রাজশাহীতে বর্ষাকালে বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাঁচা সবজির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজিভেদে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। কেবল আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আজ সোমবার সকালে নগরের সাহেববাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে কথা হয় রাজমিস্ত্রির জোগালি মনির হোসেনের সঙ্গে। এক কেজি পটোলের দাম ৫০ টাকা শুনেই তিনি মাথা নেড়ে বললেন, ‘এই পানিতে ঢ্যাঁড়স-পটোল সবকিছুরই দাম তো আগুন রে ভাই। কয় দিন আগেও দেড় শ ট্যাকা লইয়া বাজারে গিয়া ব্যাগ ভরা তরকারি লইয়া আনতাম। এখন ওই দামে তিনডা জিনিসও জোটে না। ওপর থেইক্য বৃষ্টি, নিচ থেইক্য দাম।’

পটোলের দাম আগের তুলনায় ২০ টাকা বেড়েছে বলে জানালেন মনির। তাঁর দাবি, দুই দিন আগেই তিনি পটোল কিনেছেন ৩০ টাকায়।

নগরের সাহেববাজার, নিউমার্কেট ও বিনোদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ১২০ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁপে ২০ থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা, পটোল ৩০ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৩০ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, করলা ৫০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে এসেছে কিছু মৌসুমি নতুন সবজি। প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, আর ফুলকপি কেজিপ্রতি ১০০ টাকা দরে। তবে ক্রেতার স্বস্তির খবর, একমাত্র আলুর দাম ৫ টাকা কমে এখন কেজিতে ২০ টাকা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল-আমিন আজ সকালে বাজারে এসে কিছুটা হতাশ। বিনোদপুর বাজারে তিনি বললেন, ‘বেগুনের দাম তো হাই ছিলই। সেটা খাওয়া বাদ অনেক দিন ধরে। ঢ্যাঁড়স আর পটোলের দামও বেড়ে গেছে। একটি ছোট লাউও ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে জানালেন কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি মাঠেই পইচা গেছে। সরবরাহ কম। এই কারণে দাম বাড়ছে। তবে গত বছরের তুলনায় এখনো কিছু কিছু আইটেম সস্তা আছে। কিন্তু বৃষ্টি চলতে থাকলে দাম আরও বাড়ব।’

শুধু সবজি নয়, ডিমের দামও বেড়েছে। প্রতি হালি সাদা ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, আর লাল ডিম ৪৪ টাকায়। তিন দিন আগেও এর দাম প্রতি হালিতে ৪ থেকে ৫ টাকা কম ছিল। ডিম ব্যবসায়ী আহমেদ হাদি বলেন, ‘এই কয় দিন আগেও ডিম ৩৪ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হইত। এখন আবার বাড়ছে। ৪০ থেকে ৪২ টাকায় থাকলে স্বাভাবিক। কিন্তু এর বেশি হইলে কষ্ট হয় মানুষের।’

এদিকে সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে অন্য প্রজাতির মুরগির দামে তেমন হেরফের হয়নি। মাছ, গরু ও খাসির মাংস ও চালের দামও প্রায় একই রয়েছে।

রাজশাহীতে এ বছর বর্ষাকালের শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। আষাঢ় মাসের প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে। শ্রাবণ মাসেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। অতিবৃষ্টির কারণে খেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার আষাঢ়ে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ়ের শেষ দিনে সবচেয়ে বেশি ৯১ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হয়। শ্রাবণেও প্রায় প্রতিদিনই অব্যাহত আছে। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার রাতেও ২০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০ ট ক ৫০ ট ক দ ন আগ

এছাড়াও পড়ুন:

তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল

সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।

আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫

গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।

এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।

আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।

এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক

তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।

ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি প্রকল্প
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’