বিয়ের দিনে সাধারণত যেমন দৃশ্য দেখা যায়, সেটি ঠিক তেমনই এক মুহূর্ত ছিল।

জ্যামাইকা আগুইলার তাঁর বাবার হাত ধরে গির্জার মাঝের খালি পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল সাদা গাউন ও মাথার ওপর থেকে মুখ পর্যন্ত লম্বা হালকা কাপড়, যা ওই ঐতিহাসিক গির্জার সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই হয়েছিল।

তবে একটি বিষয়ে পার্থক্য ছিল। তিনি ও তাঁর সব অতিথি হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মৌসুমি বৃষ্টি ও টাইফুনের ফলে সৃষ্ট ভারী বর্ষণে গির্জাটি পানিতে প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল।

তবুও নবদম্পতি থেমে যাননি। তাঁরা বললেন, ‘চ্যালেঞ্জিং ছিল, কিন্তু আমরা আসল বিষয়গুলোর ওপরেই মনোযোগ দিয়েছিলাম।’

ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার উত্তরের বারাসোয়াইন গির্জায় অনুষ্ঠিত এই বিয়ের ছবি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এটি আবারও দুর্যোগের মুখে ফিলিপিনোদের অদম্য মনোভাবকে তুলে ধরল।

কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, এমন বিয়ের ঘটনা এবারই প্রথম ঘটেনি।

দুই বছর আগেও এক দম্পতি ঠিক একই গির্জায় একই সময়ে পানিতে প্লাবিত মেঝে দিয়ে হেঁটে বিয়ে করেছিলেন। এমনকি ২০১৮ সালেও ম্যানিলার উত্তরের বুলাকান প্রদেশের এক গির্জায় পানির মধ্যেই বিয়ে হয়েছিল।

এসব ঘটনা শুধু সাহস বা সংকল্পের পরিচয় নয়। বরং এসব ঘটনা আবারও সামনে এনেছে গভীর এক সমস্যাকে। প্রবল বৃষ্টিপাতে ঘন ঘন দেখা দেওয়া বন্যায় লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

পুরোনো পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা, অপরিকল্পিত শহরায়ণ এবং ক্রমবর্ধমান বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এই সমস্যা আরও গুরুতর হয়েছে।

বিয়ের পরই অ্যান্টিবায়োটিক

২৭ বছর বয়সী কনে বলেন, তাঁর বিয়ের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল আগের রাতটা, যখন তাঁরা ভাবছিলেন বিয়ে চালাবেন কি না।

বিয়ের আয়োজকেরা আগেই সতর্ক করেছিলেন—বৃষ্টি আরও বাড়বে।

কনে বলেন, ‘আমাদের জন্য এটি ছিল সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত—বিয়েটা বাতিল করব, নাকি পিছিয়ে দেব? আমি প্রায় বাতিল করেই দিচ্ছিলাম।’

কনে বলেন, তবে শেষে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, যাই হোক বিয়েটা করতেই হবে।

বর জেড রিক ভার্ডিলো বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং ছিল, কিন্তু আমরা গুরুত্ব দিয়েছি আমাদের সম্পর্ক আর যাঁরা আমাদের ভালোবাসেন তাদেরকে। বিয়ের পর তাঁরা দুজনেই ছিলেন অত্যন্ত আনন্দিত।’

বিয়ের পরপরই স্বামী-স্ত্রী হিসেবে প্রথম কাজটি ছিল ডক্সিসাইক্লিন নামে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া। এই ওষুধ স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া গেছে। এই ওষুধটি পানিবাহিত রোগ লেপ্টোস্পাইরোসিস প্রতিরোধে দেওয়া হয়। পানিবাহিত এই রোগ যকৃতে আক্রমণ করতে পারে।

বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই সেই একই বারাসোয়াইন গির্জায় আরেকটি অনুষ্ঠান হলো—একটি শেষকৃত্য। সেখানে সাদা কফিনটি রাখা ছিল স্টিল্টের (উঁচু কাঠের পাটাতন) ওপর।

এই পরিবেশে বিয়ে বেশ উপভোগ করেছেন বলে জানালেন বর: বারাসোয়াইন গির্জা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যানসারে আক্রান্ত ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর শরীরে ত্বকের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। বমি ও নিম্ন রক্তচাপের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার শরীরে ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।

আরো পড়ুন:

৬ বছর পর ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপ প্লে-অফে বলিভিয়া

মারাকানায় ব্রাজিলের বড় জয়

প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একদিন পর তার ত্বকের ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা পড়ে।

বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তার ত্বকের পরীক্ষা করে ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ শনাক্ত হয়েছে।এটি ত্বকের মাঝারি মাত্রার ক্যানসার, যা সবচেয়ে হালকা ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ধাপের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে।

চিকিৎসকরা বলেছেন যে, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ৭০ বছর বয়সী বলসোনারো গত মঙ্গলবার বমি এবং নিম্ন রক্তচাপের কারণে ব্রাসিলিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ক্যানসারের বিষয়টি গত রবিবারের পরীক্ষায় ধরা পড়ে, যখন তার বুক ও হাতে থাকা ক্ষতস্থানের টিস্যু অপসারণ করা হয়েছিল।

তার অনকোলজিস্ট ক্লাউদিও বিয়ারোলিনি জানিয়েছেন, বলসোনারোর ক্যানসার ‘ইন সিটু’ ধাপে রয়েছে, অর্থাৎ অস্বাভাবিক কোষগুলো এখনো ছড়িয়ে পড়েনি। অস্ত্রোপচারই এর চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট হবে। বর্তমানে বলসোনারোর শরীরে সেলাই ও ব্যান্ডেজ রয়েছে, যা দুই সপ্তাহের মধ্যে খোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন, যেখানে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

বলসোনারো ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই গৃহবন্দি ছিলেন। সম্প্রতি তাকে ২৭ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরেসের নির্দেশ অনুযায়ী, গৃহবন্দিত্বে থাকলেও চিকিৎসা জরুরি হলে তিনি বাসার বাইরে যেতে পারেন। তবে প্রতিবারই তার আইনজীবীদের আদালতে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়।

বলসোনারোর সমর্থকরা তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন, যাতে তিনি কারাগারে না গিয়ে বাড়িতেই সাজা ভোগ করতে পারেন। তাদের দাবি, কারাগারে নিলে তার শারীরিক জটিলতা বা দুর্ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়বে।

তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “আমার বাবা আগেও কঠিন লড়াই লড়ে জয়ী হয়েছেন। এবারও ভিন্ন কিছু হবে না।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ