর্যায়েও কর্মকর্তারা মাঠে আছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় থাকলে পরিবেশ বিধ্বংসী বৃক্ষ নির্মূল করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, এই দুটি গাছ অতিরিক্ত পানি শোষণ করে মাটিকে শুষ্ক করে তোলে, এই গাছ তার নিচের উদ্ভিদ আচ্ছাদন (আন্ডারগ্রোথ ভেজিটেশন) নষ্ট করে ফেলে এবং এটি থেকে রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত হয়।
মাহফুজুর রহমান বলেন, বৃষ্টির সময় ইউক্যালিপটাসের পাতায় থাকা রাসায়নিক উপাদান মাটিতে পড়ে মাটিও দূষিত হয়। এতে উদ্ভিদ আচ্ছাদন নষ্ট হয়ে যায়। মাটির উর্বরতা ও গুণাগুণও নষ্ট হয়ে যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ঠ পর য য় য় পর ব শ ধ ব স কর পর ব শ র উপজ ল য় ক ষকদ র রক ষ য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।
গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।
আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।
আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।
নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।
অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।
চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।